Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চ্যাপলিনই নেই, কিন্তু ভাড়া ‘বাকি’ ২৩ লক্ষ

কলকাতা পুরসভার নতুন অফিস তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। অথচ সেই চ্যাপলিন সিনেমা হল থেকে বকেয়া বাবদ পুরসভার প্রাপ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা!

এই হল ভেঙেই তৈরি হচ্ছে পুরসভার অফিস। ফাইল চিত্র

এই হল ভেঙেই তৈরি হচ্ছে পুরসভার অফিস। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

যে সিনেমা হল থেকে বকেয়া প্রাপ্য পুরসভার, তারই এখন কোনও অস্তিত্ব নেই! সেটি ধূলিসাৎ হয়েছে কয়েক বছর আগে। সেখানে কলকাতা পুরসভার নতুন অফিস তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। অথচ সেই চ্যাপলিন সিনেমা হল থেকে বকেয়া বাবদ পুরসভার প্রাপ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা! যা দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন পুরকর্তাদের একাংশ।

সম্প্রতি পুর প্রশাসনের নজরে আসে ওই বকেয়া ভাড়ার বিষয়টি। অথচ, কয়েক বছর আগেই সিনেমা হলটি ভেঙে সেখানে পুরসভার নতুন অফিস তৈরির কাজ চলছে। বেসমেন্ট-সহ পাঁচতলা ওই প্রস্তাবিত ভবনের ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণও হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। চলতি বছরের শেষেই নতুন অফিস ব্যবহার করা যাবে বলে আশাবাদী পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বভাবতই অবাক হয়ে যান তাঁরা।

কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, যত বিপত্তি কম্পিউটারে! সেখানে একটি ভুল এন্ট্রি-র কারণে বকেয়া ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় হিসেব গোলমাল হয়ে গিয়েছে। এমনিতে পুরসভার জমি, বিল্ডিং-সহ সম্পত্তির ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্যে হাজারো ভুল থাকে। সে জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই সম্পত্তির তালিকা সংশোধন করা হয়। সংশোধিত তালিকা বইয়ের আকারে প্রতি বছর বাজেটের সময়ে প্রকাশও করা হয়। কিন্তু ভাড়া বা বকেয়া কর সংক্রান্ত তথ্য সাধারণত আপডেট করা থাকে। কিন্তু তার পরেও এক দশক ধরে কী ভাবে ওই ভ্রান্তি থাকল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুর অন্দরে।

পুরসভার নথি বলছে, প্রায় ২৫ বছর আগে ৭,৩২০ টাকা মাসিক ভাড়ায় চ্যাপলিন সিনেমা হল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’কে (ডব্লিউবিএফডিসি) লিজ দেওয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালে লিজের মেয়াদ শেষে দেখা যায়, বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অনেকটাই। কারণ, লিজ চুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের মতানৈক্য থাকায় শুরু থেকেই ভাড়া পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুর কর্তৃপক্ষ ডব্লিউবিএফডিসি-কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, হয় তারা চুক্তির পুনর্নবীকরণ করুক অথবা বকেয়া ভাড়া মিটিয়ে দিক। কয়েক দফা চিঠি আদান-প্রদানও হয় দু’পক্ষে।

শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানায়, ডব্লিউবিএফডিসি-র পক্ষে বকেয়া ভাড়া মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, ব্যবসায় লাগাতার মন্দার কারণে সংস্থাটি প্রায় ধুঁকছে। সেই মতো ওই বছরেই চ্যাপলিন সিনেমা হস্তান্তর করা হয় পুরসভাকে। কিন্তু সেই তথ্য পুরসভার কম্পিউটারে ‘আপডেট’ হয়নি। ফলে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ওই সিনেমা হল থেকে বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৫১ টাকা! অর্থাৎ, পুরসভারই সম্পত্তি থেকে পুরসভার বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা।

যদিও পুরকর্তাদের একাংশের দাবি, গত এক দশক ধরে ডব্লিউবিএফডিসি-র নামে যে বিল বেরিয়েছে, তাতে ভুল নজরে আসতে সংশোধন করা হয়েছে। মকুব করা হয়েছে বকেয়া ভাড়াও। তবে অন্য সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ভাড়া নিয়ে এ রকম ভ্রান্তি রয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পুরকর্তাদের একাংশ। বাজার দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘চ্যাপলিন সিনেমার জমি তো পুরসভারই। কিন্তু কম্পিউটারের তথ্যে গোলমাল থাকায় ভুল বিল বেরোচ্ছিল। সেটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chaplin Cinema Hall Arrears WBFDC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE