Advertisement
E-Paper

অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব, বেধড়ক মারে কোমায় প্রতিবাদী

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ উল্টোডাঙার মুচিবাজার এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানায়, আক্রান্তের নাম লাল্টু মজুমদার। স্থানীয় বাজারে এক বাসচালককে মারধরের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ১৬:৩৬
ভাঙচুরের পরে ভোলা দাসের বাড়ি। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে ভোলা দাসের বাড়ি। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হলেন এক প্রতিবাদী! মারের চোটে গুরুতর জখম হয়ে কোমায় চলে গিয়েছেন তিনি। অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর ওই ঘটনার পরেই পাল্টা হামলা চালিয়ে ‘বদলা’ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই আক্রান্তের পাড়া!

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ উল্টোডাঙার মুচিবাজার এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানায়, আক্রান্তের নাম লাল্টু মজুমদার। স্থানীয় বাজারে এক বাসচালককে মারধরের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ ভোলা দাস নামে এক স্থানীয় যুবক লাল্টুকে দলবল নিয়ে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। লাল্টু এখন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। অভিযুক্ত ভোলা দাস বেপাত্তা।

লাল্টুকে মারধরের ঘটনা জানাজানি হতেই শুক্রবার দুপুরে তাঁর পাড়ার জনা তিনশো বাসিন্দা ১১০ নম্বর উল্টোডাঙা মেন রোডে ভোলাদের ঝুপড়িতে গিয়ে হামলা চালান। ভোলার মাছের দোকান-সহ চারটি ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। ভোলা ও তার বাড়ির লোকজন এখন বাড়িছাড়া। এলাকায় মোতায়েন হয়েছে পুলিশ।

লাল্টু শহরের বিভিন্ন হোটেলে সাউন্ড সিস্টেম সরবরাহের কাজ করতেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ বাইপাসের এক হোটেল থেকে কাজ সেরে ফিরছিলেন লাল্টু। প্রতি দিনের মতোই মুচিবাজারে বাস থেকে নেমেছিলেন। সেখানে তিনি দেখেন, বাজারের দিক থেকে উল্টোডাঙা মেন রোডের দিকে বেরোনোর মুখে একটি বড় বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাসচালকের সঙ্গে প্রবল বচসা চলছে ভোলার। তার পরেই শুরু হয় হাতাহাতি। ওই জায়গায় একটি বিদ্যুতের তার মাটিতে পড়ে ছিল। তা সরাতে বলেছিলেন বাসের চালক। তা থেকেই মারধর শুরু করে ভোলারা। অভিযোগ, মারামারি থামাতে গেলে লাল্টুকেও মারধর করা হয়। স্থানীয় একটি বিরিয়ানির দোকান থেকে বিরিয়ানির গামলার ঢাকনা তুলে এনে লাল্টুর মাথায় মারা হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

লাল্টুর পরিজনেরা জানিয়েছেন, মানিকতলা থানার পুলিশ লাল্টুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পরে রাত দু’টো নাগাদ আর জি করে যান তাঁরা। মুরারিপুকুর এলাকায় স্ত্রী শিবানী এবং এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন লাল্টু। শুক্রবার শিবানী বলেন, ‘‘ও এমনিতে বেশি কথা বলে না। কেন যে প্রতিবাদ করতে গেল, সেটাই ভাবছি।’’ এর পরে ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বললেন, ‘‘আমার স্বামী না বাঁচলে আমি কাউকে ছাড়ব না।’’

এ দিন ভোলাদের ঝুপড়িতে গিয়ে দেখা গেল, চারটি ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মাটিতে পড়ে রয়েছে ভাঙা টিভি, ফ্রিজ। এলাকায় পুরুষেরা সে ভাবে বাইরে বেরোচ্ছেন না। দুপুরে সেখানে যান কলকাতা পুলিশের কর্তারা। ঝুপড়ির বাসিন্দা চম্পা প্রামাণিক নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘পুরুষেরা কেউ পাড়ায় নেই। খুব ভয়ে রয়েছি। কাল সকাল থেকেই আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আজ দুপুরে এসে সব ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।’’ শম্পা সেনাপতি নামে আর এক মহিলার বক্তব্য, ‘‘ভোলা মেরেছে। তার দায় আমাদের? আমাদের ঘর কেন ভাঙচুর হল? কিছু বললেই বলছে, জানে মেরে ফেলবে। পুলিশ তো পরে এল।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ভোলা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ফোনের টাওয়ারের অবস্থান দেখে তার হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ভোলার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ভোলার দৌরাত্ম্যে ওই এলাকায় টেকা যায় না। ফুটপাত দখল করেই চলে তার মাছের কারবার। অভিযোগ, প্রায় প্রতি রাতেই ওই এলাকায় মত্ত অবস্থায় গোলমাল করে ভোলা ও তার সঙ্গীরা। স্থানীয় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘বেশ কিছু অভিযোগ পাচ্ছিলাম। পুলিশই পারে ভোলাকে শায়েস্তা করতে।’’

Protest Beating
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy