E-Paper

তীব্র গরমে কলকাতা এবং তার আশপাশের অঞ্চলে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, নাভিশ্বাস জনতার

তীব্র গরমে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা গোটা দক্ষিণবঙ্গের। তার উপরে গত দু’-তিন দিন ধরে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় নাগাড়ে চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। যার জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৭
A Photograph representing load shedding

একা গরমে রক্ষে নেই, লোডশেডিং দোসর। প্রতীকী ছবি।

একা গরমে রক্ষে নেই, লোডশেডিং দোসর!

তীব্র গরমে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা গোটা দক্ষিণবঙ্গের। তার উপরে গত দু’-তিন দিন ধরে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় নাগাড়ে চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। যার জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এক দিকে গরমের মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় পানীয় জলের হাহাকার। সেই সঙ্গে দফায় দফায় লোডশেডিং। এই ত্র্যহস্পর্শে সব থেকে খারাপ অবস্থা শিশু ও প্রবীণদের। বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন অনেকেই। এমনকি, ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে ফুটপাতে গিয়েও শুচ্ছেন। রোগীদের অবস্থা আরও কাহিল। বেলঘরিয়া, নিমতা, দক্ষিণেশ্বর, সিঁথি, হরিদেবপুর, বাঘা যতীন ও বেহালার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নাজেহাল অবস্থা।

কেন হচ্ছে এমন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট? সিইএসসি-র এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের ভান্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ রয়েছে। এটা বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয় নয়। আসলে গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের এমনিতে যতটা পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি বিদ্যুৎ লাগছে। যাঁরা একটি এসি চালান, তাঁরা হয়তো একাধিক এসি চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক সামগ্রী বেশি করে ব্যবহার করায় যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই যতটা বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য আবেদন করেছেন, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি ব্যবহার করছেন। সেই কারণেই কিছু এলাকায় এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।’’ সিইএসসি-র আবেদন, ‘‘বাড়িতে বৈদ্যুতিক সামগ্রী (আলো, পাখা, এসি) হিসাব করে ব্যবহার করুন।’’

রবিবার রাত সাড়ে ১১টার পরে কলকাতা পুরসভার ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডে হরিদেবপুরের ব্যানার্জিপাড়া, চ্যাটার্জিবাগানের বিস্তীর্ণ এলাকায় লোডশেডিং হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিইএসসি-র সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও রাতে কেউ আসে‌ননি। ব্যানার্জিপাড়া ও চ্যাটার্জিবাগান মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার মানুষের বাস। রবিবার রাতভর বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের জেরে তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েন।পরদিন সকালেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সকাল ৯টা নাগাদ ব্যানার্জিপাড়া মোড় অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পুরসভা এলাকায় জলের গাড়ি পাঠায়। কিছু ক্ষণ পরে সিইএসসি-র কর্মীরা এসে কাজ শুরু করেন। দুপুর দেড়টায় বিদ্যুৎ ফিরে আসে। চ্যাটার্জিবাগানের বাসিন্দা মিঠু চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘রাতে একাধিক বার সিইএসসি-কে ফোন করেও লাভ হয়নি। তাই রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হই। আমার বৃদ্ধা মা সদ্য চোখের অস্ত্রোপচার করিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রাতভর লোডশেডিংয়ে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ চ্যাটার্জিবাগানে একাধিক ক্যানসার ও হার্টের রোগী রয়েছেন। তাঁরাও গরমে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

রবিবার রাত ২টো থেকে নিমতা ও বেলঘরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ দিন সকালে ঘণ্টাখানেকের জন্য বিদ্যুৎ এলেও ফের গোটা এলাকায় লোডশেডিং হয়। দুপুর থেকে নিমতা ও বেলঘরিয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বেলঘরিয়ায় বৃদ্ধ বাবা ও শিশুপুত্রকে নিয়ে সারা রাত জেগে কাটাতে হয়ে মনোজ মুখোপাধ্যায়দের। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আবাসনে প্রায় সকলেই রাত জেগেছেন। আমপানের পরে এই প্রথম এত বড় বিদ্যুৎ-বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লাম।’’

প্রবল ভোগান্তি হচ্ছে দক্ষিণেশ্বর এলাকাতেও। তিন দিন ধরে বিক্ষিপ্ত ভাবে লোডশেডিংয়ের কবলে দক্ষিণেশ্বর মন্দির সংলগ্ন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে ভোগান্তি। নববর্ষের সকালে বিদ্যুৎ এলেও দুপুর থেকে আবার এক অবস্থা। দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা দোয়েল তরফদার জানান, বাবা ও কাকা হার্টের রোগী। গরমে ওঁরা ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সিঁথিতেও গত শুক্রবার রাতভর লোডশেডিংয়ে নাজেহাল হন বাসিন্দারা। শনিবার রাতেও দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে।

শনিবার রাতে ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভুবনমোহন রায় রোডে একটি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়ে। যার জেরে ভুবনমোহন রায় রোড, রাহা কলোনি, গ্রিন পার্ক ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় রাতভর বিদ্যুৎ ছিল না। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিযোগ, শনিবার রাতে সিইএসসি-র সাহায্য চেয়েও মেলেনি। রবিবার দিনভর সিইএসসি জেনারেটরের ব্যবস্থা করলেও চাহিদা পুরো মেটেনি। এ দিন সকাল থেকে ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ, অর্থাৎ জেলায় বিদ্যুতের কোনও সমস্যা নেই। কলকাতা ও আশপাশের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট কেন হয়েছে, তা জানতে সিইএসসি-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

LOAD SHEDDING Power Cut summer hot temperature

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy