Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Howrah Bridge

ম্যাস্টিক তুলে ভার কমানো হবে গঙ্গার দু’দিকের ‘জীবনরেখা’র

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সেতুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পুরনো ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের স্তর সম্পূর্ণ ভাবে তুলে ফেলে ২৫ মিলিমিটার পুরু একটি আস্তরণ দেওয়া হবে।

Howrah Bridge

হাওড়া সেতুতে ‘ডেড লোড’ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ০৮:২৫
Share: Save:

মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে তার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল সেতুর স্থায়ী ওজন বা ‘ডেড লোড’ বৃদ্ধির বিষয়টি। দেখা গিয়েছে, শহরের পুরনো সেতুগুলিতে বার বার পিচের আস্তরণ দেওয়ার ফলে সেগুলির ওজন বেড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে এই সমস্যাটি তাদের রিপোর্টেও উল্লেখ করেছিল ন্যাশনাল টেস্ট হাউস। এ বার হাওড়া সেতুতে ওই আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আগেভাগেই সতর্ক হচ্ছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (কলকাতা বন্দর) কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, হাওড়া সেতুর দেখাশোনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা বন্দর।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সেতুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পুরনো ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের স্তর সম্পূর্ণ ভাবে তুলে ফেলে ২৫ মিলিমিটার পুরু একটি আস্তরণ দেওয়া হবে। শহরে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট এবং পাথরের মিশ্রণ তৈরির ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজারহাট থেকে ওই মিশ্রণ তৈরি করে এনে সেতুর উপরে ঢালবে।

প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৩ মিটার চওড়া হাওড়া সেতুর প্রস্থের দিকে এক-তৃতীয়াংশ এবং দৈর্ঘ্যের দিকে ২০০ মিটার (এক-তৃতীয়াংশ) বন্ধ রেখে ওই সংস্কারের কাজ চলবে। একটি অংশ সম্পূর্ণ হতে তিন দিন লাগবে। এ ভাবে সেতুকে মোট ৯টি অংশে ভাগ করে ২৭ দিন ধরে পুরো কাজ চলবে।

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, এই কাজে ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা খরচ হবে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সেতুর এক-তৃতীয়াংশ বন্ধ রেখে কাজ হবে। এ দিন সঞ্জয় বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-প্রস্তুতি সেরে, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।’’

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজের জেরে হাওড়া সেতুতে যাতে যানজট না হয়, তার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ট্র্যাফিক পুলিশকর্তাদের আশা, মূলত গভীর রাতে ওই কাজ হবে বলে সেতুতে যানজট হবে না।

হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি শৌভিক চক্রবর্তী জানান, রাতের দিকে যাঁরা হাওড়া সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হবে। সেতুর একটি অংশ বন্ধ থাকলেও বাকি রাস্তা দিয়ে দু’দিকের গাড়ি চলাচল করবে। ইতিমধ্যেই তার মহড়া হয়ে গিয়েছে।

১৯৪৩ সালে চালু হওয়া হাওড়া সেতু ‘ব্যালান্সড ক্যান্টিলিভার ব্রিজ’-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ১৮৭০ সালে কলকাতা বন্দর পত্তন হওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ ওই সেতু নির্মাণের কথা ভাবলেও গঙ্গার মতো সদা বহমান নদীতে স্তম্ভ ছাড়া সেতু নির্মাণের বিশেষ প্রযুক্তি খুঁজতেই দীর্ঘ সময় লেগেছে। সেতুর পরিকল্পনা এবং নকশা তৈরি করেছিল সেই সময়ের ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সংস্থা ‘র‍্যান্ডেল, পালমের এবং ট্রিটন’।

ইতিহাস বলছে, হাওড়া সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৫০০ টন ইস্পাত। যার বেশির ভাগ জোগান দিয়েছিল টাটা স্টিল। সেতুর বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়েছিল ব্রেথওয়েট, বার্ন এবং জেসপ কারখানায়। সেতুর দু’পাশে থাকা স্তম্ভের মতো অংশ ছাড়িয়ে নদীর পাড়ের দিকে থাকা অংশই আসলে সেটির মূল ভার বহনকারী অংশ। ওই অংশকে বলা হয় ‘অ্যাঙ্কর আর্ম’।

দু’পাশের দুই অ্যাঙ্কর আর্মের বিপরীতে নদীর দিকে রয়েছে দু’প্রান্ত থেকে সেতুর মাঝখানের দিকে আসা ‘ক্যান্টিলিভার ব্যালান্স আর্ম’। ওই দুই বাহুর উপরে মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে সেতুর একেবারে কেন্দ্রের অংশ। যেখানে সেতুর এক্সপ্যানশন জয়েন্ট রয়েছে। সেতুর ভার এমন ভারসাম্যে প্রতিষ্ঠিত যে, দু’পাশের অ্যাঙ্কর আর্ম যানবাহন-সহ সেতুর ভার বহনে সক্ষম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Bridge Kolkata Port Trust
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE