সা ক্ষাৎকারে তাঁর সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলছেন, “ভীষ্ম আমার ছেলের ছবিতে কাজ করেছে, ভীষ্ম আমাদের খুব কাছের লোক।” ১৯৮৯ সালে তোলা গণশত্রু ছবিতে তরুণ বিবেকবান নাট্যকর্মী ‘রণেন’ চরিত্রে ভীষ্ম গুহঠাকুরতাকে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ, সেই প্রসঙ্গেই এ কথা। আর ‘ছেলের ছবিতে কাজ’ মানে ১৯৮৩-সালে ফটিকচাঁদ থেকে শুরু করে পরে আরও অনেকগুলোয়। ১৯৭৬-এ তপন সিংহের হারমোনিয়াম, তার পর আশির দশক জুড়ে বাঞ্ছারামের বাগান, বৈদূর্য্য রহস্য, আদালত ও একটি মেয়ে, আতঙ্ক-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা। ১৯৯২-এ মুক্তি পাওয়া সত্যজিতের শাখাপ্রশাখা-য় আবার তিনি, তপনবাবুর অন্তর্ধান ছবিতে, সন্দীপ রায়ের গুপী বাঘা ফিরে এলো-তেও। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন তপনবাবু, সাক্ষী স্বয়ং সন্দীপ। শাখাপ্রশাখা-র শুটিংয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ ভীষ্মের অভিনয় দেখে অনিল চৌধুরীকে বলেছিলেন, “আমার সুস্থ অবস্থায় পেলে ওকে দিয়ে অনেক কিছু করাতে পারতাম, এত ন্যাচারাল অ্যাক্টর খুব কম পাওয়া যায়...” সে কথা অভিনেতার কানেও পৌঁছেছিল, কিন্তু তিনি শুনেও নির্বিকার।
আসলে ‘ভীষ্মদা’ এমনই, মত সন্দীপ রায়ের: ‘বড্ড বেশি পিওর, বড্ড বেশি ভালমানুষ... ওঁকে কারও সম্পর্কে খারাপ বলতে শুনিনি।’ এ দিকে কথা বলতে পারেন অসম্ভব ভাল, গল্প বললে মোহিত হয়ে শুনতে হয়, অদ্ভুত রসবোধ। সত্যজিৎ স্নেহ করতেন তাঁকে, ভীষ্মেরও অমিত শ্রদ্ধা ওঁর প্রতি, ও দেশে টিভিতে ‘আলফ্রেড হিচকক প্রেজ়েন্টস’ সিরিজ় সম্ভব হলে এখানে কেন ‘সত্যজিৎ রায় প্রেজ়েন্টস’ হবে না, বলেছিলেন সন্দীপকে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, উপযুক্ত যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিলেন। দু’টো সিরিজ় হয়েওছিল, ১৯৮৫-র হালকি বারিষ টেলি-ছবিতে সুপ্রিয়া পাঠকের বিপরীতে অভিনয়ও করেছিলেন, ওই বছরেই অভিনেত্রী-তে স্মিতা পাটিলের সঙ্গেও।
বিখ্যাত গুহঠাকুরতা পরিবারের ছেলে, অসাধারণ গায়ক, পিয়ানো-বাজিয়ে, অভিনেতা— এই পরিচয়গুলির পরেও সম্প্রতি জানা গেল, ছবি আঁকছেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, এবং সেও প্রায় বছর দশেক ধরে। পথের পাঁচালী আশ্রিত একটি ছবি এঁকেছিলেন, ‘খুব প্রফেশনাল কাজ আর ছবির মধ্য দিয়ে রেসপেক্টটা ফুটে বেরোচ্ছে,’ সেই ছবি প্রসঙ্গে বলছেন সন্দীপ রায়। ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর, পুরোটাই স্বশিক্ষিত, এবং সন্দীপের মতে ভীষ্মের ছবি আঁকার এই বোধের উৎস ওঁর ‘ইনার আই’। শান্তিনিকেতনের বাড়ির মনোরম বাগানে বসে তিনি বলেন, মানুষের সবচেয়ে বড় অবলম্বন হল প্রকৃতি। শিল্পীর কল্পনা ও বোধ থেকেই এঁকেছেন বেশ কিছু নিসর্গচিত্র। তারই আঠারোটি ছবি নিয়ে ‘এসেন্স অব সিরিনিটি: দ্য সাইলেন্ট মেলোডি অব নেচার’ আন্তর্জালিক প্রদর্শনী করছে কলকাতার ডিজিটাল শিল্প-পরিসর ‘আর্টওয়েভ ইন্ডিয়া’। দেখা যাবে তাদের ওয়েবসাইটে, ডিসেম্বর জুড়ে। ভীষ্ম গুহঠাকুরতাকে নিয়ে সন্দীপ রায়ের একটি সাক্ষাৎকার এই প্রদর্শনীর মুখবন্ধ। ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, ডান দিকে তাঁর আঁকা ছবি।