Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশি নির্দেশে স্টিকার পড়ুয়াদের গাড়িতেও

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, আপাতত মধ্য কলকাতার একটি স্কুলকে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই নতুন ব্যবস্থার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে।

দখলে: স্কুল ছুটির আগে অভিভাবকদের গাড়ির দখলে ফুটপাত। সরোজিনী নায়ডু সরণিতে। নিজস্ব চিত্র

দখলে: স্কুল ছুটির আগে অভিভাবকদের গাড়ির দখলে ফুটপাত। সরোজিনী নায়ডু সরণিতে। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০১:১৪
Share: Save:

স্কুল ছুটি দেড়টায়। কিন্তু বাচ্চাকে তুলতে অভিভাবকেরা এক ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা আগেই গাড়ি নিয়ে গিয়ে দখল করে ফেলছেন স্কুলের সামনের পার্কিং লট। যার জেরে অনেক সময়ে দু’টি লাইনে গাড়ি দাঁড়ানোয় রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। স্কুল তল্লাট ছাড়িয়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের রাস্তায়। সমস্যার সমাধানে এ বার স্কুল ছুটির সময় অনুসারে বিশেষ স্টিকার চালু করতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। ওই স্টিকার পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াতকারী সব ধরনের গাড়িতে আটকে রাখতে হবে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, আপাতত মধ্য কলকাতার একটি স্কুলকে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই নতুন ব্যবস্থার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে। বেকবাগান এলাকার ওই বেসরকারি স্কুলে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার হাজার গাড়ির যাতায়াত। লালবাজার জানাচ্ছে, ওই স্কুলটি নিয়েই বর্তমানে সব চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় পৃথক করে সেই মতো স্টিকার দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ জানাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনও গাড়ি যাতে স্কুলের কাছে না পৌঁছয়, তাই ওই ব্যবস্থা। নির্ধারিত সময়ের আগে কোনও গাড়ি চলে এলে সেটিকে আর পার্কিং ‘দখল’ করতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে ওই সব রাস্তায় যাতে ওই সময়ে পার্কিং খালি থাকে তা দেখতে পুলিশকর্তারা নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি গলি কিংবা তস্য গলিগুলিকে বেশি করে ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে ট্র্যাফিকের আধিকারিকদের। লালবাজার জানায়, দফায় দফায় ওই স্কুলগুলির ছুটি হয়। কিন্তু পড়ুয়াদের অভিভাবকদের গাড়ি ছুটির নির্ধারিত সময়ের আগেই একসঙ্গে স্কুলের সামনে চলে আসায় যানজট তৈরি হচ্ছে। রাস্তায় ওই সব গাড়ি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় অন্যান্য যান চলাচলে বাধা পায়। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেগ পেতে হয় পুলিশকেও।

কেন এমন সিদ্ধান্ত?

পুলিশ সূত্রের খবর, স্কুলের গাড়ির জন্য সব চেয়ে বেশি যানজট হয় শেক্সপিয়র সরণি, এ জে সি বসু রোড, মল্লিকবাজার, মৌলালি, পার্ক সার্কাস, পার্ক স্ট্রিট এলাকায়। বাদ যায় না সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ-সহ দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। অভিযোগ, স্কুল খোলা থাকলেই মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ির গতি কমে যায়। যার ফলে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে ওই সব এলাকায় যানজট হয়।

লালবাজার সূত্রের খবর, স্কুল তল্লাটের আশেপাশের রাস্তার যানজটে উদ্বিগ্ন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারাও। গত কয়েক মাসে ওই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন স্কুলের আশপাশের রাস্তায় ডিউটি করা ট্র্যাফিক অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্র্যাফিকের কর্তারা। স্কুলগুলির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

টালিগঞ্জের এক বাসিন্দা নিজের অভিজ্ঞতায় জানাচ্ছেন, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরবেন বলে হাতে প্রায় ঘণ্টা খানেক বেশি সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। মিন্টো পার্ক থেকে বেকবাগান হয়ে মৌলালি পর্যন্ত প্রচণ্ড যানজট ঠেলে তিনি যখন স্টেশনে পৌঁছন তখন ট্রেন ছাড়তে বাকি মাত্র পাঁচ মিনিট। এমন ঘটনার কথা হামেশাই কানে আসে পুলিশকর্তাদের। এর পিছনে সেই বেসরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আসা গাড়ির ভিড়ই কারণ বলে জানাচ্ছে লালবাজার।

কলকাতা পুলিশ জানায়, গত সপ্তাহে স্কুল তল্লাটে ডিউটি করা ট্র্যাফিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করার সময়ে পুলিশকর্তারা তাঁদের থেকে জানতে চান ওই সব

এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। প্রথম দফায় ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারদের সঙ্গে ওই বৈঠক হয়েছে। এর পরে অন্য গার্ডের সঙ্গেও ওই ধরনের বৈঠক হবে বলেই জানা গেছে। লালবাজার জানাচ্ছে, প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে পৃথক ভাবে আলোচনায় বসা হবে গাড়ি পার্কিং, স্কুল শুরু এবং ছুটির সময়ে আসা অভিভাবকদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata police School Traffic jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE