Advertisement
E-Paper

দশ বছর পরেও যেন তাড়া করছে সেই আতঙ্ক

অটো করে লেক টাউন ফুটব্রিজ পর্যন্ত এসে, সেখান থেকে আবার আর একটি অটো ধরে বাড়ি পর্যন্ত যেতে অন্তত মিনিট কুড়ি বেশি লাগে। ফলে সময় নষ্ট করার থেকে বড়দের নিষেধ অমান্য করা পছন্দের ছিল, যত দিন না বিপদ এসে দাঁড়াল বৈশাখী থেকে কেষ্টপুরে আসা সেই ব্রিজের মুখে।

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৭
রাতের কলকাতা। প্রতীকী ছবি।

রাতের কলকাতা। প্রতীকী ছবি।

মা-বাবার বারণ সত্ত্বেও সল্টলেকের বৈশাখী অঞ্চল থেকে ব্রিজ ধরে মাঝেমধ্যে ভিআইপি রোডের কাছে বাড়ি ফিরতাম কয়েক জন বন্ধু মিলে। বৈশাখী থেকে কেষ্টপুর পর্যন্ত ব্রিজ পেরিয়ে আসতে সময় অনেকটা বাঁচত। সল্টলেক থেকে পাঁচ মিনিটে ভিআইপি রোড। রাস্তা পেরিয়ে আরও মিনিট সাতেকে অলিগলি ধরে দমদম পার্কের বাড়ি। এই পথ না ধরলে ঘুরে আসতে হত লেক টাউন বা উল্টোডাঙা দিয়ে। অটো করে লেক টাউন ফুটব্রিজ পর্যন্ত এসে, সেখান থেকে আবার আর একটি অটো ধরে বাড়ি পর্যন্ত যেতে অন্তত মিনিট কুড়ি বেশি লাগে। ফলে সময় নষ্ট করার থেকে বড়দের নিষেধ অমান্য করা পছন্দের ছিল, যত দিন না বিপদ এসে দাঁড়াল বৈশাখী থেকে কেষ্টপুরে আসা সেই ব্রিজের মুখে। সাইকেল নিয়ে কয়েক জন যুবকের হুল্লোড়ের মুখে আলো-আঁধারির পথ ধরে বড় রাস্তা পর্যন্ত আসার তিন-চার মিনিটের সেই আতঙ্ক দশ বছর পরেও তাড়া করে আমাদের তিন বান্ধবীকে। সে পথে যে আমরা ছাড়া আর কেউই ছিলেন না সে দিন, তেমন নয়। কিন্তু সে দিন বুঝেছিলাম, যাঁরা ও পথ ধরে যাওয়া-আসা করেন, তাঁরা যেন পরিস্থিতি বুঝেই যান। ফলে রাত আটটার কলকাতা শহরেও সে দিন যেচে ঝামেলায় জড়াতে চাননি কেউই। তখন তেমন বাড়ি-দোকানপাটও ছিল না ও দিকে যে গিয়ে সাহায্য চাইব। ভেবেছিলাম ভিআইপি রোডে পৌঁছলেই বুঝি আতঙ্কের শেষ। যুবকেরা আর এগোয়নি বলে সাহায্য চাইতে হয়নি কারও। কিন্তু কেষ্টপুর মোড়ে থেকে অল্প দূরে ভিআইপি রোডের এই অংশটি দিয়ে যতটা জোর গতিতে গাড়ির যাতায়াত, সেখানে কোনও গাড়ি থামিয়ে নিজের অসুবিধের কথা বোঝানো সহজ নয়।

সাহায্য চাইতে না পারার সেই দিন থেকে আর কুড়ি মিনিট বাঁচানোর চেষ্টা করি না। সময় যতই বেশি লাগুক, হাত ঘুরিয়ে নাক ধরা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সল্টলেকে গেলে সন্ধ্যার পরে ঘুরপথেই বাড়ি ফিরি।

ভিআইপি রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে মাঝেমধ্যে ওই এলাকাটা এখনও চোখে পড়লে সেই সন্ধ্যার আতঙ্ক ফিরে আসে। তখন নিজেকে বোঝাই, এত বছরে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। ব্রিজটাও পাকা হয়ে গিয়েছে। অনেক বেশি মানুষজনের যাতায়াত এখন ওই পথে। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে নিশ্চয়। ব্রিজ থেকে যে রাস্তাটা চলে গিয়েছে ভিআইপি রোডের দিকে, সেখানে আলো বসেছে, হয়েছে অল্পবিস্তর দোকানপাটও। নতুন হওয়া সাবওয়ে ঘিরে এখন কিছুটা ভিড়ও হয়। ফলে বুঝি, আর ভয় নেই সেখানে।

নিজেকে যে অকারণেই ভুল বোঝাচ্ছিলাম, তা টের পেলাম আবার। ফের এক তরুণী বিপদে পড়েছেন সেই ফুটব্রিজের কাছেই। ব্রিজ থেকে নেমে তাঁর বাড়ির রাস্তা আর আমার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা একটু আলাদা। আমার বাড়ির পথটা তুলনায় জনবহুল এখন। তাই বলেই যে নিরাপদ এখন সে অঞ্চল, সে কথা অবশ্য জোর দিয়ে বলতে পারি না!

Road Molestation Women Safety
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy