Advertisement
E-Paper

মিছিল থেকে বাড়ি ফেরা হল না আমরিনের, ঝড়ই কেড়ে নিল প্রাণ

ধর্ষণের প্রতিবাদ মিছিলে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যু তরুণীরশোকের ছায়া তালতলার বেডফোর্ড লেনে অটোচালক মহম্মদ মানোয়ারের বাড়িতেও। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, ২০ ফুট বাই ১০ ফুটের ঘর মানোয়ারদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৯
প্রাণঘাতী: গাছ-সহ এই বাড়ির ছাদের অংশ অটোর উপরে ভেঙে পড়ে। মারা যান আমরিন জাভেদ ও মহম্মদ মানোয়ার আলম (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

প্রাণঘাতী: গাছ-সহ এই বাড়ির ছাদের অংশ অটোর উপরে ভেঙে পড়ে। মারা যান আমরিন জাভেদ ও মহম্মদ মানোয়ার আলম (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

জম্মুতে আট বছরের শিশুকন্যার ধর্ষণের প্রতিবাদে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সামনে থেকে মোমবাতি মিছিল ছিল মঙ্গলবার। সেখানে যোগ দিতে ভাই শাহবাজ আলমের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তপসিয়ার বাসিন্দা বছর সাতাশের আমরিন জাভেদ। তবে তিনি আর ফেরেননি। সন্ধ্যায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে মেয়ের খোঁজ নিতে বারবার ফোন করে গিয়েছেন বাবা-মা। ফোনেও পাওয়া যায়নি তাঁকে।

রাতের দিকে পুলিশ আমরিনের পরিবারকে ফোনে জানায়, অটোয় করে ফিরছিলেন তিনি। লেনিন সরণিতে সেই অটোর উপরে গাছ ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আমরিনের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। বাঁ-পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি আমরিনের ভাই শাহবাজ। মারা গিয়েছেন অটোর চালক, মহম্মদ মানোয়ার আলম (৫১)। বুধবার আমরিনের মা জিনাত বেগম বলেন, ‘‘যে দিন থেকে ধর্ষণের ঘটনা শুনেছে, রেগে আগুন হয়ে ছিল আমরিন। বলছিল, কিছুতেই ছাড়বে না। বিচার আদায় করবে।’’

দিদির মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শাহবাজ। ডান পায়ে গভীর ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে শুয়ে বছর চব্বিশের যুবক জানালেন, বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সামনে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে মোমবাতি হাতে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মিছিল হয়। এর পরে বা়ড়ি ফেরার জন্য চাঁদনি চক-পার্ক সার্কাস রুটের অটোয় উঠেছিলেন তাঁরা। মাঝপথে সেই অটো ঝড়ের মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ঝড়ে অটো থামিয়ে দেন চালক। পাশাপাশি বসেছিলাম আমরা। হঠাৎ ভারী কিছু অটোর উপরে পড়ল। তাতেই আমার পা ভেঙে
যায়। মাটিতে ঝুলছিল। আর দিদি...! পাশে বসেই আমার কাঁধে হেলে প়ড়ল।’’ জানালেন, আহত হলেও তিনি জ্ঞান হারাননি। তাঁকে কোনও মতে বার করা হলেও আমরিনকে অটো থেকে বার করতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। শাহবাজের দাবি, ‘‘গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তারও ছিঁড়ে পড়েছিল। সেই ভয়ে অনেকেই অটোর কাছে যেতে চাইছিলেন না। অনেক পরে দিদিকে বার করা হয়েছে।’’

পরিবারের একমাত্র মেয়ে আমরিন ইংরেজিতে এমফিল করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে নানা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতেন আমরিন। বাড়িতেই তাঁর কাছে ইংরেজি পড়তে আসত অনেকে। এ দিন মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আমরিনের বাবা জাভেদ আমজাদ। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও উঁচু গলায় কথা বলত না ও। আমার মেয়ে আর পাঁচ জনের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীনতাও পেয়েছে। তবে কোনও দিনও সেই স্বাধীনতা পেয়ে খারাপ কাজ করেনি। ও আমার ভাল বাচ্চা।’’ কান্নায় জড়িয়ে আসে সদ্য মেয়ে হারা বাবার গলা।

শোকের ছায়া তালতলার বেডফোর্ড লেনে অটোচালক মহম্মদ মানোয়ারের বাড়িতেও। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, ২০ ফুট বাই ১০ ফুটের ঘর মানোয়ারদের। দুই মেয়ে এবং স্ত্রী শেহনাজ বেগমকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন মানোয়ার। শেহনাজ জানান, এক ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। দুই মেয়ে অবিবাহিত। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানোয়ারই। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি অটো চালাচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝড় উঠেছে দেখে শেহনাজও বারবার ফোন করে গিয়েছেন স্বামীকে। তবে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে পুলিশ তাঁদের দুর্ঘটনার কথা জানায়। শেহনাজ বলেন, ‘‘বলেছিল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। ফিরলই না আর!’’

Woman dead Weather Thunderstorm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy