অঘটন: ঝড়ে গাছের একাংশ বাড়ির উপরে পড়ার পরে এ বার ভেঙে পড়ল পুরো গাছটিই। বৃহস্পতিবার, চেতলায়। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবারের ঝড়ে টালির চালের উপরে গাছের একাংশ ভেঙে পড়েছিল। আতঙ্কে পরের দিনই ওই গাছ কাটার জন্য বাসিন্দারা খবর দিয়েছিলেন পুরসভায়। কিন্তু অভিযোগ, এক পুরকর্মী এসে শুধুমাত্র কয়েকটি ডাল কেটে চলে যান। ফলে বিপত্তি ঠেকানো যায়নি। বিশাল উচ্চতার অশ্বত্থ গাছটি দু’টি বা়ড়ির উপরে ভেঙে পড়ে। একটি বাড়ি কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও অনেকগুলি টালি ও টিনের চালের বাড়ি। প্রায় ২০টি ঘরের বাসিন্দা ফের কবে ঘরে ফিরতে পারবেন, জানেন না। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ চেতলার ২৪ নম্বর রাজা সন্তোষ রোডের বনবিবিতলার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘরে কেউ না থাকায় দু’টি ঘর ভেঙে গেলেও কেউ আহত হননি। তবে, এলাকাবাসীর ক্ষোভ, রাতে যদি গাছটি ভেঙে পড়ত তা হলে কি বিপদ এড়ানো যেত? বাসিন্দাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার ঝড়ের সময়েই গাছটির একাংশ ভেঙে পড়ে একটি বাড়ির ছাদের আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। এর পরেই স্থানীয় কাউন্সিলরকে খবর দেওয়া হয়। তিনি পুরসভায় সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ এক পুরকর্মী এসে গাছের কয়েকটি ডাল কেটে চলে যান। তাঁকে গাছ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, ওই কর্মী তাঁদের জানান, বিশালাকার গাছ কেটে সরানোর মতো কর্মী পুরসভায় নেই। তাঁর একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। এমনকী পুরসভার এক আধিকারিকের সঙ্গে বচসা বাধে ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবলীনা বিশ্বাসের। স্থানীয় সূত্রে খবর, তিনি প্রকাশ্যে ওই আধিকারিককে বলেন, ঠিক সময়ে পুরসভা তৎপরতা না দেখানোয় স্থানীয়দের ভুগতে হচ্ছে। দেবলীনার কথায়, ‘‘বুধবার মাত্র ৫ শতাংশ কাজ হয়। অন্তত ২০ শতাংশ কাজ হলে এমন বিপদ এড়ানো যেত। গাছ যখন সরাতেই হত, তা হলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করা হল?’’
পুর-আধিকারিকদের একাংশের অবশ্য দাবি, গাছের আকার বিশাল। তাই এক সঙ্গে একাধিক কর্মী গাছ সরানোর কাজ করলেও একই সময় লাগত। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘শহর জুড়ে প্রায় ২৬টি দল গাছ সরানোর কাজ করছে। ফলে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। তা ছাড়া অনেক ছোট জায়গায় ল্যাডার বা গাছ কাটার যন্ত্র ঢোকাতে সমস্যা হচ্ছে। তাই হাতে গাছ কেটে সরাতে হচ্ছে। সব মিলিয়েই বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে।’’
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটির বাসিন্দা পূর্ণিমা গোমস বলেন, ‘‘গাছ পড়ে ঘর ভেঙে গেল। আমার মায়ের অনেক বয়স হয়েছে। তাঁকে এখন কোথায় রাখব বুঝতে পারছি না। পুরসভা আগে কাজ শুরু করলে এত বড় ক্ষতি হত না।’’ অন্য এক বাসিন্দা মঞ্জু মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমার ঘর ভাঙেনি। কিন্তু পুরকর্মীরা জানালেন, আপাতত বাড়িতে থাকতে পারব না। কোথায় থাকব সে ব্যাপারেও কিছু বলছেন না।’’ অনিশ্চয়তার মধ্যেই আপাতত দিন কাটছে প্রায় জনা তিরিশ বাসিন্দার। তবে দেবাশিস কুমার এ দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy