E-Paper

ছাড়ে ‘পেটপুজো’ই প্রতারণার পথ এ বারের পুজোয়

পুলিশ সূত্রের খবর, পুজো শুরুর আগে থেকে ধরলে গত দু’মাসে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ৩৫০টিরও বেশি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৩টিই সাইবার অপরাধ তালিকাভুক্ত।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৩১

—প্রতীকী চিত্র।

ছাড়ের টোপ গিলেই এ বারের উৎসবের মরসুমে সব চেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন শহরবাসী। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছেন যাঁরা, ছাড়ে ‘পেটপুজো’ করার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের অধিকাংশই পুলিশকে জানিয়েছেন, এক প্লেট খাবারের অর্ডার দিলে বিনামূল্যে মিলবে আরও এক প্লেট! এমনই বার্তা পেয়ে ছুটেছিলেন তাঁরা। তাতেই খোয়া গিয়েছে হাজার হাজার টাকা! এর পরেই রয়েছে পুজোয় কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণা-চক্রের ফাঁদে পড়া এবং অনলাইনে ছাড়ে পোশাক বা প্রসাধন সামগ্রী কিনতে গিয়ে প্রতারিত হওয়া। কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, পুজোর অফারে নবীকরণ করে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা তো ছিলই, তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভাল হোটেলে রেখে শহর ঘুরিয়ে দেখানোর নামে ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা বা বিদেশিদের পুজোর ভুয়ো পাস বিক্রির অভিযোগও।

চলতি বছরে পুজোর মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি)-র সর্বশেষ (২০২৩ সালের) রিপোর্ট। তাতে কলকাতার সাইবার ও অন্যান্য প্রতারণা সংক্রান্ত যে লেখচিত্র মিলেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, গোটা দেশের মধ্যে এই শহরেই সব চেয়ে বেশি, এক কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার মতো প্রতারণার ঘটনাও ঘটেছে। ২০২৩ সালে কলকাতা পুলিশ ৫৬৪টি এক কোটি টাকা বা তার বেশি অঙ্কের প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিল। যা দেশের সব শহরের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে ৩৯১টি ক্ষেত্রে এক থেকে ১০ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। ১৭৩টি অভিযোগের ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকার উপরে প্রতারণা ঘটেছে। দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালে যেখানে কলকাতা পুলিশ ২০১৩টি আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত মামলা করেছিল, সেখানে ২০২৩ সালে মামলা হয়েছিল ১৫৪৪টি। পুলিশের কর্তাদেরই বিশ্লেষণ, ‘‘বেশির ভাগ অভিযোগেই যদি এক কোটি টাকা করে খোয়া যাওয়ার কথা থাকে, তা হলে বুঝতে হবে, সেই শহরে প্রতারণার চিত্র ভয়ঙ্কর। প্রতারণা সংক্রান্ত ঘোষণা, সচেতনতার প্রচার যে কাজে লাগছে না, পুজোর মরসুমে আবারও সেটাই প্রমাণ হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, পুজো শুরুর আগে থেকে ধরলে গত দু’মাসে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ৩৫০টিরও বেশি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৩টিই সাইবার অপরাধ তালিকাভুক্ত। সব ক’টি অভিযোগ ধরলে খোয়া গিয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। যা গত কয়েক বছরের পুজোর ক’দিনে দায়ের হওয়া অভিযোগের থেকে অনেকটাই বেশি।

বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা সোমনাথ বসাক নামে এক ব্যক্তির যেমন দাবি, ‘‘পুলিশ ফোনে ওটিপি বা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য কাউকে দিতে বারণ করে। তা না দিয়েও আমি প্রতারিত হয়েছি।’’ তাঁর দাবি, একটি খাবারের সংস্থার নামে ফোন করে জানানো হয়, একটি বিশেষ খাবার এক প্লেটের সঙ্গে এক প্লেট বিনামূল্যে মিলবে। অফারটি নিতে তাঁকে একটি অ্যাপ্লিকেশন মোবাইলে ডাউনলোড করতে বলা হয়। অ্যাপ নামাতেই ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। একই দাবি শোভাবাজারের সুমন ঘোষালের। অষ্টমীর রাতে এক নামী খাবারের সংস্থার ফোন আসে তাঁর কাছে। অর্ডার দেন তিনি। খাবার তো আসেইনি, উল্টো মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে তাঁর খোয়া গিয়েছে ৯৮ হাজার টাকা। সুমন বললেন, ‘‘পাঁচ প্লেট পোলাও-মাংস ৭০০ টাকায় পেতে গিয়েই কাল হল।’’

পুজো দেখতে আসা এক বিদেশিনির অভিযোগ, ‘‘ভাল হোটেলে রেখে পুজো দেখানো হবে বলে দু’টি পাস বিক্রি করা হয়েছিল ৮০ হাজার টাকায়। এক দিন পর থেকে বুঝেছি, প্রতারিত হয়েছি। হোটেলের টাকা মিটিয়ে নিজেরাই পুজো দেখে অভিযোগ দায়ের করে দেশে ফিরছি।’’ কিউআর কোড স্ক্যান করেও প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগকারীর দাবি, ‘‘পুজোয় পাঁচতারা হোটেলে থাকার একটি ব্যানার দেখে কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলাম। হোটেলে থাকা হয়নি, উল্টে খোয়া গিয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police investigation Fraud Discount

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy