Advertisement
E-Paper

অশান্তির আশঙ্কায় রয়েছে বহু এলাকাই

যে দাগি দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হয়নি, তাদের আজ, রবিবার ভোট শুরুর আগে থানায় হাজির করাতে বলা হয়েছে। হাজতবাস না-হলেও ভোটের দিন শহরে ‘ভূতেরা’ তাণ্ডব করতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০২:০০
কর্তব্য: ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার আগে কলকাতা পুলিশের বাহিনী। শনিবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে। ছবি: সুমন বল্লভ

কর্তব্য: ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার আগে কলকাতা পুলিশের বাহিনী। শনিবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে। ছবি: সুমন বল্লভ

কলকাতার ভোটে ‘ভূতেরা’ বোতলবন্দি হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। শেষ লগ্নে এসে কড়া দাওয়াইয়ের কথাই বাতলে দিল নির্বাচন কমিশন। পুলিশের খবর, শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, পুলিশকেও এই কাজে লাগাতে চেয়েছেন কমিশনের কর্তারা। শুক্রবার রাতে পুলিশের কাছে থানাওয়াড়ি দুষ্কৃতী-তালিকা পাঠিয়েছে কমিশন। যে দাগি দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হয়নি, তাদের আজ, রবিবার ভোট শুরুর আগে থানায় হাজির করাতে বলা হয়েছে। হাজতবাস না-হলেও ভোটের দিন শহরে ‘ভূতেরা’ তাণ্ডব করতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। এর পাশাপাশি, সব থানায় তাদের এলাকার স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্র ও বুথের তালিকা পাঠানো হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘কুইক রেসপন্স টিম’-কে ওই বুথ বা ভোটকেন্দ্র শনিবার চিনিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এর ফলে বাহিনী গোলমালের খবর পেলে দ্রুত সেখানে পৌঁছতে পারবে। আজ, রবিবার ভোর থেকেই হাওড়া ব্রিজ, বালি ব্রিজ ও বিদ্যাসাগর সেতুতে তল্লাশি চলবে। বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। শনিবার কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন হোটেলে হানা দিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

কোন কোন এলাকায় গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে?

কলকাতা

কাশীপুর: ২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৫ সালের পুরসভা ভোটে বুথ দখল ও ভোট লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। বোমাবাজির ইতিহাসও রয়েছে এই এলাকায়। এখানে একই দলের দুই পরস্পর-বিরোধী মস্তানবাহিনী সক্রিয়। এ বারও সেই মস্তানদের গ্রেফতার করা হয়নি। কাশীপুর এলাকায় ‘ছাত্রনেতা’ হিসেবে পরিচিত এক দুর্বৃত্ত সক্রিয় রয়েছে।

জোড়াবাগান-পোস্তা-গিরিশ পার্ক: ২০১৫ সালের পুর ভোটের দিন দুষ্কৃতীদের হাতে গিরিশ পার্কে গুলিবিদ্ধ হন সাব-ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল। পুর ভোটে জোড়াবাগান এলাকায় ভোট লুটের অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। জোড়াবাগান-পোস্তা-গিরিশ পার্কে শাসক-বিরোধী শক্তিও কম নয়। ফলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তাপও রয়েছে সেখানে।

বেলেঘাটা-এন্টালি: ভোটের নিরিখে চিরকালই ‘কুখ্যাত’ এই এলাকা। গত লোকসভা এবং পুর ভোটে এই এলাকায় ‘নস্কর বাহিনী’ এবং ‘শঙ্কর ফৌজ’-এর বিরুদ্ধে দাপিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। গত বিধানসভা ভোটে এই এলাকাতেই সব থেকে বেশি সক্রিয় হতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশকে। এ বারও দুই বাহিনীর চাঁইরা পুলিশের নাগালের বাইরে রয়েছে বলে খবর। এন্টালির মতিঝিল বস্তি-সহ একাধিক এলাকাও উত্তেজনাপ্রবণ।

নারকেলডাঙা: দুষ্কৃতীদের দাপট ও গোলমালের নিরিখে এই এলাকা ‘কালো তালিকাভুক্ত’। প্রায় সব ভোটেই এখানে গোলমালের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠীকোন্দলও রয়েছে। তৃণমূলের পাশাপাশি সম্প্রতি বিজেপি-ও ওই এলাকায় শক্তি বাড়িয়েছে।

ধাপা-বানতলা: দক্ষিণ ২৪ পরগনা লাগোয়া এই এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রয়েছে। গত লোকসভা ও পুর ভোটে এই এলাকায় গোলমাল হয়েছিল। গোলমাল করে পালানোর ক্ষেত্রেও দুষ্কৃতীরা এই পথ বেছে নেয়।

শহিদ স্মৃতি কলোনি: পূর্ব যাদবপুরের এই এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রে ছ’টি বুথ রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সেখানে মেরেধরে ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছিল। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধেও। ২০১৬ সালে ভোটের আগেও ওই কলোনির বাসিন্দাদের উপরে রাতভর হামলা চালানোর অভিযোগ ছিল।

তিলজলা-কসবা: ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই এলাকায় ভোটে গোলমাল হয়েছিল। ২০১৬ সালে গোলমাল না হলেও কয়েকটি বুথে রীতিমতো ভোট লুট হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশেরই খবর, এই এলাকায় দুর্বৃত্তেরা এখনও ছাড়া রয়েছে।

পাটুলি: ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে গোলমাল হয়েছিল। কিন্তু সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ২০১৫ সালের পুর ভোট। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, একের পর এক ওয়ার্ডে ভোট লুট করেছিল দুষ্কৃতীরা। পুলিশের দাবি, এ বারও কয়েক জন দুষ্কৃতী ‘ভোটের কাজে’ জেলায় গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যথেষ্ট স্পর্শকাতর এই এলাকা।

কলকাতা বন্দর: এই এলাকায় কলেজের নির্বাচনেও গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশ অফিসারের মৃত্যু ঘটেছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এখানে বেশির ভাগ বুথেই কার্যত ভোট হয়নি বলে বিরোধীদের দাবি। বন্দর এলাকা এমনিতেই গোলমালের জন্য কুখ্যাত। তার উপরে এক সময়ের কংগ্রেস এবং অধুনা বিজেপি-র সদস্য এক নেতার হাত ধরে শক্তি বাড়িয়েছে বিরোধীরা। ফলে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে বলেই দাবি পুলিশের একাংশের।

নিউ টাউন ও রাজারহাট

যাত্রাগাছি-গৌরাঙ্গনগর: গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি বনাম তৃণমূলের সংঘাতে উত্তাল হয়েছিল এই এলাকা। দু’পক্ষের ইটবৃষ্টিতে আহত হয়েছিলেন কয়েক জন। পুলিশও আক্রান্ত হয়েছিল। সেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি বাসিন্দাদের। এ বারও টক্কর হবে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর।

থাকদাড়ি ও মহিষগোট: এই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সুবিদিত। তার উপরে রয়েছে ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেটের ঝামেলাও। বারবার ভোটে তার প্রভাব পড়েছে। গত লোকসভা ও পুর ভোটে সিন্ডিকেট-বাহিনীর দাপাদাপি এখনও চোখে ভাসে বাসিন্দাদের। এ বারও সেই বাহিনী কী করবে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

কদমপুকুর: এই এলাকায় তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি এবং সিপিএম-ও শক্তিশালী। পঞ্চায়েত ভোটে বুথ জ্যাম, ছাপ্পা ভোট এবং তা ঘিরে গোলমালের ইতিহাস রয়েছে। এ বার লোকসভা ভোটের আবহেও এই এলাকা উত্তপ্ত। ভোটের দিন কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত বাসিন্দারা।

সল্টলেক ও উত্তর শহরতলি

এবি, এসি, বিডি, এফডি ব্লক: ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে প্রবল গণ্ডগোল হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিকেরা। সেই ঘটনায় নিন্দার ঝড় বয়েছিল। ২০১৬ সালের ভোটে হাঙ্গামা না-হলেও আতঙ্ক কাটেনি বাসিন্দাদের। শান্তিপূর্ণ এই এলাকায় বহিরাগতেরাই ঝামেলা পাকায়।

দত্তাবাদ: ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে দু’টি ওয়ার্ড জুড়ে রয়েছে দত্তাবাদ। সেখানে গত কয়েকটি নির্বাচনে গোলমাল না হলেও শাসক দলের বিভাজন স্পষ্ট। পাশাপাশি, ভোটের দিন বাইপাস পেরিয়ে বাইরের দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঢোকে বলে অভিযোগ।

সুকান্তনগর-কুলিপাড়া-মহিষবাথান: এই এলাকা ভোটের নিরিখে চিরকালই কুখ্যাত। বিধাননগর পুরসভার ২৮, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে একাধিক বার গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। তার বাইরেও শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে কড়া হতে বলেছেন বাসিন্দারা।

দক্ষিণ দমদম-দমদম-উত্তর দমদম: এ বারই নাগেরবাজারে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। বাগজোলা খাল সংলগ্ন এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রমোদনগরে একাধিক বার তৃণমূল ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে জগৎপুর খালের ধারে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। চণ্ডীবেড়িয়া, ন’নম্বর ক্যাম্প ও সাত নম্বর ক্যাম্পেরও একই অতীত রয়েছে। বারোয়ারিতলা-মিশন বাজারে গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে এজেন্ট বসাতে পারেনি বিরোধীরা। উত্তর দমদমের দুর্গানগরে ‘বিশ্বাস বাহিনী’ বিধানসভা ভোটেও ছাপ্পা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। নিমতার পাটনা-ঠাকুরতলায় সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রতাপগড়, বিরাটি, ছোট ফিঙে এবং ২৩৭ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখানো চলছে বলেও অভিযোগ।

Lok Sabha Election 2019 Violence Kolkata Police Election Commission Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy