Advertisement
E-Paper

চার অনাথকে নিয়ে পরি এখন ধাত্রী-মা

মাত্র দু’দিন আগে চোখের সামনে সন্তানদের দগ্ধ হতে দেখেছিল বরাহনগরের পরি ওরফে মুম্বি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
আশ্রয়: সেই ছানাদের সঙ্গে পরি। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

আশ্রয়: সেই ছানাদের সঙ্গে পরি। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

এক মা সদ্য হারিয়েছে তার আট সন্তান। অন্য দিকে, কয়েক দিন আগেই মায়ের মৃত্যুতে অসহায় অবস্থা চার সদ্যোজাতের। ঘটনাচক্রে, বরাহনগরে গত শনিবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মিলিয়ে দিল এই দু’পক্ষকে।

মাত্র দু’দিন আগে চোখের সামনে সন্তানদের দগ্ধ হতে দেখেছিল বরাহনগরের পরি ওরফে মুম্বি। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি। তার পর থেকেই মনমরা ছিল সে। ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে ছিল। খাবার তো দূর, এক ফোঁটা জল পর্যন্ত মুখে দেয়নি। রবিবার রাত থেকে অবশ্য সামান্য হলেও পরিবর্তন হয়েছে তার আচরণে। অনাথ হওয়া চার ছানাকে কোলে টেনে নিয়ে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে চেয়েছে।

গত শনিবার সকালে বরাহনগরের কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির মেজ়েনাইন ফ্লোরের ঘরে আগুন লাগে। তাতেই পুড়ে মৃত্যু হয় পৃথাদেবীদের পোষ্য, পরির সাত দিন বয়সি আট ছানার। তার পর থেকেই সিঁড়ির মুখে বসে ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়েছিল ল্যাব্রাডর প্রজাতির পরি। সামান্যতম সুযোগ পেলেই দোতলা থেকে একতলায় নেমে বাচ্চাদের খুঁজতে চেয়েছে। তাকে কোনও ভাবে ভুলিয়ে রেখেছেন বাড়ির লোকজন। মুখে কিছু বলতে না পারলেও পরির চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলের ধারাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল সব কিছু।

রবিবার রাতে পৃথাদেবীরা জানতে পারেন, তাঁদের এক পরিচিতের আশ্রয়ে রয়েছে ১২ দিনের চারটি কুকুর ছানা। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাদের মায়ের। তার পর থেকেই অবহেলায় দিন কাটাচ্ছিল ওই চার ছানা। এলাকার এক মহিলা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে নিজের বাড়ির সামনে একটি বাক্সে রেখেছিলেন। বিষয়টি জানার পরেই পৃথাদেবীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওই ছানাদের বাড়ি নিয়ে আসেন।

সোমবার পৃথাদেবী বলেন, ‘‘মুম্বি আমাদের সকলেরই ভীষণ আদরের। কী ভাবে ওর মানসিক যন্ত্রণা সামাল দেব, বুঝতে পারছিলাম না। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো চেষ্টা করছিলাম ওকে সুস্থ রাখার। তার মধ্যেই ওই চারটি ছানাকে পেলাম।’’ তিনি জানান, ওই ছানাগুলির মায়ের ভালোবাসার প্রয়োজন ছিল। আর সন্তান হারানোর শোক ভুলতে পরিরও প্রয়োজন ছিল তাদের। তাই রবিবার রাতেই ওই চার ছানা চলে আসে পরির কাছে। তাদের নিজে দুধ খাওয়ায় পরি।

পৃথাদেবীর মেয়ে ঋতশ্রী জানান, ওই ছানাদের প্রথমে কাছে নিতে রাজি হচ্ছিল না পরি। তবে পরে নিজে থেকেই কোলে টেনে নেয়। এ দিন সকালে নিজে থেকে অল্প খাবারও খেয়েছে সে। ‘‘চার পথকুকুরকে পেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে খেলা করছে পরি। সেটাই আমাদের বড় শান্তি।’’— বলছেন ঋতশ্রী।

আর পরির খুশি দেখে পড়শিরা একবাক্যে বলছেন, ‘‘হোক না ওরা ভিন্‌ প্রজাতির। মা-সন্তানের সম্পর্কে আবার ভেদাভেদ কীসের?’’

Dog Pari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy