Advertisement
E-Paper

মণ্ডপে নমো-নমো, তবু ছন্দে বাস্তবের বিশ্বকর্মারা

লকডাউনের আগল খুলে জীবনের ছন্দে ফেরার তাগিদ শহরের জ্যান্ত বিশ্বকর্মাদের জন্য ঠিক এখনই নতুন শুরুর বার্তা বয়ে আনছে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
উৎসব: পুজোর আগের দিন বিশ্বকর্মা মূর্তি কিনতে ভিড়। বুধবার, যদুবাবুর বাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উৎসব: পুজোর আগের দিন বিশ্বকর্মা মূর্তি কিনতে ভিড়। বুধবার, যদুবাবুর বাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বৈদিক মতে সাত বুড়োর এক বুড়ো ঠাকুর তিনি, বাংলায় এসে যুবক হয়েছেন। তা বলে কোভিড-ধ্বস্ত শহরে আজ, বিশ্বকর্মা পুজোয় তাঁর বাজার তেমন হালে পানি পাচ্ছে সেই সঙ্কেত নেই।

পশ্চিম ভারতের বর্গিমুলুক থেকে বাংলায় গেঁড়ে বসা সিদ্ধি বিনায়ক গণেশের কাছে কুমোরটুলিতে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়াটাই গত পাঁচ-সাত বছর ধরে এ রাজ্যে বিশ্বকর্মার ভবিতব্য। এই অতিমারি ক্লান্ত ২০২০-তেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কিন্তু লকডাউনের আগল খুলে জীবনের ছন্দে ফেরার তাগিদ শহরের জ্যান্ত বিশ্বকর্মাদের জন্য ঠিক এখনই নতুন শুরুর বার্তা বয়ে আনছে।

রিকশাস্ট্যান্ড বা পাড়ার গ্যারাজ, চটকল বা ব্যাটারি কারখানায়, হাতির পিঠে আসীন ভ্রমরকৃষ্ণ গোঁফ, বাহারি টেরির যুবক ঠাকুরকে সে ভাবে দেখা নাও যেতে পারে আজ। তবে পাড়ায় পাড়ায় দুর্গাপুজোর থিমের প্রস্তুতির কাজ সারতে ইতিমধ্যেই বিশ্বকর্মারা আসতে শুরু করে দিয়েছেন।

এ দেশের লোকবিশ্বাসে ভক্ত ও ভগবানের সত্তা একাকার হওয়ার আবহমান নমুনাটি বিশ্বকর্মাতেই মূর্ত। গ্রামের কারিগর, ছুতোর, কুমোর থেকে শহুরে কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত সকলেই আদতে বিশ্বকর্মা বলে খ্যাত। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে তাঁদের কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ছোঁয়া বারণ। প্রচলিত কাহিনি বলে, এক বার এই নিষেধ অমান্য করার জন্যই শ্রমিক-কারিগরদের উপরে বিশ্বকর্মার কোপদৃষ্টি বর্ষিত হয়। বিশ্বকর্মা রেগে বলেন, শ্রমিকেরা দিন আনবে, দিন খাবে, কিন্তু লাভের মুখ দেখবে না। লোককথায় শ্রমিকদের চিরকালীন দারিদ্রের এ ভাবেই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে মনে করেন সমাজ-ইতিহাসের গবেষকেরা।

তবু কোভিড-পরিস্থিতি এই বিশ্বকর্মাদেরও অন্য ভাবে দেখতে শেখাচ্ছে। দুর্গোৎসবের বিভিন্ন পুজো কমিটির ফোরাম কর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, “আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। কাছের, দূরের গ্রাম বা ভিন্ রাজ্য থেকে শহরে আসা বিশ্বকর্মাদের কোভিড সুরক্ষা আমাদেরই দিতে হবে।”

কী ভাবে? প্রায় সব পুজো কমিটিই পুজোর থিমের কারিগর মায় বিশ্বকর্মাদের কোভিড পরীক্ষা করাচ্ছে। পার্থবাবু বলেন, “কাজ সেরে গ্রামে ফেরার আগেও কোভিড টেস্ট করিয়েই ফেরানো হবে। কারও কোভিড হলে তাঁর চিকিৎসা শহরেই হবে। গ্রামে কলকাতা থেকে কোভিড সংক্রমণ ছড়াতে দেওয়া ঠিক হবে না।” আজ, এই থিম-কারিগরেরাও কাজের ফাঁকে ছোট্ট করে বিশ্বকর্মা পুজো সারবেন।

কুমোরটুলির হিসেব, অন্য বার হাজার দুয়েক গণেশ মূর্তি তৈরি হলে এ বছর বড়জোর ৩৩০-৩৪০টি হয়েছে। বিশ্বকর্মার অনুপাত আরও খারাপ। প্রতিমা শিল্পী মীনাক্ষী পাল বললেন, “অন্য বার ১০০টা বিশ্বকর্মা করি। এ বার ২০টা বিশ্বকর্মা করেছি।” ব্যস্ত শিল্পী মিন্টু পাল এ বার বিশ্বকর্মা করেননি। বাবু পালের কাছে কয়েক জন বাঁধাধরা খদ্দেরেরই বায়না ছিল। হাওড়ার চটকল বা বরাহনগরের গ্যারাজের মূর্তির উচ্চতা লক্ষণীয় ভাবে কমেছে। ছাঁচ বা 'ডাইসে' চটজলদি কাজ সারারই হিড়িক পড়েছে।

মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজো এর আগেও এক দিনে পড়েছিল। কিন্তু এ বারই মহালয়া থেকে পুজোর মাঝের এক মাসের ফারাক। এ জন্যই বিশ্বকর্মা পুজো বেশি হবে বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন পালমশাইরা। শেষ মুহূর্তে কিছু খুচরো বায়না এলেও পোটোপাড়ার অবশ্য ব্যবসা বাড়ার সঙ্কেত শেষতক নেই।

বাংলায় যুবক বিশ্বকর্মার পুজোর পিছনে শিল্পবিপ্লবোত্তর দিনের উদ্দীপনার ছায়া দেখেন সমাজতত্ত্ববিদেরা। এ বার কোভিড-ধ্বস্ত দিনে জ্যান্ত বিশ্বকর্মাদের কাজে ফেরার মধ্যেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

Biswakarma Puja Festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy