২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগে রাস্তায় যান সচল, তবে গণপরিবহণ হাতেগোনা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
বিকেলে ধর্মতলায় তৃণমূলের সভা শেষ হওয়ার পরেও কোথাও তেমন যানজটের খবর নেই। রাস্তায় মোটের উপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গান্ধী রোড থেকে শিয়ালদহের দিকে যাওয়ার রাস্তা, ধর্মতলামুখী রাস্তা, থিয়েটার রোড, লেনিন সরণিতে কোথাও ট্র্যাফিকের সমস্যা নেই। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ফিরছেন। কিন্তু তার জন্য যানজট তেমন হচ্ছে না। অফিসের সময় না হওয়ায় এই সময়ে নিত্যযাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকার ভিড়ও নেই।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সোমবার পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণের প্রশংসা করেছেন। জানিয়েছেন, পুলিশ ভাল কাজ করেছে। ভাল ভাবে যান নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আদালতে এক আইনজীবী জানান, অন্যান্য দিনে নিউ আলিপুর থেকে হাই কোর্টে পৌঁছোতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। সোমবারও তা-ই লেগেছে। তখন বিচারপতি ঘোষ জানান, স্বাভাবিক সময়ই লেগেছে। রাস্তায় ট্র্যাফিকের কোনও সমস্যা নেই।
ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ শুরুর আগে যান নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করেছিল। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মধ্য কলকাতায় যান সচল ছিল। হাই কোর্ট পুলিশের কাজের প্রশংসা করেছে।
তৃণমূলের সভার কারণে রাস্তায় গাড়ি কম। গণপরিবহণ না পেয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। যে ক’টি হাতেগোনা বাস চলছে মধ্য কলকাতায়, সেগুলিতে প্রচুর ভিড়। অনেকে উঠতে পারছেন না। শিয়ালদহ থেকে মৌলালির রাস্তায় যানজট রয়েছে। শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা জানান, তিনি জগদ্দল থেকে এসেছেন। যেতে চান কমান্ড হাসপাতালে। কিন্তু আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়েও কোনও গাড়ি পাচ্ছেন না। সল্টলেক থেকে মেট্রোয় শিয়ালদহ পর্যন্ত পৌঁছেছেন বিনীতা সিংহ। কিন্তু সেখান থেকে মিন্টোপার্ক পর্যন্ত আর যেতে পারছেন না। বাস নেই। এমনকি, অ্যাপ ক্যাবও মিলছে না বলে দাবি। হাতিবাগান থেকে শোভাবাজার পর্যন্ত অটোতে আসতে পারলেও ডালহৌসির বাস পাচ্ছেন না, জানান আর এক নিত্যযাত্রী। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ২০ মিনিটের বেশি।
শিয়ালদহের দিক থেকে মৌলালি হয়ে অনেকে হেঁটে ধর্মতলার দিকে যাচ্ছেন। তার জন্য মৌলালির রাস্তায় ট্র্যাফিক কিছুটা থেমে থেমে চলছে। রাস্তার ধারে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণ করছে। এক বার লোকজনকে ছাড়া হচ্ছে, এক বার গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। তৃণমূলের সাহায্য-ক্যাম্প থেকে হাই কোর্টের নির্দেশ মানার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। শিয়ালদহ থেকে শ্যামবাজারের দিকে যানজট নেই।
তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তাতেই রান্নার আয়োজন করেছেন। মল্লিকবাজার থেকে মৌলালির দিকের রাস্তায় রান্না চলছে ব্যারিকেড করে। গাড়ি থেমে থেমে এগোচ্ছে।
মল্লিকবাজার থেকে মৌলালি যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড করে চলছে রান্না। সোমবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র।
২১ জুলাই তৃণমূলের সভাকে কেন্দ্র করে শহরে ভিড় রয়েছে। তবে মধ্য কলকাতায় যানজট নেই এখনও। ধর্মতলা, রাজভবনের দিক থেকে মা উড়ালপুলের দিকের রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে। শেক্সপিয়ার সরণি অন্যান্য দিনের তুলনায় ফাঁকা। একাধিক রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড করে দিয়েছে। গাড়ি অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় বাস বা গণপরিবহণ বেশ কম। এর ফলে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাঁরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন, তাঁদের ভরসা ভিড় বাস কিংবা মেট্রো। মেট্রোতেও সকাল থেকে ভিড়।
সোমবার সকালে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টস্ ফাঁকা। —নিজস্ব চিত্র।
অভিনব স্লোগানে সেজেছেন তৃণমূল সমর্থক। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্তও শহরের রাস্তাঘাটে তেমন যানজট নেই। তবে বাস কম চলছে। ফলে বাসে ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি রাস্তায় আছেন তারকেশ্বরগামী পুণ্যার্থীরা। প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
রাস্তায় বসে খাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনে সোমবার সকাল থেকে তৃণমূল সমর্থকদের ভিড়। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা ট্রেনে কলকাতায় পৌঁছোচ্ছেন। তৃণমূলের ফ্লেক্স, পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে রাস্তাঘাট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় কাট-আউট বসানো হয়েছে স্টেশন চত্বরে।
ধর্মতলায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা কলকাতায় আসছেন। অনেকেই চলে এসেছেন রবিবার। এমনকি, রাত ১২টা-১টা থেকে অনেকে ধর্মতলার মঞ্চের কাছে বসে আছেন।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে রাস্তায় বসে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
লালবাজারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২১ জুলাই ভোর ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বেশ কিছু রাস্তায় যাত্রিবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমহার্স্ট স্ট্রিট (উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী), বিধান সরণি (কেসি সেন স্ট্রিট থেকে বিবেকানন্দ রোড পর্যন্ত), কলেজ স্ট্রিট (দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী), ব্রাবোর্ন রোড (উত্তর থেকে দক্ষিণে), স্ট্র্যান্ড রোড (হেয়ার স্ট্রিট থেকে রাজা উডমুন্ট স্ট্রিট পর্যন্ত), বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট (পূর্ব থেকে পশ্চিমে), বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট (দক্ষিণ থেকে উত্তরে), নিউ সিআইটি রোড (পশ্চিম থেকে পূর্বে) এবং রবীন্দ্র সরণির (বিকে পাল অ্যাভিনিউ থেকে লালবাজার স্ট্রিট পর্যন্ত) রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রিত থাকবে পাঁচ ঘণ্টা।
সকাল ৮টা পর্যন্ত মিছিল করা যাবে। সকাল ৯টার মধ্যে মিছিল যেখানে থাকবে, সেখানেই রাশ টানতে (সেটল ডাউন) হবে। পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শহরে কোনও যানজট না হয়। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, কলকাতা হাই কোর্ট যাওয়ার রাস্তা, মধ্য কলকাতা এবং তার আশপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকায় কোনও যানজট যাতে না-হয়, কলকাতার পুলিশ কমিশানরকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা এলাকার জন্য এই নির্দেশ। বেলা ১১টার পরে আবার স্বাভাবিক গতিতে এগোবে কর্মসূচি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy