Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে হনুমানের তাণ্ডব, আঁচড়-কামড়ে আতঙ্কে দর্শনার্থীরা

বহু যুগ ধরেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পঞ্চবটী এলাকায় নিজেদের মতো করে ‘রাজত্ব’ করছে এই হনুমানকুল।

উপদ্রব: পুজোর ডালা কেড়ে নিতে আক্রমণ হনুমানের। শুক্রবার, দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

উপদ্রব: পুজোর ডালা কেড়ে নিতে আক্রমণ হনুমানের। শুক্রবার, দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১৬:২৯
Share: Save:

বেশ কিছু দিন দাপাদাপির পরে দলের পাণ্ডা ধরা পড়েছে। কিন্তু তাতেও শান্তি নেই!

থাকবেই বা কি করে। দলের বাকি সদস্যেরাই এখন নিজেদের মতো করে রাজত্ব চালানোর ভার নিয়েছে। আর তাদের ভয়ে কোনও মতে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন লোকজন। বেশি সাহস দেখালেই জুটছে কষিয়ে থাপ্পড় বা কামড়। দক্ষিণেশ্বর জুড়ে এখন এমনই ‘লঙ্কাকাণ্ড’ বাধানোর অভিযোগ হনুমান বাহিনীর দিকে।

বহু যুগ ধরেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পঞ্চবটী এলাকায় নিজেদের মতো করে ‘রাজত্ব’ করছে এই হনুমানকুল। গাছের ডাল ধরে দোল খাওয়া, গাছ থেকে গাছে লম্ফঝম্ফ, দর্শনার্থীদের পুজোর প্যাকেট ছিনিয়ে গাছে বসে সন্দেশ খাওয়ার মতো খুনসুটি করেই থাকে এই তারা। দর্শনার্থীরাও এমন দুষ্টুমি উপভোগ করেন।

কিন্তু কয়েক মাস ধরে হনুমানের দলের কারসাজি দেখা দূর, তাদের উৎপাতে নাজেহাল অবস্থা মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে ফাঁড়ির পুলিশ, দর্শনার্থী এমনকী মাঝিদেরও। এক পুলিশকর্মীর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘যা অত্যাচার চলছে তাতে কোন ধারায় মামলা দায়ের করব সেটাই ভাবছি।’’ মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, এক মাসে প্রায় ৩৫ জন দর্শনার্থী হনুমানের কামড়, আঁচড়, থাপ্পড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘বহু যুগ ধরে পঞ্চবটী এলাকায় হনুমান রয়েছে। কিন্তু এখন তাদের অত্যাচারের দাপটে দর্শনার্থীদের প্রাণান্তকর অবস্থা। বিষয়টি বন দফতরকে জানিয়েছি।’’ বন কর্তা মানিকলাল সরকার বলেন, ‘‘ওদের মতিগতি বোঝা দায়। তবে খুব উৎপাত করছে বলে শুনেছি। যারা বেশি সমস্যা করছে তাদের ধরা হচ্ছে।’’

গত বৃহস্পতিবার অভিযোগ পেয়ে শেষমেশ এক পুরুষ হনুমানকে পাকড়াও করে নিয়ে গিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বন দফতরের কর্মীরা। অভিযোগ, ওই বড় পুরুষ হনুমানটিই ছিল দলের পাণ্ডা। বাকিদের নিয়ে সেই বেশি তাণ্ডব চালাত। পঞ্চবটীর উল্টো দিকে রয়েছে বেলুড় মঠ-দক্ষিণেশ্বর ভুটভুটিতে ওঠানামার বাঁশের সাঁকো। মাঝিদের অভিযোগ, সেই সাঁকোর উপরে এসে বসে থাকছে হনুমানের দল। কখনও যাত্রীদের তাড়া করছে তো কখনও জাপটে ধরে আঁচড়ে, কামড়ে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক যাত্রীকে কামড়ানোর পরে আতঙ্কে সারা দিন নৌকা পরিষেবাই বন্ধ রাখা হয়।

গঙ্গার পাড়ে হনুমানদের জন্য ছোলা বিক্রেতা শ্যামল বরের কথায়, ‘‘ওই বীর হনুমানটিই দলের পাণ্ডা ছিল। এ বার মনে হয় ঝামেলা একটু কমবে।’’ কিন্তু দলের পাণ্ডা ‘জেলে’ গেলেও বাকিরা যে মোটেও শোধরায়নি শুক্রবার সকালে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে ফের তার প্রমাণ মিলল। সারা চত্বর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমানের দল। কাউকে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তাড়া করছে তো কারও হাত থেকে যা পাচ্ছে তা নিয়েই এক লাফে গাছের মগডালে উঠে যাচ্ছে। বাচ্চা হনুমানদের লাঠি নিয়ে তাড়া করলে কিছুক্ষণ পরেই সেখানে রীতিমতো সদলবলে হাজির হচ্ছে বড়দের দল। এ দিন তাদের হাত থেকে রেহাই মিলল না এক নব দম্পতির। পুজো দেওয়ার আগেই ছিনতাই হয়ে গেল তাঁদের পুজোর ডালা।

স্থানীয় বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, ‘‘এখানে হনুমান নতুন নয়। তবে এখন বড্ড উৎপাত বেড়েছে।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, গঙ্গার পাড়ে হনুর দলকে যাতে দর্শনার্থীরা খাবার দিতে পারেন তার জন্য বসে খাবারের স্টলও।
তবে কলা দিতে গেলে তারা বরাবরই দাঁত খিঁচিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতি দিনই দায়ের হচ্ছে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ।

তবে যাই হোক না কেন, হনুর দল কিন্তু লেজ দুলিয়ে ‘কেয়ার করি না’ মনোভাবেই রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dakshineshwar Apes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE