সাহিত্য উৎসব
শীত একটু গাঢ় হতেই এ শহরে লিট্ল ম্যাগাজিন মেলা আর সাহিত্য উৎসব। এ বারও আজ থেকে ১৫ জানুয়ারি বাংলা আকাদেমি-রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণ জমকালো হয়ে উঠবে মেলা আর উৎসবের রঙে। কবি-লেখকদের আড্ডা ও তাঁদের গল্প-কবিতা পাঠ, অজস্র সাময়িকপত্র আর সারস্বত প্রতিষ্ঠানের পুস্তক সম্ভার, স্মারক বক্তৃতা, নানান ধারার বাংলা গান— মনন, চিন্তন, কল্পনায় মেতে উঠবে বাঙালি। আকাদেমি সভাঘরে আজ উদ্বোধনে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, সভামুখ্য শাঁওলী মিত্র। অর্পিত হবে আকাদেমির বিভিন্ন স্মারক পুরস্কার। বাংলার প্রচ্ছদশিল্প নিয়ে ‘বিজিতকুমার দত্ত স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন হিরণ মিত্র। আগামী দিনগুলিতেও সন্ধে ৬টায় বিভিন্ন স্মারক বক্তৃতা দেবেন দেবেশ রায়, সুমন চট্টোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, রত্না রশীদ। মেলা রোজ ২-৮টা।
উদ্যোগ
প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক জায়গায় আজও পৌঁছয়নি বই। নিরক্ষরতার জন্য বইয়ের প্রতি আগ্রহও জন্মায়নি। ওঁদের কথা ভেবেই চেনা বইকে প্রযুক্তির সাহায্যে অডিয়ো ও ব্রেল-এর মাধ্যমে প্রকাশে উদ্যোগী হল মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স। সহায়তা করছে খড়গপুর আইআইটি-র ভাষা-প্রযুক্তি পরিষদ। থাকবে ই-বুকও। প্রকাশক সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের কথায় ‘‘চারপাশে প্রচুর বইমেলা হলেও অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও বই পৌঁছয় না। বাড়ে স্কুলছুটের সংখ্যা।’’ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নতুন আকারে এই বইয়ের বিতরণ শুরু হবে মেদিনীপুর জেলায়। তার আগে ১৮ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় জীবনানন্দ সভাঘরে আয়োজন করা হয়েছে এক আলোচনা সভা ‘বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির ব্যবহার, সমস্যা ও ভবিষ্যৎ’।
অতীতের ছোঁয়া
বছর শেষ, আর বর্ষারম্ভের শহরজোড়া হাসি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যে ব্যতিক্রমী এক সুর ধ্বনিত হল ‘রেজোনেন্স অফ দ্য ক্রনিকল’ নামের দেড় ঘণ্টার এক তথ্যচিত্রে। কলকাতা ডায়োসেস (বর্তমানে চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া) পূর্ণ করেছে দুশো বছর (১৮১৪-২০১৪), সেই উপলক্ষেই সুপূর্ণ সরকারের নির্দেশনায় তারা এটি তৈরি করেছে। কলকাতার প্রাচীন সব গির্জার স্থাপনকথা আর তার সঙ্গে জড়ানো শহরের ইতিকথা সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এতে। কোন চার্চে মধুসূদন ধর্মান্তরিত হন, কোন চার্চে কিছু দিন সার্ভিস করেছিলেন আলেকজান্ডার ডাফ, ইত্যাদির পাশাপাশি ‘হোলি ট্রিনিটি চার্চ’-এ শ্রীরামকৃষ্ণের পদার্পণ, গির্জা সংলগ্ন একাধিক উল্লেখযোগ্য স্কুল ও কলেজের বিবরণপূর্ণ তথ্যচিত্রটির গৌরব বৃদ্ধি করেছে ধর্মীয় সংগীতের আন্তরিক প্রয়োগ।
সাফল্য
হুইলচেয়ার থেকে উঠতে পারেন না। কথা বলতেও সমস্যা। সেরিব্রাল পলসি এবং শরীরের ৮০ শতাংশ ‘লোকোমোটিভ ডিসফাংশন’-এর জন্য অধিকাংশ অঙ্গের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই তাঁর। কিন্তু দেবাশিস লেখেন প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। নিজের ভাবনা, বোধ, অনুভূতি উজাড় করে দেন খাতার পাতায়। লিখতে গিয়ে পেন কাঁপে, সেটা শক্ত করে ধরে থাকেন তাঁর মা স্বর্ণময়ী দাস। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চারটি কবিতার বই আমার মনের কল্পনা ও আশা, কল্পনা, আমার ভাবনায় জন্মভূমি এবং আমার কল্পনায় স্বদেশ গড়া। বইগুলি রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি স্কুলের লাইব্রেরিতে জায়গা পেয়েছে। ছাব্বিশ বছরের দেবাশিস দেশের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অসাধারণ সৃজনশীল মানুষ হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেলেন ৩ ডিসেম্বর, নয়াদিল্লিতে। বিজ্ঞানভবনে এই পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন অরুণ জেটলি।
মনোবিদ
মনোরোগী মানেই পাগল আর তাঁকে সুস্থ করতে বৈদ্যুতিক শক ছাড়া উপায় নেই, এই ধারণা অনেকের মধ্যে এখনও চালু। আর সেটা অনেক বেশি প্রবল ছিল সত্তরের দশকের কলকাতায়। এমন ভ্রান্তির অন্ধকার দূর করতেই ১৯৮০ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘সেন্টার ফর সাইকোলজিক্যাল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ’, যার অধীনে সদানন্দ রোডে তৈরি হয় মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র ‘মনোবীক্ষণ’। এ ব্যাধি সারাতে যে রোগীর কথা মন দিয়ে শোনা ও তাঁর সঙ্গে কথা বলা জরুরি, সেটা সব সময়ে মনে করতেন দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার পর ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ শিক্ষকতা করেছেন। মনোবিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজে অবদানের জন্য বিশেষ স্বীকৃতি পান পশ্চিম ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনের জন্যও গড়ে তোলেন ‘নবারুণ’ হাসপাতাল। মনোবিদ দেবব্রতবাবু ৮৭ বছরে প্রয়াত হলেন গত ১১ ডিসেম্বর। ১৭ জানুয়ারি ৫টায়, বিড়লা অ্যাকাডেমি অব আর্ট অ্যান্ড কালচার-এ তাঁর স্মরণসভা।
ফেলুদাকে নিয়ে
হাফ সেঞ্চুরির পর ফেলুদা এখন কলকাতার সীমা ছাড়িয়ে। ব্যাঁটরা পাবলিক লাইব্রেরির মতো প্রাচীন (১৮৮৪-তে প্রতিষ্ঠিত) গ্রন্থাগারও মেতে উঠেছে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সৃষ্টির (১৯৬৫-র ডিসেম্বর) পঞ্চাশ বছর উদ্যাপনে। আজ সন্ধে ৬টায় পাঠাগার-ভবনে ‘ফেলুদা ৫০ এবং সত্যজিৎ’ শীর্ষক আড্ডা জমাবেন (ফেলুদা) সব্যসাচী চক্রবর্তী, (তোপসে) সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, এবং ফেলুদা-ছবির পরিচালক সন্দীপ রায়। সঙ্গে ভীষ্ম গুহঠাকুরতা। অনুষ্ঠান পরিচালনায় দেবাশিস রায়চৌধুরী। অন্য দিকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ বালি-র অ্যাপেক্স ক্লাব প্রকাশ করল ফেলুদাকে নিয়ে ক্যালেন্ডার। প্রতিটি পাতায় সন্দেশ-এ প্রকাশিত ফেলুদা-কাহিনির সত্যজিৎ-অঙ্কিত ছবি। এ দিকে আজ সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জন্মদিন। নন্দনে আজ আর কাল তাঁর কাহিনি নিয়ে তৈরি ছবির রেট্রো-র আয়োজন করেছে উইন্ডোজ, নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। আছে তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও।
দ্বিতীয় একক
হীরু ডাকাত, শাদা ঘোড়া, আমাজনের জঙ্গল— এই সব বইয়ের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে ছোটদের পরিচয়। ভ্রমণপিপাসুরা তাঁকে চেনেন আন্টার্কটিকা কি আলাস্কার ভ্রমণ কাহিনির মাধ্যমে। তিনি অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। কবি, গল্পকার, ভ্রমণ-লেখক, সম্পাদক অমরেন্দ্রবাবু গত তিন বছর ধরে ছবি আঁকছেন। ২০১৪-য় হয়েছে তাঁর প্রথম একক। সমকালীন হিংস্রতার আবহ নিয়ে এ বার তাঁর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী ‘ভায়োলেন্স’ শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি সাড়ে পাঁচটায় আইসিসিআর-এর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারিতে। উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, নবনীতা দেবসেন এবং দেবেশ রায়। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। সঙ্গে তারই একটি ছবি।