পতিত: সেই জমি। নিজস্ব চিত্র
সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল ৬ কিলোমিটার দূরে রাজারহাটের রেকজোয়ানির স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নয়তো বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল। তা-ও না হলে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ।
অথচ ৪২ বছর আগে স্থানীয় জমিদার হাসপাতাল গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরকে দান করে গিয়েছেন ছ’বিঘা জমি। কিন্তু চার দশক পার করেও গ্রামে গড়ে ওঠেনি কোনও সরকারি হাসপাতাল, মায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে শুধু তৈরি হয়েছে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
নিউ টাউনের ইকো পার্কের পিছনে যাত্রাগাছিতে রয়েছে সেই জমি। প্রসবের জন্য হাসপাতাল যাওয়ার পথেই মেয়ের মৃত্যু হওয়ায় স্থানীয় জমিদার হাজী মহম্মদ বাদশাহ আলি ১৯৭৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরকে ওই জমি দান করেছিলেন। বাদশাহের জামাই, ৮৮ বছরের হাজি মহম্মদ আব্দুল হামিদের আক্ষেপ, ‘‘অজিতবাবু (তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজা) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক বছরের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি হবে। কিন্তু হয়নি। সিপিএম ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসের জমিতে হাসপাতাল হতে দেয়নি। দেখা যাক তৃণমূল সরকার কী করে। আমরা ওঁদের সঙ্গেও কথা বলেছি।’’ আব্দুল জানান, তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের জমিতে অতি কষ্টে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেটিতে মূলত টিকাকরণের কাজ হয়।
বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ধরন-ধারণে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করেছেন। তার পরে যাত্রাগাছির বাসিন্দাদের আশা, এ বার হয়তো সরকার স্বাস্থ্য দফতরের জিম্মায় থাকা ওই ছ’বিঘা জমির দিকে নজর দেবে।
আব্দুল হামিদ জানান, ছ’বিঘা জায়গার মধ্যে একটি তিন বিঘা পুকুর আছে। বাকিটা ডাঙা। গত বছর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জায়গাটি পরিদর্শনে এসে জানিয়েছিলেন, ডাঙা জমি যা আছে তা হাসপাতাল তৈরির পক্ষে যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘‘পাশেই ইকো পার্কে ৫০০ বিঘার জলাশয় রয়েছে। তাই আমাদের জমির পুকুরটি ভরাট করে হাসপাতাল তৈরি হলে গ্রামবাসীদের অসুবিধা নেই।
বরং তা তৈরি হলে স্থানীয় মানুষই উপকৃত হবেন।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁরা বহু বার শাসক দলের কাছে জমিটি কাজে লাগানোর জন্য দরবার করেছেন। কিন্তু কোনও মহল থেকেই তেমন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘কারও কোনও হেলদোল নেই। নিউ টাউনে নেতা-মন্ত্রীরা এলেও তাঁদের সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয় না। যেখানে সরকার জমি পায় না, সেখানে আমরা জমি দিয়ে হাসপাতালের জন্য সাধাসাধি করছি।’’ স্থানীয় বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের কথায়, ‘‘ আমায় কেউ কিছু জানাননি। ৪০ বছর আগের ঘটনা। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy