Advertisement
E-Paper

‘শেষ পর্যন্ত তেহরান ছাড়তে পারলাম, আজ়ারবাইজানের কাছে পৌঁছে গিয়েছি, এ বার সীমান্তটা পেরোলেই স্বস্তি’

ভারতীয় দূতাবাস আমাদের তেহরান থেকে বার করে নিয়ে যায়নি। গত কয়েক দিন অনেক ফোন করেছি। যোগাযোগ রেখেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ওরা দায়সারা উত্তর দিয়ে গিয়েছে।

ফাল্গুনী দে, অধ্যাপক, উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, কলকাতা

ফাল্গুনী দে, অধ্যাপক, উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, কলকাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ১৮:০৯
damage in Tehran

তেহরানের রাস্তায় ধ্বংসের ছবি। এখনও উড়ছে কালো ধোঁয়া। ছবি: রয়টার্স।

উফ্, বেঁচে গেলাম বলে এখনও পুরোপুরি স্বস্তির নিঃশ্বাসটা ফেলতে পারিনি। তবে অনেকটাই আতঙ্কমুক্ত এখন। ইরানেই আছি। তবে তেহরান থেকে অনেকটা সরে আসতে পেরেছি আমার ফেরার পথে। ঘুরপথে হলেও ঘরে ফেরার পথে তো বটে! ভয়টা কমেছে। ইরানের আজ়ারবাইজান সীমান্তের কাছে পৌঁছোচ্ছি।

কয়েক দিন পর আজ ভাল করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েক দিন দমবন্ধ হয়ে আসছিল। হোটেলের একটা ঘরে বন্দি থাকা আমার মতো ট্রেকপাগল লোকের পক্ষে কষ্টের। তার উপর সারা রাত ধরে বোমার আওয়াজ। বারুদের গন্ধ। হোটেল থেকে বেরোতে পেরেই খানিক ভাল লাগছিল। কিন্তু তখনও স্বস্তি ছিল না। যত ক্ষণ না তেহরান ছাড়তে পারছি, একটা ভয় মনের মধ্যে ছিলই।

না, ভারতীয় দূতাবাস আমাদের তেহরান থেকে বার করে নিয়ে আসেনি। গত কয়েক দিন অনেক ফোন করেছি। যোগাযোগ রেখেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ওরা দায়সারা উত্তর দিয়েছে। এ দিকে হাতে টাকাপয়সা প্রায় শেষ। আর কত দিন এ ভাবে হোটেলে পড়ে থাকব! তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম, যা করার নিজেকেই করতে হবে। নিজেকেই বেরোতে হবে এই বন্দিদশা থেকে। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ট্রাভেল এজেন্সির কাছে সাহায্য চাইলাম, যাদের সাহায্যে পাহাড় চড়তে এসেছিলাম ইরানে।

damage in iran

আস্ত্রা সীমান্ত। এখানেই পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন অধ্যাপক ফাল্গুনী দে। ছবি: সংগৃহীত।

ওরা আমাকে বলল, ব্যবস্থা করে দেবে। তবে ইরানের বাইরে বার করতে পারবে না। আমাকে ইরান-আজ়ারবাইজান সীমান্তে পৌঁছে দেবে। এ-ও বলল, ঝুঁকি নিয়ে ওরা যে আমাকে ইরানের আস্ত্রা সীমান্তে পৌঁছে দেবে তার খরচ ওদের দিতে হবে। এখন তো অত টাকা নেই। ওদের বলেছি, পরে দিয়ে দেব। ভাগ্য ভাল যে ওরা তাতে রাজি হয়েছে।

ওদের সঙ্গেই আজ (মঙ্গলবার) ভোরে রওনা দিয়েছিলাম। তেহরানের তালিঘানি এলাকায় মাসাদ নামের যে হোটেলে ছিলাম, সেখান থেকে আস্ত্রা সীমান্ত অনেক ঘণ্টার রাস্তা। তাই ভোরে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে। পথে আসতে আসতে চোখে পড়ল যুদ্ধের চিহ্ন। ইজ়রায়েলের হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে গোটা তেহরান। বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। এখনও অনেক জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। রাস্তায় পুলিশ আর সেনা টহল দিচ্ছে। তার মধ্যেই প্রাণ হাতে করে পৌঁছোচ্ছি আমার প্রাথমিক গন্তব্যে। এখনই তো আর ইরান ছাড়তে পারছি না। আস্ত্রা সীমান্তে পৌঁছতে এখনও ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। তার পরও অনেক কাজ বাকি। আন্তর্জাতিক সীমান্ত তো চাইলেই পার হওয়া যায় না। আজ়ারবাইজানে ঢুকতে গেলে সে দেশের ইমিগ্রেশন দফতরের কাছ থেকে মাইগ্রেশন কোড নিতে হবে। তার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সেটাও করেছি। কখন অনুমতি পাব জানি না। যত ক্ষণ না পাচ্ছি, তত ক্ষণ ইরানের মধ্যেই কাটাতে হবে।

আজ়ারবাইজান ঢুকতে পারলেও শান্তি। ওখানে তো আর যুদ্ধ হচ্ছে না। আশা করি ওখানে গিয়ে কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা ঠিক একটা করে ফেলতে পারব। আপাতত সেই স্বপ্নই দেখছি। আর ভাল লাগছে না। কত ক্ষণে যে নিজের শহরে পা রাখব সেটাই মনের মধ্যে ঘুরছে। পাহাড় চড়তে এসে এই ক’দিন এখানে যা অভিজ্ঞতা হল তা কোনও দিন ভুলতে পারব না।

(টেলিফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন: দেবার্ক ভট্টাচার্য)

Iran-Israel Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy