বিধাননগর পুরসভা এলাকার এক কিশোরের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। চিকিৎসা শুরুর দিন কয়েকের মধ্যেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হল তার দিদি। এক সপ্তাহ পরে দেখা গেল, বাড়ির তিন জন সদস্য একই রোগে কাবু। তার মধ্যে এক জনকে আবার ভর্তি করাতে হল হাসপাতালেও!
ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট। বাথরুমে জল ধরে রাখার রেওয়াজ নেই। বাড়ির টব আর ফুলদানির জলও পাল্টানো হয় নিয়মিত। বাড়ির আশপাশেও কোথাও জমা জল নেই।
তা হলে ডেঙ্গি হচ্ছে কোথা থেকে? শেষমেশ কারণটা খুঁজে পেলেন পরিবারের চিকিৎসক-বন্ধু। জানালেন, মশারি ব্যবহার না করার অভ্যাসই ডেকে এনেছে বিপদ।
বাইপাসে বেসরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে দশটি শয্যার ন’টিতেই এখন ডেঙ্গির রোগী। এক চিকিৎসক তাঁদের প্রশ্ন করে জেনেছেন, সাত জন মশারি ছাড়া ঘুমোন এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠেন দেরিতে। ফলে ঘুমের মধ্যে কখন মশা কামড়েছে, তা টের পাননি। শহরের প্রবীণ চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, মশারি ব্যবহার না করায় কলকাতার অভিজাত এলাকায় ম্যালেরিয়া এক সময়ে প্রায় মহামারীর হয়ে উঠেছিল। শেষে মশারি অভ্যাস ফেরান বাসিন্দারা।
ডেঙ্গির মশা তো রাতে কামড়ায় না। তা হলে মশারি টাঙিয়ে না ঘুমোলে ক্ষতি কী?
চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, বর্তমানে বহু মানুষই নানা প্রয়োজনে রাত জাগেন। ঘুমোতে ঘুমোতে রাত দু’টো পেরোয়, জাগতে সকাল ন’টা। ভোর পাঁচটা থেকে ন’টার মধ্যে সব থেকে সক্রিয় থাকে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা। তাতেই বাড়ছে সমস্যা।
চিকিৎসক সংযুক্তা ভদ্রের মতে, পশ্চিমি জীবনযাপন অনুকরণের আগে আমাদের দেশের পরিবেশ, অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া দরকার। তা না হলে পশ্চিমের দেশগুলির বাসিন্দাদের মতো মশারির ব্যবহার না করলে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো রোগের সংক্রমণ আরও বাড়বে।
পতঙ্গবিদেরা বলছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তকে কামড়ানোর পরে সেই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে ডেঙ্গি ছড়াতে পারে। ডেঙ্গি আক্রান্তকে মশা কামড়ানোর পরে দিন সাতেকের মধ্যে মশার লালাগ্রন্থিতে ডেঙ্গির ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে। তাই ওই মশা সপ্তাহখানেক পরে কাউকে কামড়ালেও তাঁর ডেঙ্গি সংক্রমণ হতে পারে। এই কারণেই ডেঙ্গি আক্রান্তকে মশারি মধ্যে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং পতঙ্গবিদ অমিয় হাটি বলছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তের থেকে সংক্রমণ রুখতে মশারি কার্যকর। জ্বর হলে ডেঙ্গি কি না, সেই রিপোর্ট আসার আগেই রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। অন্তত প্রথম তিন দিন তাঁকে মশারির মধ্যে রাখা খুব জরুরি। কারণ, প্রথম তিন দিনেই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।’’ অমিয়বাবুর সঙ্গে একমত পরজীবি-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘মশা বাহিত রোগের দাপট কমাতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা খুব জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy