Advertisement
E-Paper

ভোট বড় বালাই, ‘শ্রী’ ফিরছে দেওয়ালের

সভা শেষে চাতালের এক দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে মূল বক্তা বললেন, ‘‘এলাকারই এক জন আমাদের একটা দারুণ প্রস্তাব দিয়েছেন।’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৫
দেওয়ালে রং করা শুরু হয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি মূত্রত্যাগ। উল্টোডাঙা মেন রোডে। নিজস্ব চিত্র

দেওয়ালে রং করা শুরু হয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি মূত্রত্যাগ। উল্টোডাঙা মেন রোডে। নিজস্ব চিত্র

গত রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে ক্যানাল ইস্ট রোডের ‘শান্তি কমিটি’র চাতালে। জড়ো হওয়া শ্রোতাদের একটি চিঠি দেখিয়ে স্থানীয় নেতারা বলেছেন, ‘‘দেখুন, দেওয়ালটাও ভাল করে দিচ্ছি। গন্ধের আর কোনও ব্যাপার থাকবে না। কিন্তু ভোটটা যেন ঠিক জায়গায় পড়ে।’’ বক্তার কথা শেষ হতেই একযোগে সমর্থন এল, ‘‘হোক, হোক। নরক থেকে মুক্তি চাই।’’

চিঠিতে কী ছিল?

সভা শেষে চাতালের এক দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে মূল বক্তা বললেন, ‘‘এলাকারই এক জন আমাদের একটা দারুণ প্রস্তাব দিয়েছেন।’’ এখানকার বেশ কিছু দেওয়ালের পাশ দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটা যায় না। দিবারাত্র সেখানে অবাধে মূত্রত্যাগ চলে। দেওয়ালগুলির সামনে পড়ে থাকে আবর্জনা ভরা প্লাস্টিক। ভোট মরসুমে রাজনৈতিক দলগুলি নানা দেওয়াল প্রচারের কাজে ব্যবহার করে। এই ধরনের দুর্দশাগ্রস্ত দেওয়ালগুলিও প্রচারে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন ওই ব্যক্তি। নেতার কথায়, ‘‘এতে দুর্গন্ধের নরক-যন্ত্রণা থেকে বাসিন্দারা যেমন মুক্তি পাবেন, আমাদেরও প্রচার হয়ে যাবে।’’ দেওয়ালের গায়ে মূত্রত্যাগ বন্ধে ঠাকুর এবং বিশিষ্টদের ছবি লাগানোর চল পুরনো। দেওয়াল বাঁচানোর এই নয়া পরামর্শ ভোট বাজারে আলাদা মাত্রা যোগ করছে বলে মত অনেকের।

পাড়ার লোকের কাছে প্রস্তাব পাশের পরেই উল্টোডাঙা মেন রোডের একটি দেওয়াল রাঙানোর কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। পুরকর্মীদের লাগিয়ে সাফ করার পরে এখন সেখানে চুনকাম করা হচ্ছে। দুপুর রোদে কাজ তদারকিতে ব্যস্ত স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘প্রথম দিন দেওয়ালের কাছেই ঘেঁষা যায়নি। ব্লিচিং দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। তার পরে সাফসুতরো করে চুনকাম শুরু হয়েছে। দিন তিনেকের মধ্যেই আমাদের প্রার্থীর নাম লেখা হয়ে যাবে।’’ যদিও পাশের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা আরএসপি নেতা দীপু সাহা বলছেন, ‘‘মানুষ দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেলে তো ভালই। কিন্তু, ওঁরা পারলে সব দেওয়ালই দখল করে নেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেওয়ালগুলি সরকারি কি না, বা মালিকের থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না তা-ও দেখা দরকার।’’

এই নিয়েই আবার মানিকতলা মেন রোডে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বিস্কুট কারখানার দেওয়ালে রং করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই কারখানাটি ৩০ বছরের উপরে বন্ধ। তার মধ্যেই কারখানার দেওয়াল একাংশের কাছে মূত্রত্যাগের মূল জায়গা হয়ে উঠেছে। সকাল হলে আবার সেই দেওয়ালের গায়ে প্লাস্টিকে ভরে আবর্জনা ফেলে দিয়ে যান অনেকে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। পাড়ার লোকজন সম্প্রতি দেওয়াল সংস্কারের জন্য স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করেছিলেন। ভোট মরসুমে সেই দেওয়ালেরই শ্রী ফেরাতে প্রার্থীর নাম লিখে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল। দেওয়াল সাফ করে সেখানে চুনকাম করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রার্থীর নাম লেখা হওয়ার কথা।

তবে এর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু বলেন, ‘‘মানুষ চেয়েছিলেন, তাই রং করেছি। কিন্তু, কারখানার মালিকেরা প্রচারের কাজে দেওয়াল ব্যবহার করতে দিতে না চাইলে কী হবে, সেটাই ভাবছি।’’ উত্তর কলকাতা কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা স্থানীয় নেতা ভীষ্মদেব কর্মকার অবশ্য বলছেন, ‘‘মানুষের জন্য করা— এ সব বাজে কথা। ওঁরা পারলে আমাদের ঘরের দেওয়ালও দখল করে নেবেন। এর পরে দেখবেন ওঁদের এক গোষ্ঠী ওই দেওয়াল নোংরা করবে, আর এক গোষ্ঠী অন্য রাজনৈতিক দলের উপরে দোষ চাপাবে।’’

বিতর্ক যা-ই হোক, আবর্জনায় ভরা দেওয়াল নিয়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে দক্ষিণের যাদবপুর এবং রানিকুঠিতেও। বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গায়ের দেওয়ালের অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিল। ভোট মরসুমে প্রচার করতে দিলে আবর্জনা ভরা সেই দেওয়াল সাফ হলেও হতে পারে বলে স্থানীয়দের অনেকের আশা। অভিজিৎ দাস নামে স্থানীয় এক অটোচালক বললেন, ‘‘এমনিতে তো কাজ হবে না। ভোটের স্বার্থে যদি কিছু হয়!’’

Lok Sabha Election 2019 Wall Writing Open Defecating
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy