প্রচারে মিমি চক্রবর্তী। গলা ঠিক রাখতে বক্তৃতার মধ্যে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। নিজস্ব চিত্র
জনসভায় বক্তৃতা করতে করতে গলা ভেঙে গিয়েছিল। এমনিতে বক্তৃতার অভ্যাস আছেই। কিন্তু সারাদিন জনসভা থেকে শুরু করে দলীয় বৈঠক, কথা বলার মাত্রাটা একটু বেশিই থাকে এই সময়টায়। নির্বাচনী প্রচার বলে কথা! আর তাতেই গলাটা ভেঙে গিয়েছিল। সামান্যতম ঝুঁকি না নিয়েই চিকিৎসককে ফোন করেছিলেন ওই প্রার্থী। বলেছিলেন, ‘‘চেম্বারে আসব? একটু দেখে দিতে পারবেন?’’ চিকিৎসক হ্যাঁ বলার পরেই তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছিলেন তিনি।
শুধু ওই প্রার্থীই নন, ভাঙা বা বন্ধ গলা নিয়ে ভোটের মরসুমে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেক রাজনৈতিক প্রার্থীই। কারণ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা করতে হচ্ছে যে! আর তাতেই কারও গলা বুজে যাচ্ছে, কারও আবার সাময়িক ভাবে ভেঙে যাচ্ছে। এ হেন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ, যে ভাবে খাওয়া-দাওয়া, গরম সব দিকে লক্ষ্য রাখছেন, তেমন ভাবেই গলার যত্ন নিন! কারণ, নির্বাচনী প্রচারের সময়ে রাজনৈতিক প্রার্থীদের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কথা বলতে হয়। স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক বেশি চিৎকারও করতে হয় নির্বাচনী পারদ চড়ানোর জন্য। আর তার চাপ পড়ে কণ্ঠস্বরে।
ইএনটি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘ভয়েস প্রফেশনাল’দের এমনিতেই গলার যত্ন নিতে হয়। ধারাবাহিক ভাবে পরামর্শ মেনে চলতে হয়। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই গলার উপরে বাড়তি চাপ পড়ে। গলার অতিরিক্ত ব্যবহার হয়। আর তখনই দেখা দেয় সমস্যা। যেমনটা দেখা গিয়েছে এ বার শাসকদলের এক প্রার্থীর ক্ষেত্রে। তিনি বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষণ বক্তৃতার পরে গলাটা বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছিল। তখনই গিয়ে ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। না হলে বুঝতে পারছিলাম পরের জনসভায় যেতেই করতে পারব না।’’
ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা বলছেন, ‘‘কিছু রোগীর কাছে তাঁদের গলাটাই তাঁদের পেশা। নির্বাচনী প্রচারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের এমনিতেই গলার উপরে চাপ পড়ে খুব। বড় রাজনীতিকেরা তো বটেই, ছোট নেতারাও এই সময়ে গলা দেখাতে আসেন। কারণ, আমরা যতটা অন্য কিছুর যত্ন নিই, ততটা গলার যত্ন নিই না।’’
ইএনটি বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা ২০ মিনিট কথা বলার পরে একটু হলেও গলার বিশ্রাম প্রয়োজন। হয়তো এমন দেখা গেল যে জনসভায় ২০ মিনিটের বেশি বলতে হচ্ছে, তখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলে গলা ভিজিয়ে নেওয়া ভাল। তবে ঠান্ডা জল একেবারেই না। সব সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল খেতে হবে। শান্তনুবাবুর কথায়, ‘‘ভোকাল কর্ডের ভাল ওষুধ হল জল। ফলে জল খেতে হবে। আর জনসভার পরে বাড়ি ফিরে গরম জলের ভাপ নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়।’’ বামেদের লোকসভার এক প্রার্থী জানাচ্ছেন, ‘‘সারাদিন ধরে কথা বলতে গেলে গলায় চাপ পড়েই। অনেক সময় এমনও হয় যে হয়তো চিৎকার করতে ভাল লাগছে না, কিন্তু আবেগের বশে কখন যে চিৎকার করে ফেলেছি, সেটা বুঝতে পারিনি।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এটা স্বাভাবিক যে বক্তৃতা করার সময়ে কত জোরে চিৎকার করে বলা হচ্ছে, সে দিকে খেয়াল থাকে না। আবেগই তখন গলার স্বর বা বাচনভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তা করতে গিয়েই তৈরি হয় সমস্যা। এক ইএনটি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এমন নেতাও এসেছেন যাঁর ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিৎকার করতে গিয়ে। তখন ওই নেতাকে গলার বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। ওষুধ দিতে হয়েছে।’’
ইএনটি চিকিৎসক দুলালচন্দ্র দাস আবার জানাচ্ছেন, প্রচারের সময়ে বক্তৃতা করতে করতে রাজনীতিকদের গলার স্বর পাল্টে যায়। গলার স্বাভাবিক আওয়াজ হারিয়ে অনেকটা রুক্ষ হয়ে যায়। অতীতে এক জন তারকা-রাজনীতিকের এ রকমই
একটি সমস্যা হয়েছিল। বক্তৃতা করে গলা বুজে এসেছিল। তখন
সংশ্লিষ্ট তারকা-রাজনীতিককেও একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। দুলালবাবুর কথায়, ‘‘একটি জনসভা থেকে আর একটি জনসভায় যাওয়ার আগে যতটুকু সময় হাতে পাওয়া যায়, ততটুকু সময় কারও সঙ্গে কথা না বলাই ভাল। কারণ, ওই বিশ্রামটুকু গলার পক্ষে জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy