Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পথের দাবি সামলে মুখরক্ষা পুলিশের

কাজের দিনে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র খাস ধর্মতলা ‘দখল’ করে জনসমাবেশের ধাক্কায় সমস্যা যে হবে, তা তো অনিবার্যই ছিল। কিন্তু এ যাত্রায় কিছুটা হলেও শহর সচল রাখতে পেরেছে পুলিশ। অফিস যাওয়ার পথে ভুগেছেন নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু অনেকেরই অভিজ্ঞতা, সব কিছু একেবারে থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণ: সমাবেশের ভিড় সামলাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিয়ন্ত্রণ: সমাবেশের ভিড় সামলাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

কাজটা যে শক্ত, জানাই ছিল। তাই, অন্তত দিন চারেক আগেই পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি শুরু করেছিল পুলিশ। বচ্ছরকার কঠিন পরীক্ষার দিন। তাই কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হল লালবাজারের।

কাজের দিনে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র খাস ধর্মতলা ‘দখল’ করে জনসমাবেশের ধাক্কায় সমস্যা যে হবে, তা তো অনিবার্যই ছিল। কিন্তু এ যাত্রায় কিছুটা হলেও শহর সচল রাখতে পেরেছে পুলিশ। অফিস যাওয়ার পথে ভুগেছেন নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু অনেকেরই অভিজ্ঞতা, সব কিছু একেবারে থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে।

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এর কৃতিত্ব পুরোটা নিজেরা নিচ্ছেন না। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকারের কথায়, ‘‘মিছিলে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা খুব সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করতে পরপর বৈঠক কাজে এসেছে।’’ বাস্তবিক, গত বারও সভার পথে বিভিন্ন মিছিল সুশৃঙ্খল রাখতে সাহায্য করেছিলেন শাসক দলের মেজ-সেজ নেতারা। এটা মাথায় রেখেই এ বছর সভামুখী জনতাকে সামলানোর ছকটা অন্য ভাবে সাজানো হয়েছিল। গত ১৭ জুলাই থেকে পুলিশ ও শাসক দলের স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রের খবর, ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ৩০টি দলে ভাগ করা হয়েছিল। এক-একটি দলে ছিলেন ২০ জন তৃণমূলকর্মী। এ বার প্রতিটি দলের সঙ্গে এক জন করে পুলিশ অফিসারকে রাখা হয়েছিল। তাই শুধু মিছিল চলার সময়ে স্বেচ্ছাসেবী দাদাদের ধমক-ধামক নয়, হেস্টিংস, হাজরা কিংবা শ্যামবাজার— সভাস্থল থেকে বেশ খানিকটা দূরে কোনও মিছিল বা বাস পৌঁছনো মাত্র তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। কোথায় পার্কিং করতে হবে কিংবা ঠিক কোন পথে মিছিলটা যাবে বা কোথায় ঘোরাঘুরি করা যাবে না— মাইকে ঘনঘন ঘোষণা চলছিল। শহরের এক ট্র্যাফিক-কর্তার কথায়, ‘‘বারবার বৈঠকে স্বেচ্ছাসেবী ও পুলিশদের মুখ চেনা হয়ে গিয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী বুথগুলিতে সার্জেন্ট স্তরের অফিসার থাকায় রাশ আলগা হয়নি।’’

তবে, এতেই সব মুশকিল আসান হয়ে গিয়েছে বলা যাচ্ছে না। এমনিতেই নিত্যযাত্রীদের জন্য বাস কম ছিল শহরে। সেই সঙ্গে বাড়তি লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি রাজপথের দশা বেহাল করে তোলে। এ ছা়ড়া, ‘ভিলেনের’ ভূমিকায় নেমেছিল গত রাতের বৃষ্টি। বাইরে থেকে আসা অন্তত হাজার দশেক গাড়ি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখাটাই ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, বৃষ্টির জেরে জলকাদায় ময়দানের বঙ্গবাসী মাঠ, রেঞ্জার্স মাঠ বা গঙ্গাসাগরযাত্রীদের মাঠের অবস্থা খারাপ ছিল। ফলে, পার্কিং করার সময়ে বাসের চাকা ডুবে যাচ্ছিল। দেড়-দু’হাজার বাস ওই তল্লাটে রাখা যায়নি। তাতে ভালই ভুগতে হয়েছে।’’

পার্কিংয়ের সমস্যার জেরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই মেয়ো রোড, ডাফরিন রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, শেক্সপিয়র সরণি, কুইন্স ওয়ে-সহ কয়েকটি রাস্তায় যানজট শুরু হয়ে যায়। শেক্সপিয়র সরণির গাড়ির সারি পৌঁছে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস পর্যন্ত পরে মেয়ো রোডের এক দিকের ‘পার্কিং’ সরিয়ে পার্ক স্ট্রিট এবং দক্ষিণ কলকাতা থেকে আসা গাড়ির গতি বাড়ানো হয়। এ ছাড়া, পার্ক সার্কাস ময়দান, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল।

বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে কলকাতায় ঢোকার রাস্তায় গাড়ির চাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। বীরভূম, বর্ধমানের দিক থেকে আসা মিছিলের বাস নিবেদিতা সেতু হয়ে উত্তর কলকাতায় ঢোকানো হয়। পুলিশের আর একটি দাবি, এ বার কলেজ স্ট্রিট মিছিলমুক্ত থাকায় উত্তর কলকাতার পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভাল ছিল। শাসক দলের মিছিল কলেজ স্ট্রিটের ১৪৪ ভাঙতে চায়নি। ফলে, সভামুখী ভিড়ের চাপ প্রধানত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে পড়ে। কলেজ স্ট্রিট যান চলাচলের জন্য কার্যত মুক্ত থাকায় সুবিধে হয়েছে বলে দাবি করেছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE