কসবার আইন কলেজের ধর্ষণকাণ্ডের তদন্তভার গ্রহণ করল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। বুধবার দুপুরেই কসবা থানা থেকে ধর্ষণকাণ্ডের কেস ডায়েরি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
কসবার কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় আগেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল কলকাতা পুলিশ। প্রথমে পাঁচ সদস্যের তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছিল। পরে সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ন’জন করা হয়। কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষালের নেতৃত্বে কসবাকাণ্ডের তদন্ত করছিল সিট। এ বার সেই মামলায় তদন্ত করবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সূত্রের খবর, এই মামলায় আরও কয়েকটি ধারা যোগ করেছে কলকাতা পুলিশ। প্রথমে গণধর্ষণ ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। এ বার সেই সঙ্গে যোগ হল অপহরণ, অস্ত্র দ্বারা আঘাতের মতো ধারাগুলি।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল গোটা রাজ্যে। ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ জুন। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গত ২৭ জুন। নির্যাতিতার অভিযোগ, বুধবার রাতে প্রথমে কলেজের ইউনিয়ন রুমে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে। রক্ষীকে সেই সময়ে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন, যাঁকে ‘এম’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি কলেজের প্রাক্তনী। বাকি দু’জন (‘জে’ এবং ‘পি’ হিসাবে চিহ্নিত) এখনও কলেজে পড়াশোনা করছিলেন।
ঘটনার পর পরই তদন্তের জন্য সিট গঠন করা হয়। ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করেছে তারা। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের বাড়িতে হানা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সিটের সদস্যেরা। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় মূল অভিযুক্ত যে পোশাক পরে ছিলেন, সেগুলি তাঁর বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্যও। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার আগে ও পরে অভিযুক্তেরা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, কাদের ফোন করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে কলরেকর্ড সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, ফোনের লোকেশনের সূত্র ধরে ঘটনার আগে এবং পরে অভিযুক্তেরা কোথায় কোথায় ছিলেন, তারও খোঁজ চালানো হচ্ছে বলে খবর। এই ঘটনায় নির্যাতিতা এবং অভিযুক্তদের বয়ান খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়াও, ঘটনার দিন অভিযুক্তদের গতিবিধি জানার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজও। এই ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে কি না, তা-ও রয়েছে তদন্তকারীদের নজরে।
আরও পড়ুন:
কসবার ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে শুধু কলকাতা হাই কোর্টে নয়, সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের হয়েছে। সিবিআই তদন্তের আবেদন জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মামলা করার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়াও, কসবার ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টেও বেশ কিছু জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার আবেদন জমা পড়েছে। দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা। হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন নেই। ওই বিষয়ে সকল মামলা দায়ের করে অপর পক্ষকে নোটিস দেওয়া হোক। তার পরে শুনানি চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলির একসঙ্গে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।