যখন দেশে থাকতেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত (১৯৩৩-২০২০) (ছবিতে), তাঁর যাদবপুর-সংলগ্ন ডেরায় হানা দিতেন পড়ুয়া-শিক্ষক-লেখক-পাঠক। কথার চকমকিতে মুগ্ধ হতেন তাঁরা। বিশ্বচারী অলোকরঞ্জন কথা ঝলসে ওঠা তরবারি— মেধা, রসিকতায় ভরা বাক্-বিদ্যুৎ মনে করাত সত্যজিতের আগন্তুক ছবির সেই সিদ্ধান্ত: বিদেশে থাকলেই বাংলা ভোলেন না কেউ, না চাইলে। তাঁর চেতনা রঞ্জিত হয়েছিল শান্তিনিকেতনে। বুদ্ধদেব বসুর ডাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যোগ দিলেন। সাহিত্যের নানা ধারায় তাঁর অবগাহন, কবি-অনুবাদক-ভাষাশিল্পীর শিকড় ছিল ‘মাতৃমৃত্তিকার গভীরে’। জার্মানির হাইডেলবার্গ পরবর্তী কর্মক্ষেত্র, শিকড় কিন্তু ছিন্ন হয়নি। তাঁর প্রয়াণ আর এক বিশ্বচারী বাঙালির চলে যাওয়া। হালের কূপবর্তী বাঙালি বরং ভাবুন, কী ভাবে বাঙালি থেকেও বিশ্ব মাঝে ছড়িয়ে পড়া যায়।
সুরের সলিল
‘‘তাঁর গানের এক্সপায়ারি ডেট নেই,’’ মুগ্ধতা কল্যাণ সেন বরাটের। ১৯ নভেম্বর ছিল সলিল চৌধুরীর জন্মদিন, আগের সন্ধ্যায় ‘ছাত্রদল’ সংস্থার উদ্যোগে আন্তর্জালিক অনুষ্ঠান ‘ও আলোর পথযাত্রী’-তে ছিলেন অনেকেই। সঞ্চালক সুগত মারজিৎ মনে করালেন, কী মুনশিয়ানায় দুরূহ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতেও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ঝটকা যোগ করতেন সলিল। শিল্পীর গানে সমাজভাবনা ও জীবনজিজ্ঞাসার বিশ্লেষণে ছিলেন প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তরা চৌধুরী ও সৈকত মিত্র শোনালেন গান, গল্পও। ও দিকে ইউটিউবে প্রকাশ পেল ‘সলিল চৌধুরী ফাউন্ডেশন অব মিউজ়িক’-এর ‘প্রান্তরের গান আমার’, শিল্পীর পুত্র-কন্যার কথা ও গানের ভিডিয়ো-অর্ঘ্য।
গানের মায়া
দেবব্রত বিশ্বাস বলেছিলেন, “আমি নই, শুদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে জানে মায়া।” রবীন্দ্রনাথের গানের শিল্পী ও প্রশিক্ষক মায়া সেন (১৯২৮-২০১২) সম্পর্কে এ যে অত্যুক্তি নয়, তার প্রমাণ আছে তাঁর স্বল্প সংখ্যক রেকর্ডে। শিক্ষক মায়া সেনের প্রভাব রয়ে গেছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরের অগণ্য ছাত্রছাত্রীর মধ্যে। রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যধন্য মায়া একদা নাড়া বেঁধে ধ্রুপদও শিখেছেন, জানতেন এস্রাজ ও সেতার। রবীন্দ্রসঙ্গীতে এইচএমভি-র সর্বমান্য ‘ট্রেনার’ ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে রেকর্ড করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ঋতু গুহ, অর্ঘ্য সেনের মতো শিল্পীরা। ২০ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাল কলকাতার সঙ্গীত সংস্থা ‘মুক্তছন্দ’। ছিলেন স্বপ্না ঘোষাল, সুমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, গৌতম মিত্র, দেবারতি সোম, বিপ্লব মণ্ডল, সঞ্চালনায় স্বপন সোম।
ক্ষমতার আখ্যান
রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের উত্থান নিয়ে ‘পঞ্চম বৈদিক’ নাট্যদলের নতুন নাটক ভিট্টন। নিজেদের স্বার্থে দুর্বৃত্ত বা অপরাধীদের ব্যবহার করতে করতে রাজনীতিকরা খেয়াল রাখেন না, কখন তারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে যাচ্ছে, পৌঁছতে চাইছে শীর্ষে। শেষে রাজনীতিকদেরই পর্যুদস্ত করে তারা ক্ষমতা দখল করে, উপভোগও করে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই কখনও হয়ে ওঠে মন্ত্রী বা রাষ্ট্রনায়কও। এর পিছনে থাকে অর্থ আর পেশির আস্ফালন। এ নতুন কিছু নয়, যেন ঘটমান বর্তমান। “শুধু এ দেশের নয়, সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতেই এ নাটক মঞ্চস্থ করা জরুরি মনে হয়েছে আমাদের,” জানালেন নির্দেশক অর্পিতা ঘোষ। ব্রেশট থেকে তাঁরই রূপান্তরিত এ নাটক রবিবার ২৯ নভেম্বর দুপুর ২টো ও বিকেল সাড়ে ৫টায়, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। মুখ্য চরিত্রে অর্ণ মুখোপাধ্যায়, বাবু দত্তরায়, কোরক সামন্ত।
সংবেদী সংলাপ
বিকল্প যৌনতা বিষয়ক ছবি দেখা, দেখানো এবং আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ পরিসর, এই নিয়েই ‘ডায়ালগস— দ্য ক্যালকাটা এলজিবিটিকিউআইএ প্লাস ফিল্ম অ্যান্ড ভিডিয়ো ফেস্টিভ্যাল’। আয়োজক কলকাতার ম্যাক্সমুলার ভবন গ্যোয়টে ইন্সটিটিউট, সঙ্গে ‘স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি’ এবং ‘প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট’। ২০০৭ সালে শুরু, তেরো বছর অতিক্রান্ত। এখানে দেখানো হয় দেশ-বিদেশের কাহিনিচিত্র, ছোট ছবি, ভিডিয়ো ও তথ্যচিত্র, যার বিষয় বিকল্প যৌনতা, সমকামী-উভকামী-ট্রান্সজেন্ডার মানুষের জীবন ও লড়াই। যৌনতার সামাজিকতা বা রাজনীতি নিয়ে চর্চা এ উৎসবের গভীরতর লক্ষ্য। এ বছর উৎসব ২৬-২৯ নভেম্বর, পুরোটাই আন্তর্জালিক। শুরু ও উদ্বোধনী ছবি ২৬ তারিখ সন্ধে ৬টায়, বিশদ তথ্য ও সূচি শীঘ্র জানা যাবে গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট, কলকাতার ওয়েবসাইটে।
ভাবতে শেখায়
অতিমারিজনিত অস্থিরতা ব্যক্তি মানুষ থেকে সমাজ— সব কিছুকেই ভেঙেচুরে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। এই ভাবনাসূত্র নিয়েই সংবর্তক পত্রিকার (সম্পা: সৌরভ রঞ্জন ঘোষ) সংখ্যা ‘অতিমারি ও লকডাউনের বি-বর্ণমালা’। ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশিত এ পত্রিকায় আছে প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, ব্যক্তিগত গদ্যও। ‘অতিমারি লকডাউন ও সাম্প্রতিক সময় প্রসঙ্গে’ বিভাগের প্রবন্ধগুলিতে ভ্যাকসিনের বিজ্ঞানের সঙ্গে বাজারের বিজ্ঞানের সম্পর্ক, রাষ্ট্রের দায়িত্ব, পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতি, সমসময় ও অর্থনীতির পাশাপাশি আমপান নিয়ে অভিজ্ঞতা, ‘লকডাউনের ডায়েরি’ও। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ও বৈষ্ণব-পদাবলীতে বাঙালির বস্ত্র-সংস্কৃতি’, অক্ষয়কুমার দত্তের রাষ্ট্রচিন্তা থেকে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের সৃষ্টিকে বোঝার প্রয়াস, আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমার নির্মাণ ভাবনার রসদ জোগাবে।
ভাস্কর্যের নানা
মানুষ ও পশুপাখির ভাস্কর্যের অনুমোদন তাঁদের ধর্মে না থাকলেও মুঘল শাসকরা তা পুরোপুরি মানেননি, তার প্রমাণ সে আমলের নানা ভাস্কর্য। যেমন, দুই রাজপুত বীর জয়মল এবং পাত্তার ত্রিমাত্রিক মূর্তি দু’টি। ১৫৬৮ সালে আকবরের চিতোর দখলের সময় এঁদের বীরত্বে মুগ্ধ সম্রাট আগরা দুর্গের হাথিয়াপুর দরজায় তাঁদের মূর্তি বসানোর নির্দেশ দেন। মেবার মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর রানা অমর সিংহ ও তাঁর পুত্র করণ সিংহের শ্বেতপাথরের মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন জাহাঙ্গির। পশুপাখি প্রিয় ছিল মুঘল সম্রাটদের, হাতি-ঘোড়ার ভাস্কর্যগুলি সেই ভালবাসার চিহ্নই বহন করে। মুঘল রাজদরবারের অল্প-চেনা ভাস্কর্য নিয়ে গত ৮ নভেম্বর এক আন্তর্জালিক আলোচনায় বললেন শিল্প-ইতিহাসবিদ অশোককুমার দাস। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় (সিএসএমভিএস) আয়োজিত বক্তৃতাটি শোনা যাবে সিএসএমভিএস ইউটিউব চ্যানেলে।
ব্যতিক্রমী সাজ