Advertisement
E-Paper

দাবি আদায়ে ঢাকার পথেই কি হাঁটবে শহর

পশ্চিমবঙ্গে এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই আন্দোলন বোঝাচ্ছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, যে কোনও দিন খেপে উঠতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। শুধু যে রাস্তার নাম আর রেলিঙের রং বদলে বেশি দিন শান্ত রাখা যায় না নাগরিকদের— তা শেখাল এই আন্দোলন।’’

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০১:২৩
সহমর্মী: বাংলাদেশের আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল। সোমবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সহমর্মী: বাংলাদেশের আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল। সোমবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

রাস্তা বন্ধ, রাষ্ট্র মেরামত হচ্ছে!

পোস্টার পড়েছে ঢাকার পথে পথে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গত এক সপ্তাহ ধরে চলা স্কুলপড়ুয়া কিশোর-সমাজের সেই আন্দোলনে কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। মন ছুঁয়েছে শহর কলকাতারও। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের কিশোর আন্দোলনকারীদের সমর্থনে এ শহরে হয়েছে দু’-দু’টি পদযাত্রা। তার মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের হলেও, অন্যটির আয়োজন করেছিলেন সাধারণ নাগরিকেরাই। প্রথম মিছিলটি দুপুর দেড়টা নাগাদ মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে শুরু করে ডিএসও। অন্যটি দু’টো নাগাদ শুরু হয় পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে। এ শহরের বাংলাদেশ হাইকমিশন পর্যন্ত যাওয়া ওই দুই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য— এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনই প্রয়োজন সমাজ সংস্কারের জন্য।

প্রশ্ন উঠছে, এ শহরের ছাত্র সমাজও কি বুঝছে যে, এ ভাবেই কড়া হতে হবে নাগরিক প্রয়োজনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে? শুধু নিজের নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যাই নয়, রোজের সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে কি আরও এগিয়ে আসবে এখানকার যুব সমাজও? পশ্চিমবঙ্গে এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই আন্দোলন বোঝাচ্ছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, যে কোনও দিন খেপে উঠতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। শুধু যে রাস্তার নাম আর রেলিঙের রং বদলে বেশি দিন শান্ত রাখা যায় না নাগরিকদের— তা শেখাল এই আন্দোলন।’’ তাঁর বক্তব্য, আগেও যেমন সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের যুব সমাজ, এ বার হয়তো আরও বেশি সাহস পাবে তারা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা অভিষেক মুখোপাধ্যায় আবার মনে করান, বাংলার ছাত্রেরা সব সময়েই জনসাধারণের জন্য লড়তে অভ্যস্ত। সেই ঐতিহ্যকে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে বাংলাদেশের কিশোরেরা। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি আরও এক ধাপ এগোল, আমরা সমৃদ্ধ হলাম।’’

যে কোনও নাগরিকের ব্যক্তিগত বিপর্যয়েও যে রাষ্ট্রের মানবিকতা এবং সহানুভূতি প্রাপ্য, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল এ আন্দোলন— বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনন্যা মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি শুধু পড়ুয়ারা নয়, সকলকেই লড়াই করার শক্তি জোগাবে এই আন্দোলন।’’

তবে কি প্রয়োজনে এ শহরের ছাত্র সমাজও পিছপা হবে না রাষ্ট্র মেরামতির হুঙ্কার তুলতে? তেমনই কি বিশ্বাস এ কলকাতার? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শুভজিৎ সরকার বলছিলেন, ‘‘ও দেশের কিশোরেরা তো দেখিয়ে দিল সকলে এগিয়ে এলে কত অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়! আমরা পারব না কেন তবে?’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল আবার ছাত্রদের দাবি তোলার পক্ষে থাকলেও, বাংলাদেশের পথে হাঁটার সমর্থক নন। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের দাবি জানানোর পদ্ধতিটা এমন না হওয়াই ভাল।’’

রাজ্যে এবিভিপি-র নেতা অরবিন্দ দত্ত অবশ্য বিষয়টি অন্য দিক থেকে দেখার ডাক দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছাত্রেরা রাজনীতি করলেও তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টা যেন একমাত্র না হয়ে ওঠে। ছাত্রদের যে তার চেয়ে অনেক বড় ভূমিকা আছে সমাজে, বাংলাদেশের আন্দোলন এ শহরকেও তা মনে করিয়ে দিয়েছে।’’ ছাত্র সমাজ যে সব রাজনীতিকে ভেঙে আবার গড়তে পারে, বাংলাদেশকে দেখে তা-ই বুঝি বিশ্বাস করার সাহস পাচ্ছে ‘মিছিলনগরী’ কলকাতা!

কলকাতার রাজনীতি, কলকাতার আড্ডা, কলকাতার ময়দান, কলকাতার ফুটপাথ - কলকাতার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।

Protest Bangladesh Road Safety Student Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy