E-Paper

বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সিইএসসির ‘বাঁধা গতে’ বিরক্ত শহরবাসী

কোথাও পেরিয়ে গিয়েছে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। কোথাও বিদ্যুৎ নেই ১২ ঘণ্টারও বেশি। কোথাও আবার বিকেলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে ফেরেনি পরদিন ভোরেও!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ০৭:১১
An image of power cut

—প্রতীকী চিত্র।

বিদ্যুৎ নেই। ফ্রিজ বন্ধ। মায়ের ইনসুলিন কোথায় রাখবেন, জানেন না! বাবাও হৃদ্‌রোগী। খুব কষ্ট পাচ্ছেন দু’জনেই। বাবা-মায়ের এই দুর্বিষহ অবস্থা দেখে সিঁথি অঞ্চলের বাসিন্দা সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘কোনও মৃত্যু না হলে বোধহয় পরিস্থিতি বদলাবে না।’’ তাঁর এই আকুতির মতো শহরের বিদ্যুৎহীন বাসিন্দাদের অনেকে শনিবারেও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে।

কোথাও পেরিয়ে গিয়েছে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। কোথাও বিদ্যুৎ নেই ১২ ঘণ্টারও বেশি। কোথাও আবার বিকেলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে ফেরেনি পরদিন ভোরেও! জ্বালাপোড়া গরমে শহরের কিছু জায়গায় এবং কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় যেন থামছেই না! সমাজমাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। এ-ও লিখছেন, দ্রুত পরিস্থিতি বদলাতে সরকার কেন পদক্ষেপ করছে না? সিইএসসি-কর্তারা শনিবারেও গ্রাহকদের একাংশের উপরে দোষ চাপিয়ে বলেছেন, নতুন কেনা অনুমোদনহীন শীতাতপ যন্ত্রের (এসি) জন্যই এই বিপর্যয়!

গত সোমবার থেকে ছ’দিনে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সব চেয়ে বেশি অভিযোগ সামনে এসেছে উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার সংলগ্ন এলাকা থেকে। দমদম, নাগেরবাজার, দমদম পার্ক, দমদম ক্যান্টনমেন্ট-সহ উত্তরের একাধিক অংশে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ থাকছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। একই অবস্থা হরিদেবপুর, বাঁশদ্রোণী, তিলজলা ও বন্দর এলাকার কিছু জায়গায়। জয়তী পাল নামে দমদমের এক বাসিন্দা এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎহীন। সিইএসসি-র হেলদোল নেই। অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না! বরং শুধুই বাঁধা গৎ আউড়ে চলেছেন কর্তৃপক্ষ।’

বাগুইআটির সোহিনী সোম ফোনে বললেন, ‘‘গোটা মাস জুড়ে এমনটা চলছে। অভিযোগ করতে করতে ক্লান্ত। জোড়াতাপ্পির কাজ হিসাবে জেনারেটর লাগিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে। পথে নেমে রীতিমতো সিইএসসি কর্মীদের ধরে আনতে হচ্ছে।’’ যাদবপুরের বাসিন্দা নিমাই সাঁতরার অভিজ্ঞতা, ‘‘পাড়ার অনেকেই রাতে রাস্তায় চাদর পেতে শুয়েছেন। এই গরমে খুব খারাপ কিছু না ঘটলে মনে হয় হুঁশ হবে না!’’ বরাহনগরের এক বাসিন্দা আবার একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে আগুন লাগার ছবি-সহ লিখেছেন, ‘নরক-যন্ত্রণা। মূল কলকাতাকে ঠিক রাখতেই কি তবে আমাদের সঙ্গে এটা ঘটছে?’

সিইএসসি-র এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস) অভিজিৎ ঘোষ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘জায়গা ভেদে সমস্যা দেখি না আমরা। সর্বত্রই সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, চলতি গরমের মরসুমে প্রায় ২.৫ লক্ষ এসি বিক্রি হয়েছে। অথচ, ‘লোড এক্সটেনশন’ আবেদনপত্র সিইএসসি-তে জমা পড়েছে ৫৫ হাজার। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশ এসি ব্যবহার হচ্ছে বরাদ্দের চেয়ে বেশি বিদ্যুতে।

তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর যেখানে কলকাতায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২৩৩৯ মেগাওয়াট, সেখানে গত বৃহস্পতিবার রাতেই তা ছাপিয়ে পৌঁছেছিল ২৩৪৯ মেগাওয়াটে। দিনে এই চাহিদা ছিল ২,৫৮৫ মেগাওয়াট। শুক্রবার এটাও ছাপিয়ে চাহিদা হয়েছে ২৬০৬ মেগাওয়াট। এত বছরে যা সর্বোচ্চ। শুক্রবার রাতে চাহিদা ছিল ২৩২৪ মেগাওয়াট।’’ অভিজিৎ জানান, বেশির ভাগ জায়গা থেকেই রাতে বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ আসছে। এর কারণ, রাতে এসির ব্যবহার বাড়ে। তাঁর মতে, ‘‘বরাদ্দ মাত্রার বেশি বিদ্যুতের ব্যবহার হলেই যন্ত্র ভাবছে ওভারফ্লো হচ্ছে। এখন বিশেষ ব্যবস্থায় ওভারফ্লো বুঝলে যন্ত্রই সংযোগ বন্ধ করে। নয়তো বিপদ ঘটতে পারে।’’

ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, বিদ্যুতের বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন না করে এসি চালালে পদক্ষেপ করার কথা তো সিইএসসি-রই? যিনি বৈধ ভাবে সবটা করছেন, তিনি ভুগবেন কেন? সিইএসসি-কর্তারা বলছেন, ‘‘বরাদ্দ বাড়িয়ে অনুমোদন নেওয়ার আবেদন ছাড়া আইনত কিছু করা যায় না! অগত্যা গ্রাহকের সচেতনতাই বড় ভরসা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Power Cut LOAD SHEDDING CESC Electric Supply

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy