Advertisement
E-Paper

নিজের পাড়া চেতলায় জল জমতে দেখে মহাবিস্মিত ফিরহাদ হাকিম, সহনাগরিকদের মহানাগরিকের পরামর্শ, আজ বাইরে বেরোবেন না!

শহরের জলমগ্ন পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েও মেয়র বোঝাতে চান, তিনি অপারগ। কারণ, গঙ্গায় জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছে। নিকাশি খালগুলিতেও জল কানায় কানায় পূর্ণ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৩
মঙ্গলবার সকালে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

মঙ্গলবার সকালে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। — নিজস্ব চিত্র।

সোমবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা শহর। জল জমে গিয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নিজের পাড়া চেতলাতেও। তা দেখে বিস্মিত মেয়র স্বয়ং। মঙ্গলবার সকালে পুরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে শহরের জলযন্ত্রণার পরিস্থিতির উপর নজর রাখার সময় ফিরহাদ নিজেই জানালেন, ছোটবেলা থেকে কলকাতায় এমন বৃষ্টি তিনি দেখেননি। জলমগ্ন কলকাতায় ইতিমধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরবাসীকে বাড়ি থেকে না-বেরোনোর পরামর্শ দেন মেয়র।

ফিরহাদ বলেন, “আমি কলকাতায় জন্মেছি। এত বড় হয়েছি। এমন বৃষ্টি দেখিনি। আজ সেটা দেখলাম কলকাতায়।” সোমবার রাত থেকে কলকাতায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মেয়রের কথায়, “এটি একটি ভয়াবহ বৃষ্টি, যা এর আগে আমরা কখনও দেখিনি।” শহরের জলমগ্ন পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েও মেয়র বোঝাতে চান, তিনি অপারগ। কারণ, গঙ্গায় জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছে। নিকাশি খালগুলিতেও জল কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে নিকাশি খালে জল ফেলা হলেও তা আবার শহরের মধ্যেই ফিরে আসছে।

ফিরহাদ বলেন, “আমরা পুরসভা থেকে সব জল ক্যানালে ফেলছি। কিন্তু সেই জল আবার ব্যাক ফ্লো হয়ে চলে আসছে। আমরা লক গেটগুলি খুলে দিয়েছিলাম। সেখান থেকেও ব্যাক ফ্লো হয়ে চলে আসছে।” মেয়র আরও জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ গঙ্গায় জোয়ার আসার কথা রয়েছে। ওই জোয়ারের জল চলে গেলে সম্ভবত সন্ধ্যার দিকে শহরের জল নদীতে ফেলা যাবে। পাশাপাশি কলকাতার পাম্পিং স্টেশনগুলির জল নিকাশি ক্ষমতাও সীমিত। ফিরহাদ জানান, কলকাতার পাম্পিং স্টেশনগুলিতে জলের পাইপ দিয়ে ঘণ্টায় ২০ মিলিমিটার করে জল যেতে পারে। সেখানে ৩০০ মিলিমিটার জল বেরোতে স্বাভাবিক ভাবেই সময় লাগার কথা। তার উপর এখন নদী এবং নিকাশি খালগুলিও জলে পরিপূর্ণ। ফলে নদী এবং নিকাশি নালার জল না-কমা পর্যন্ত শহরের জমা জল ধীরে ধীরে নামবে বলে জানান মেয়র।

সোমবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতা এবং শহরতলিতে। একটানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। উত্তর থেকে দক্ষিণ— গোটা শহরেই একই পরিস্থিতি। বিভিন্ন গলিপথও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে। বহু বাড়ি ও গাড়ি জলের নীচে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব রাস্তায় আগে কখনও জল জমেনি, সেই রাস্তাও জলের তলায়। এই সব এলাকা থেকে জল বার করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই জল নামতে দেরি হচ্ছে। এ অবস্থায় কলকাতায় অন্তত তিন জনের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর মিলেছে। দেহ উদ্ধার হয়েছে আরও দু’জনের।

এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে কলকাতাবাসীর উদ্দেশে মেয়র অনুরোধ করেন, “আজকের দিনটা দয়া করে বাড়ি থেকে বেরোবেন না। অনেকে বেরিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন।” যদিও ফিরহাদের বক্তব্য, পুরসভার বাতিগুলি আগেই বন্ধ করে দেওযা হয়েছিল। অন্য কোনও কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে থাকতে পারেন নিহতেরা। মেয়র বলেন, “প্রকৃতির হাতে আমরা সবাই একেবারে অবশ। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে পারি না।” তাঁর দাবি, সাধারণ বৃষ্টিতে কলকাতায় জল জমার কথা নয়। কিন্তু সোমবার রাত থেকে যে ভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তা অস্বাভাবিক।

বস্তুত, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত গড়িয়ায় ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ফিরহাদের চেতলায় বৃষ্টি হয়েছে ২৬২ মিলিমিটার। এ ছাড়া কালীঘাট, বালিগঞ্জ, যোধপুর পার্ক এবং তপসিয়াতেও ২৫০-৩০০ মিলিমিটারের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে।

FirhadHakim waterlogged kolkata KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy