Advertisement
E-Paper

‘মেয়ে পুলিশ’ মারবে! ছক কষেও দু’বার মত বদলেছিল খুনি

পুলিশ সূত্রের খবর, বিবাহবিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না শম্পা। স্ত্রীর একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছে সুপ্রতিম। আক্রোশের সেটাও ছিল একটা কারণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০২:৫৬
আদালতে তিন ধৃত। মঙ্গলবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

আদালতে তিন ধৃত। মঙ্গলবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

কৈখালির সিভিক ভলান্টিয়ার শম্পা দাসকে খুনের পরিকল্পনা করেও অন্তত দু’বার পিছিয়ে এসেছিল ভাড়াটে খুনিদের পাণ্ডা রশিদ আলি মোল্লা। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত হাফিজুল মোল্লা এবং নীরজ সাউয়ের মদতে চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে শম্পাকে খুন করে সে। মাইকেলনগরের ধাবা থেকে আটক করার পরে মঙ্গলবার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। এ দিন ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হলে তাদের আট দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ তো ছিলই। পাশাপাশি, দাম্পত্য জীবনে নিত্য অশান্তির ঘটনায় শম্পার উপরে বিতৃষ্ণা চলে এসেছিল সুপ্রতিমের। জেরায় সুপ্রতিম দাবি করেছে, তার ও তার মায়ের উপরে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাতেন শম্পা। মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে সুপ্রতিমের শারীরিক অক্ষমতা তাদের স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুপ্রতিমের অভিযোগ, এই কারণে শম্পা নিয়মিত অপমান করতেন তাকে। সেই অপমান থেকে মুক্তি পেতেই শম্পাকে সরানোর ছক কষেছিল সে। খুনের পরিকল্পনার কথা জানালে রাজি হয়ে যায় মা-ও।

কিন্তু আইনি বিচ্ছেদও তো হতে পারত? খুনই করতে হল কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, বিবাহবিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না শম্পা। স্ত্রীর একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছে সুপ্রতিম। আক্রোশের সেটাও ছিল একটা কারণ।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে সুপ্রতিমের পক্ষে নিজের হাতে স্ত্রীকে খুন করা সম্ভব ছিল না। প্রথমে রশিদ তাকে বলেছিল, ৬০ হাজার টাকায় সে একাই কাজ করে দেবে। সেই মতো মাসখানেক আগের এক রাতে চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে শম্পার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। কিন্তু পুলিশে কর্মরতা শম্পার শারীরিক সক্ষমতা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাহিনি স্বামী-শাশুড়ির মুখে আগেই শুনেছিল রশিদ। তাই প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে সে। ‘মেয়ে পুলিশ’ শম্পা সম্পর্কে তার এই আতঙ্কের কথা জেরার মুখেও কবুল করেছে রশিদ। তাই বাড়ির পরিবর্তে রাস্তায় কোথাও শম্পাকে সে মারবে বলে সুপ্রতিমকে জানিয়েছিল। এর পরে শম্পার গতিবিধি সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য রাখার কাজ শুরু করে রশিদ। কিন্তু রাস্তায় খুনের পরিকল্পনাও সে বাতিল করে ধরা পড়ার ভয়ে।

কমিশনারেট সূত্রের খবর, টাকা নিয়েও কাজ না করায় রশিদকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রতিম। তখন শম্পাকে খুনের জন্য আরও দু’জনকে ভাড়া করার কথা বলে রশিদ। তার জন্য সে আরও ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। সুপ্রতিম তাতেও রাজি হয়। এর পরে হাফিজুল ও নীরজকে সঙ্গে নেয় রশিদ। হাফিজুল রশিদেরই গ্রামের বাসিন্দা। তার সূত্রে পাইকপাড়ার নীরজের খোঁজ পায় রশিদ। পুলিশের খাতায় নীরজ দাগি আসামি।

খুনের জন্য অগ্রিম হিসেবে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল রশিদ। শম্পাকে খুনের পরে বাকি টাকা রশিদদের হাতে তুলে দেয় সুপ্রতিম। কিন্তু তাতে এক হাজার টাকা কম ছিল! টাকা কম কেন জানতে চাইলে সুপ্রতিম বলে, বাড়িতে ছোটখাটো গয়না যা রয়েছে, তা-ও দিয়ে দেওয়া হবে। তাতে লুঠের অভিযোগও জোরদার হবে। দ্বিতীয় দফার ৫৯ হাজার টাকা সমান ভাবে ভাগ করে নেয় তিন খুনি।

শুক্রবার কী ঘটতে চলেছে, তা জানতেন পরিচারিকা মায়া সর্দারও। চিড়িয়াবাগানের খুনে তিনিই এখন পুলিশের তুরুপের তাস।

Civic Police Shampa Das Murder Contract Killers Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy