কওসর আলি ঢালি
সামান্য মুরগির খামারের ব্যবসায়ী থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটিপতি। বসিরহাটের কাঁটারআটিতে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাগানবাড়ি তার। বাড়ি-গাড়ি রয়েছে কলকাতাতেও। এক কথায়, বৈভবের অন্ত ছিল না ওই মুরগি ব্যবসায়ীর। নিউ টাউনের পচা মাংস-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সেই কওসর আলি ঢালিকে অবশেষে গ্রেফতার করল বিধাননগর সিটি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশ পালানোর মতলবে বুধবার দুপুরে মোবাইল খুলেছিল কওসর। সেই সূত্রেই হানা দিয়ে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হাসনাবাদের ধোলতুকারি গ্রাম থেকে তাকে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার ধৃতকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
গত ২৭ এপ্রিল দমদম পুরসভার অন্তর্গত বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের কাছে একটি দোকানে পচা মাংস সরবরাহের সময়ে সরবরাহকারীকে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নাসিরুদ্দিন গাজি নামে ওই যুবক আর এন গুহ রোডের বাসিন্দা জনার্দন সিংহের দোকানে মাংস সরবরাহ করতে যাচ্ছিলেন। সেই মাংস থেকে দুর্গন্ধ ভেসে আসায় বাসিন্দারা বিমানবন্দর থানায় খবর দেন। পুলিশ পৌঁছে দু’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গোটা ঘটনায় একটি চক্র জড়িত, যার মূল মাথা কওসর।
আরও জানা যায়, নিউ টাউনে কওসরের একটি মুরগির খামার রয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে ছ’জনকে গ্রেফতার করে। তল্লাশিতে পাঁচটি ফ্রিজারে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে প্যাকেট-বন্দি মাংস। কিন্তু, আট জনকে গ্রেফতার করলেও কওসরকে জালে পুরতে প্রায় এক মাস ধরে কালঘাম ছুটে যাচ্ছিল তদন্তকারীদের।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বৃহস্পতিবার জানান, দুই ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে ঘন ঘন আশ্রয় বদলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল কওসর। মোবাইলও ছিল বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে কওসরের কল লিস্ট ঘেঁটে তাঁর নিকটাত্মীয়দের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। বসিরহাটের যে সব এলাকায় তার যাতায়াত ছিল, সেখানেও নজরদারি চালাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা।
কয়েক দিন আগে গোপন সূত্রে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বসিরহাটের জালালপুরে লুকিয়ে রয়েছে কওসর। ইছামতী নদীর ধারে সুন্দরবনের আদলে একটি জায়গা আছে। সেখানে শুটিং হয়। ওখানেই ঘাঁটি গেড়ে বাংলাদেশে পালানোর ছক কষেছিল সে। বুধবার এক আত্মীয় কওসরকে ফোনে জানান, তার দেড় বছরের মেয়ে অসুস্থ। সে যেন ধোলতুকারি গ্রামে আসে। কথা মতো সেখানে আসতেই তার অবস্থান জানতে পারে পুলিশ। রাতে গ্রামের বাড়ি ঘিরে কওসরকে ধরা হয়।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, কোথায় কোথায় মাংস সরবরাহ করা হত, আরও কারা এই চক্রে যুক্ত— কওসরকে জেরা করে জানার চেষ্টা করা হবে। পচা মাংসের চক্র কী ভাবে কাজ করত, তা জানার জন্য গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হবে। কওসরের ভাই অকসর আলি ঢালি এবং ভাইপো রাহুল কুদ্দুস ব্যাপারিরও খোঁজ করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy