Advertisement
E-Paper

তারের জঙ্গল আর নয়, কড়া বার্তা পুলিশের

লালবাজার সূত্রের খবর, টালা থেকে টালিগঞ্জ বা বেলেঘাটা থেকে বেহালা— শহরের প্রায় সর্বত্রই বাতিস্তম্ভ থেকে তারের কুণ্ডলী ঝুলতে দেখা যায়।

শিবাজী দে সরকার ও পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
বিপদ: শহরের রাস্তায় এ ভাবেই ছড়িয়ে থাকে কেব্‌ল। —নিজস্ব চিত্র।

বিপদ: শহরের রাস্তায় এ ভাবেই ছড়িয়ে থাকে কেব্‌ল। —নিজস্ব চিত্র।

উড়ালপুলের বাতিস্তম্ভ থেকে ঝুলছিল কেব্‌ল সংযোগের তারের কুণ্ডলী। তাতেই জড়িয়ে গিয়ে বছরের প্রথম দিন মৃত্যু হয়েছিল মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, শহরের যত্রতত্র বাতিস্তম্ভ থেকে ওই ভাবে তারের দলা ঝুলবে কেন? প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। যার জেরে এ বার নড়েচড়ে বসেছে পুলিশও।

লালবাজার সূত্রের খবর, টালা থেকে টালিগঞ্জ বা বেলেঘাটা থেকে বেহালা— শহরের প্রায় সর্বত্রই বাতিস্তম্ভ থেকে তারের কুণ্ডলী ঝুলতে দেখা যায়। দৃশ্যদূষণের পাশাপাশি যা কখনও সখনও ডেকে আনে দুর্ঘটনাও। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য মঙ্গল ও বুধবার শহরের বেশ কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে এ নিয়ে বৈঠকে করা হয়েছে স্থানীয় কেব্‌ল অপারেটরদের সঙ্গে। পুলিশের তরফে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেব্‌ল ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাস্তায় ওই ভাবে তার ঝোলানো যাবে না।

কী কী নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ?

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে আলিপুর, বন্দর এবং তারাতলার বিভিন্ন কেব্‌ল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন দক্ষিণ-পশ্চিম ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকেরা। কেব্‌ল অপারেটরদের তাঁরা বলেছেন, পরিত্যক্ত তার কোনও ভাবেই রাস্তায় বা ফুটপাথে কুণ্ডলী পাকিয়ে ফেলে রাখা যাবে না। ওই বাতিল তারের গোছা পুরসভার ভ্যাটে নিয়ে গিয়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া কেব্‌ল টিভি-র তার অন্তত ২০ ফুট উচ্চতায় রাখতে হবে, যাতে মালবাহী গাড়িতে তা আটকে না যায়। পুলিশের একাংশের দাবি, মালবাহী গাড়িতে আটকে গেলে সেই তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়তে পারে। যার জেরে ফের ঘটতে পারে রবিবারের মতো কোনও দুর্ঘটনা। এর পাশাপাশি এ দিনের বৈঠকে বলা হয়েছে, কেব্‌লের লাইনের কাজের জন্য তিরিশ ফুটের মই গাড়িতে চাপিয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ, অত লম্বা মইয়ের বেশির ভাগটাই গাড়ির বাইরে বেরিয়ে থাকে। তাই তাঁদের ফোল্ডিং মই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

লালবাজার জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম ট্র্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি শহরের অন্য কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডও নিজেদের এলাকার কেব্‌ল অপারেটরদের কাছে ওই একই বার্তা দিয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও এলাকায় যদি রাস্তায় তারের কুণ্ডলী পড়ে থাকতে দেখা যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট কেব্‌ল অপারেটরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে। পুলিশের দাবি, শহরের বিভিন্ন এলাকায় তার ঝোলানোর অনুমোদন দেয় কলকাতা পুরসভা। কিন্তু রাস্তায় বাতিল তার পড়ে থাকলে তা পুলিশকেই দেখতে হয়। তাই এ বার থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ নিজেই কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।‌

শহরের মাল্টি সার্ভিস অপারেটরেরা (এমএসও) অবশ্য নিজেদের ঘাড়ে দায় নিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সংযোগের তার ছিঁড়ে গেলে কেব্‌ল অপারেটরের কর্মীরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে লাইন সারিয়ে দেন। তাই রাস্তার ধারে তার পড়ে থাকার কথা নয়। পড়ে থাকলেও সেটা তাঁদের দায় নয়।

শহরের অন্যতম বড় একটি এমএসও-র এক কর্তা সুরেশ শেঠিয়ার বক্তব্য, ইদানীং বহু ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার তারও সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে। তার সঙ্গে রয়েছে টেলিফোনের তার। সুরেশবাবুর দাবি, ইন্টারনেট বা ফোনের তারের উপরে নজরদারি খুব একটা বেশি থাকে না। তবে তাঁর দাবি, তাঁদের অধীনে যে কেব্‌ল অপারেটরেরা আছেন, তাঁদের প্রত্যেককে কেব্‌ল সংযোগের তার ঠিক ভাবে গুছিয়ে রাখার নির্দেশ সব সময়েই দেওয়া হয়।

কলকাতার মধ্যে বড় এমএসও-র সংখ্যা পাঁচ। হাওড়া-সহ আশপাশের এলাকা ধরলে সেই সংখ্যা নয় ছাড়িয়ে যাবে। একটি বড় এমএসও-র অধীনেই প্রায় সাড়ে চার হাজার কেব্‌ল অপারেটর সংস্থা রয়েছে। এমএসও-দের একাংশের মতে, তারা শহরের মূল রাস্তা দিয়ে কেব্‌ল সংযোগের তার টেনে নিয়ে যায় অপারেটরদের অফিসে। অপারেটরেরা নিজেদের এলাকায় গ্রাহকদের ঘরে সেই তার নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কলকাতার মূল রাস্তাগুলিতে পাঁচটি এমএসও-রই লাইন থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবে থাকে তার চেয়ে অনেক বেশি।

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে ভাবে পাড়ায় পাড়ায় বাতিস্তম্ভের সঙ্গে কেব্‌লের তার ঝোলানো হয়, তা খুবই দৃষ্টিকটু। গোছা গোছা তার মাথার উপরে জট পাকিয়ে ঝুলে থাকে। যে যার নিজের মতো করে, যে দিক দিয়ে খুশি লাইন টেনে নিয়ে যায়। এর ফলে অনেক সময়ে সমস্যায় পড়তে হয় সিইএসসি-র কর্মীদেরও। বহু ক্ষেত্রে সে সব তার খুলে পড়ে থাকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেব্‌ল অপারেটর সংস্থা এ সব বিষয়ে নজরও দেয় না।

হাওড়ার অন্যতম বড় এমএসও-র এক কর্তা সুজিত দাস খানিকটা হলেও এই সমস্যর কথা মেনে নিয়েছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, হাওড়া-হুগলিতে তাঁদের পরিষেবা এলাকায় তাঁরা অনেকটাই পরিকল্পিত ভাবে কেব্‌ল লাইন নিয়ে গিয়েছেন।

cable wire Kolkata Police কেবল তার কলকাতা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy