Advertisement
E-Paper

ভোট দেবেন কী ভাবে, শিখে নিলেন বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীরা

অটিজম, মেন্টাল রিটার্ডেশন, ডাউন সিনড্রোম আছে এমন ৩৭ জন ভোটারকে দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানদের অভিভাবকদের একটি সংস্থায় এই নতুন ভোটারদের বোঝানো হয় ইভিএম যন্ত্র এবং ভিভিপ্যাট কী।

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০২:২২
হাতেকলমে: ভোট দেওয়া শিখছেন এক বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী। নিজস্ব চিত্র

হাতেকলমে: ভোট দেওয়া শিখছেন এক বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী। নিজস্ব চিত্র

প্রথম বার ভোট দেবেন ওঁরা। তাই তার পদ্ধতিটা হাতেকলমে শিখে নিতে উত্তেজিত ছিল বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী সৌমাল্য, শ্রেয়া, দ্বৈপায়নেরা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ভোটের মেশিনটি দেখাতেই বাধল বিপত্তি। ফুল, হাত, কাস্তে-হাতুড়ির ছবি কোথায়! রাজনৈতিক দলের প্রতীক ওঁরা চেনেন। কে কোন দলের প্রার্থী, ‘নোটা’ কী— তাও যে তাঁরা জানেন! ভোটের দিন সে সব প্রতীক মেশিনে দেখা যাবে জানার পরে শান্ত হন নতুন ভোটারেরা।

অটিজম, মেন্টাল রিটার্ডেশন, ডাউন সিনড্রোম আছে এমন ৩৭ জন ভোটারকে দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানদের অভিভাবকদের একটি সংস্থায় এই নতুন ভোটারদের বোঝানো হয় ইভিএম যন্ত্র এবং ভিভিপ্যাট কী। সংস্থার একটি ঘরে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বুথের চেহারা দেওয়া হয়। নতুন ভোটারদের দেখানো হয় ভোটের মেশিন পর্যন্ত পৌঁছনোর আগের পর্যায়গুলি। ভোটারেরাও এক এক করে খাতায় আঙুলের ছাপ দিয়ে এগিয়ে যান স্লিপ নিতে। আঙুলে স্কেচ পেনের কালি লাগিয়ে ভোট দেন তাঁরা। শেষে ভিভিপ্যাটের আওয়াজ শোনার পরে বুথ ছেড়ে বেরোনো পর্যন্ত শিখে নেওয়া হয়। ভোটকর্মী মিহিরচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘ঠিক কী ভাবে ভোট দিতে হবে, তা বোঝা নিয়েই প্রতিবন্ধকতা আজকের ভোটারদের। তাই এখানে আসার আগে আলোচনা করছিলাম, ঠিক কী ভাবে গোটা বিষয়টি ওঁদের সহজে বোঝানো যায়। চিন্তা নেই, পদ্ধতিটি ওঁরা ধরে ফেলেছেন।’’

কসবার নিবেদিতা সেনগুপ্ত জানান, প্রতিবন্ধীরা যে ভোট দিতে পারেন, কখনও ভাবেননি তিনি। নিবেদিতা বলেন, ‘‘এ বার দেখলাম প্রতিবন্ধীদের জন্য বুথে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তাই এ বছরই কার্ড করে ছেলের নাম তুলিয়েছি।’’ এ বার প্রথম ভোট দেবেন বছর চল্লিশের তিলক, বছর আঠেরোর শ্রেয়াও। শ্রেয়া জানালেন, ইতিমধ্যেই তিনি ঠিক করে ফেলেছেন কাকে দেবেন। সদ্য আসানসোলে ভোট দিয়েছেন তাতাই। তাঁর বাবা সৌমেন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আঠেরো হতেই ছেলের ভোটার কার্ড করিয়েছিলাম। এ বার ভাল ভাবেই ভোট দিয়েছে আমার ছেলে।’’

কিন্তু ভোট কী, কেন দিতে হয় তা কি জানেন ওঁরা সকলে? এমন প্রশ্ন উঠেই থাকে। সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘ভোট ঘোষণার পর থেকেই ভোট কী, স্পেশ্যাল ইন্ট্রাকটারেরা তা ছেলেমেয়েদের বুঝিয়েছেন। আমিও বিভিন্ন দলের প্রতীক, ইভিএমের ছবি ইন্টারনেট থেকে বার করে এক মাস ধরে বুঝিয়েছি। তাই অসুবিধে হয়নি।’’ ওই সংস্থার পক্ষে চৈতালী গামি বলেন, ‘‘বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীদের যে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, তাঁদেরও যে মতামত আছে, তা অনেকেই জানেন না। এ বছর নির্বাচন কমিশন প্রতিবন্ধীদের ভোটাধিকার নিয়ে প্রচার করায় উদ্যোগী হই ওঁদের ভোটার কার্ড তৈরি করানোর জন্য। ভোটদান প্রক্রিয়াও এ বার হাতেকলমে শিখে নিয়েছেন ওঁরা।’’ তাঁর আশা, ভাল ভাবেই ভোট দিতে পারবেন ওঁরা। পাশাপাশি সংস্থার তরফে জানা যায়, কোনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে বুথে ঢুকে ভোট দিতে সাহায্য করার জন্য বিশেষ ফর্মের ব্যবস্থা থাকে। ফলে পরিবারের কেউ ফর্ম ভর্তি করে এই প্রথম ভোটারদের সঙ্গে যেতেও পারেন কেন্দ্রে। যদিও অধিকংশ অভিভাবকই আশাবাদী। তাঁদের বিশ্বাস, সন্তানেরা নিজেরাই পারবেন ভোট দিতে। তেমনই এক অভিভাবক, বাঁকুড়ার বাসিন্দা গীতা মুখুটি যেমন প্রশিক্ষণ শেষে বলেন, ‘‘ওই ফর্মের দরকার হবে না। আমাদের সন্তানেরা নিজেরাই ভোট দিতে পারবে।’’

Lok Sabha Election 2019 Training Autism Mental Retardation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy