Advertisement
E-Paper

কাগজ নয়, জরিমানা দিলেই মিলবে গাড়ি

শারদোৎসবের আগে থেকে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন রুখতে যে কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল তা হালকা করতে চায় না লালবাজার।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন রুখতে কড়াকড়ি লালবাজারের। —ফাইল চিত্র

ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন রুখতে কড়াকড়ি লালবাজারের। —ফাইল চিত্র

থানার তদন্তকারীদের ঘরে (আইও রুম) কাগজপত্র হাতে নাগাড়ে অনুরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন এক যুবক। বলছেন, “আপনি বাইকের যে কোনও কাগজ রেখে দিতে পারেন। বাইকটা ছেড়ে দিন। কথা দিচ্ছি, কালই টাকা মিটিয়ে দেব।” কথায় ভ্রূক্ষেপ নেই টেবিলের অন্য প্রান্তে বসা তদন্তকারীর। মাঝে অস্ফুটে শুধু এক বার তিনি বললেন, “এখনই টাকা মিটিয়ে দিন। বাইক ছেড়ে দেওয়া হবে। এখন দিলে তবু দু’হাজারে হয়ে যাবে। বলা তো যায় না, রাতারাতি কেন্দ্রের আইন চালু হলে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে হতে পারে!” যুবক তবু বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, তিন দিন ধরে ঘুরছেন তিনি। আগে তো কাগজ রেখেই বাইক ছেড়ে দেওয়া হত!

শারদোৎসবের আগে থেকে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন রুখতে যে কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল তা হালকা করতে চায় না লালবাজার। বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড ও থানাগুলির সূত্রে তেমনটাই খবর। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের লালবাজারের কর্তারা বলে দিয়েছেন, মত্ত অবস্থায় বা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে কেউ আটক হলে তাঁকে আগে জরিমানার টাকা মেটাতে বলুন। টাকা মেটানো হয়েছে, সেই রসিদ দেখে তবেই গাড়ি ছাড়ুন। আর এতেই আটক হওয়া গাড়ি কেউ থানায় ফেলে রাখছেন এক সপ্তাহ, কেউ দশ দিন। তবু পুলিশের বড় অংশই মনে করছে, এ ওষুধে কাজ হবে। জরিমানা ফাঁকি দিয়ে শহরে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ানোও বন্ধ হবে।

সম্প্রতি মোটর ভেহিকল্‌স আইন সংশোধন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন আইনে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা বলা হলেও রাজ্যে এখনও তা প্রয়োগ হয়নি। কলকাতা পুলিশ এলাকায় মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে মোটর ভেহিকল্‌স আইনের ১৮৫ নম্বর ধারায় দু’হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরপর একই অভিযোগে আটক হলে তিন হাজার টাকা জরিমানা হয়। সঙ্গে দু’বছরের হাজতবাসও হতে পারে। তবে কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এত দিন গাড়ি আটক হলে কোনও একটি কাগজ থানায় জমা রেখে সেটি নিয়ে চলে যেতেন গাড়ির মালিক। আশ্বাস দিতেন, কয়েক দিনের মধ্যেই জরিমানার টাকা মিটিয়ে দেবেন। আদতে সেই জরিমানার টাকা মেটাতেন না তাঁদের বেশির ভাগই। এমন প্রবণতা বন্ধ করতেই এ পথে হাঁটছে পুলিশ। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, জরিমানা আদায়ে গাড়ি আটকানোর এই পদ্ধতি থানাগুলির পক্ষে আরও কতটা চাপ তৈরি করবে? যেখানে এমনিতেই থানা চত্বরে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়ি নিয়ে নাকাল অবস্থা হয় পুলিশের।

উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার যে থানাগুলিতে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের গাড়ি আটক থাকছে, তার অন্যতম মানিকতলা থানা। সেখানকার তদন্তকারী আধিকারিক আবার বললেন, “দিন কয়েক আগেই একটি দামী বিলাসবহুল গাড়ি ধরেছিলাম আমরা। সেই গাড়ির চালকও বারবার বলছিলেন, জরিমানা ঠিক মিটিয়ে দেবেন। গাড়ির কোনও একটি কাগজ রেখে ছেড়ে দেওয়া হোক। আমরা বলেছি, আগে জরিমানা মেটাতে হবে। যাঁর এত দামী গাড়ি রয়েছে, তাঁর পক্ষে ওই জমা রাখা কাগজ নতুন করে বার করা কোনও ব্যাপারই নয়।” ডিসি দক্ষিণের অধীন একটি থানার তদন্তকারী আধিকারিক আবার বললেন, “কত লোকের যে কত কত টাকা জরিমানা বাকি রয়েছে তা এখন দেখছি। আগে সব মেটাতে হবে তার পরে গাড়ি পাবে।”

Reckless Driving Kolkata Police Traffic Police Fine Lal Bazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy