সমস্যা: দোকানে নেই ক্রেতা। রমেশ দত্ত স্ট্রিটে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বাঁশ কেটে যে কোনও ধরনের কাঠামো তৈরি করতে ওঁরা দক্ষ। সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বাঁশের গেট থেকে শুরু করে বাঁশের তৈরি নানা সাজানোর উপকরণও বানান ওঁরা। তবে ভোটের ক’টা দিন ওঁরা সব ছেড়ে বাঁশ কেটে তৈরি করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক। বাঁশ দিয়ে ঘাসফুল, পদ্মফুল, কাস্তে-হাতুড়ি অথবা কাঠামোয় হাত চিহ্ন বানাতে দক্ষ ওঁরা। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটের ছবিটা কিছুটা অন্য রকম। এখনও পর্যন্ত সে ভাবে এই কাজের বরাত পাননি তাঁরা।
গিরিশ পার্কের কাছে রমেশ দত্ত স্ট্রিটের ফুটপাতে বসেছিলেন এক শিল্পী বাদল সিংহ। একটি রাজনৈতিক দলের কয়েক জন যুবক মোটরবাইকে চেপে আসতেই তাঁদের ঘিরে ধরলেন বাদলবাবু-সহ আরও কয়েক জন শিল্পী। তবে ওই যুবকেরা জানালেন, প্রতীকের বরাত নয়, তাঁরা পতাকার জন্য বাঁশের কঞ্চি নিতে এসেছেন। দৃশ্যতই হতাশ হলেন বাদলবাবুরা। ওই যুবকেরা জানালেন, তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের উত্তর কলকাতার প্রার্থীর হয়ে প্রচারের কাজ করছেন। এখনই বাঁশের তৈরি প্রতীক বানিয়ে তা নিয়ে প্রচার করার পরিকল্পনা তাঁদের নেই। ওই যুবকেরা জানালেন, বাঁশের তৈরি এই সব জিনিসের দাম এখন বেড়ে গিয়েছে। তাই এখনও পর্যন্ত তাঁরা দেওয়াল লিখনের মাধ্যমেই প্রচারেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন।
অন্য এক শিল্পী রামেশ্বর সাউ জানাচ্ছেন, বাঁশের দাম এখন বেশ চড়া। রামেশ্বর বলেন, ‘‘একটি বাঁশের দাম আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা। ওই বাঁশ কেটে প্রতীক বানানোর খরচ অন্যান্য বারের থেকে এ বার একটু বেশিই। তাই হয়তো অনেকে প্রতীক বানানোর দিকে হাঁটছেন না। অন্য ভাবে প্রচার করার কথা ভাবছেন।’’ তবে শুধু চড়া দামই নয়, নির্বাচন কমিশন এ বার পরিবেশ দূষণ কমাতে ফ্লেক্স ব্যবহার কমাতে নির্দেশ দিয়েছে। অসিত ঘাটি নামে এক শিল্পী জানান, ওই নির্দেশের জেরে বড় বড় ফ্লেক্স তৈরির জন্য যে বাঁশের কাঠামো লাগত, সেগুলি বানানোও তাই কমে গিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
খাস কলকাতার ভোট ১৯ মে হলেও কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া বা অন্যান্য কয়েকটি জেলার ভোট তার বেশ কিছুটা আগেই। তাই বাঁশের তৈরি নানা প্রতীক তৈরির বরাত এত দিনে এসে যাওয়ার কথা ছিল। ভরত মাইতি নামে এক শিল্পী বলেন, ‘‘আগে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আমাদের কাছে চলে আসতেন। কত বড় বড় সব প্রতীক তৈরির বরাত দিতেন। বারো ফুট, তেরো ফুটের প্রতীকও তৈরি করেছি।’’ শিল্পীরা জানালেন, এমন প্রতীক তৈরি করতেও সময় লাগে। তাই শেষ মুহূর্তে প্রতীক তৈরির বরাত পেলে তাড়াহুড়োয় কাজ ভাল হবে না।
তবে এই সব শিল্পীদের মতে, এখনও প্রচার তুঙ্গে ওঠেনি। খাস কলকাতার ভোট আসতে একটু দেরিই আছে। মিটিং-মিছিল বাড়লে বড় বড় প্রতীকের চাহিদা বাড়বে বলে আশা তাঁদের। সেই দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন রমেশ দত্ত স্ট্রিটের শিল্পীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy