Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ট্যাক্সি ধরতে প্রিপেড বুথে পৌঁছনোই দায়

দুপুর রোদে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরোতেই ওই দম্পতিকে ছেঁকে ধরলেন কয়েক জন ট্যাক্সিচালক। পারলে হাতের জিনিসপত্র নিজেরাই বয়ে নিয়ে যান।

শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরোনোর পরে যাত্রীদের এ ভাবেই ছেঁকে ধরেন ট্যাক্সিচালকেরা। নিজস্ব চিত্র

শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরোনোর পরে যাত্রীদের এ ভাবেই ছেঁকে ধরেন ট্যাক্সিচালকেরা। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

ভদ্রলোকের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। এক হাতে ট্রলি। অন্য হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগের গোছা। সেই হাতের আঙুল ধরে পাশে পাশে হাঁটছে এক কিশোর। পিছনে স্বামীকে অনুসরণ করে শিশুকন্যা কোলে এক মহিলা।

দুপুর রোদে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরোতেই ওই দম্পতিকে ছেঁকে ধরলেন কয়েক জন ট্যাক্সিচালক। পারলে হাতের জিনিসপত্র নিজেরাই বয়ে নিয়ে যান। খানিক টানা-হেঁচড়ার পরে শুরু হল প্রশ্নোত্তর পর্ব। ভদ্রলোক বারবার জানতে চাইছেন, ‘‘প্রিপেড ট্যাক্সি কোথায়?’’ উত্তর না দিয়ে ট্যাক্সিচালকেরা পাল্টা প্রশ্ন করে চলেছেন, যাবেন কোথায় বলুন না! এখান থেকেই হবে। নাছোড় ট্যাক্সিচালকদের দেখে এর পরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘এসপ্লানেড যাব।’’ এক ট্যাক্সিচালক জানালেন, ৩০০ টাকা লাগবে। হাত ছা়ড়িয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হাঁটা দিলেন ওই ব্যক্তি।

এ বার চিৎকার শুরু করলেন বাকি ট্যাক্সিচালকেরা। দম্পতিকে ঘিরে ধরলেন তাঁদের কয়েক জন। তত ক্ষণে কার্যত কাকুতি-মিনতি শুরু করেছেন দম্পতি। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘গরমে আমার সন্তানের শরীর খারাপ লাগছে। এ রকম করবেন না। প্রিপে়ড ট্যাক্সিস্ট্যান্ড দেখিয়ে দিন। অত টাকা নেই আমাদের কাছে।’’ হাত যত দূরে সম্ভব প্রসারিত করে এক ট্যাক্সিচালক বলেন, ‘‘প্রিপেড ট্যাক্সি অনেক দূর। নিজেই খুঁজে নিন!’’

নিষ্কৃতি পেয়ে হাঁটা শুরু করলেন ওই দম্পতি। কিছুটা দূর হাঁটতেই পাওয়া গেল প্রিপেড বুথ। ১১০ টাকার বিনিময়ে ট্যাক্সিতে ওঠার আগে ভদ্রলোক বলেন, ‘‘এদের পুলিশে দেওয়া উচিত। কোনও পুলিশও ধারেকাছে নেই। শিয়ালদহে প্রথম বার এলে এরা তো ঠকিয়ে মেরে ফেলবে। ওদের ট্যাক্সিতে না উঠলে এ ভাবে টানাটানি করবে!’’

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, দিনরাত এ ভাবেই শিয়ালদহ স্টেশনে এক দল ট্যাক্সিচালকের দৌরাত্ম্য চলতে থাকে। ফলে খুব প্রয়োজন না পড়লে স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ধরেন না তাঁদের অনেকেই। কয়েক জন জানালেন, হাওড়া স্টেশনে প্রিপে়ড এবং পোস্টপেড ট্যাক্সির আলাদা বুথ রয়েছে। তার বাইরের ট্যাক্সিচালকেরা বাড়তি টাকা চাইলেও এতটা বেপরোয়া নন।

সূত্রের খবর, শিয়ালদহ স্টেশনে বর্তমানে দু’ধরনের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড রয়েছে। একটি প্রিপে়ড, অন্যটি সাধারণ। প্রিপেড ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রীদের কোনও অভিযোগ না থাকলেও সাধারণ স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, শিয়ালদহ স্টেশনে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন সোনকার। তিনিই সেখানকার ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের সভাপতির দায়িত্ব সামলান। তাঁর ‘স্নেহভাজন’ ৩০০টি ট্যাক্সিকে প্রিপে়ড স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে হয় না। অভিযোগ, নিজেদের মতো করে স্ট্যান্ড বানিয়ে তাঁরাই যা ইচ্ছে ভাড়া চাইছেন। উত্তর কলকাতার এক তৃণমূল শীর্ষনেতার অভিযোগ, ‘‘ট্যাক্সি পিছু প্রতি দিন ৩০ টাকা করে নেন স্বপনেরা। মাসে যে টাকা ওঠে, সেই টাকা কে ছা়ড়তে চায়! তাই ওই ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না। অনেকেই ভাগ পান।’’ ওই নেতার দাবি, বিষয়টি তৃণমূল নেতৃত্বও জানেন। তবু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্বপনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ট্যাক্সির গোটাটা আমি দেখি না। ওঁদের (ট্যাক্সিচালকদের) পাশে থাকি মাত্র। সবটা মানাদা (অশোক চক্রবর্তী) দেখেন।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের (উত্তর কলকাতা) সভাপতি অশোকবাবু বলেন, ‘‘কারা বেশি টাকা নেয়, বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে ওই ট্যাক্সিচালকদের কাউকে কোনও টাকা দিতে হয় না।’’

শিয়ালদহ স্টেশন চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ নিয়ে আগে কেউ কখনও অভিযোগ করেননি। প্রথম শুনলাম। অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sealdah Station Taxi Taxi Drivers Prepaid Taxi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE