Advertisement
E-Paper

রোড-শো, জনসভায় ফাঁকিবাজিহীন ভোটের প্রচার

এত দিনে কলকাতা বা লাগোয়া জেলাগুলির কেন্দ্রে প্রার্থীদেরও মনোনয়ন পর্ব চুকে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২২
জনসংযোগ: বন্ডেল ব্রিজের কাছে প্রচারে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী।

জনসংযোগ: বন্ডেল ব্রিজের কাছে প্রচারে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী।

ভবানীপুর থানার কাছ থেকে হাজরামুখী রোড-শো চলেছে অলিগলি ধরে। প্রাক্‌-ভোট রবিবাসরীয় সকালের কলকাতার আবহাওয়া কিছু হাল্কা উত্তেজনার ছোঁয়াচ রেখে গেল।

৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের রোড-শোয়ের জন্য আগাম অনুমতি নিয়েছিলেন সিপিএমের প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট দিয়ে না কি যাওয়া যাবে না! জিপে দাঁড়িয়ে নন্দিনী ও তাঁর সহযোগীদের ওই তল্লাটে এসে তাই ঘুরে যেতে হল। নন্দিনী বলছিলেন, ‘‘মানেটা কী! মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিতে কেন যাওয়া যাবে না! ২০১৪-র ভোটেও তো ওই গলিতে প্রচার করতে গিয়েছি।’’ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মুখটায় সকাল থেকেই পুলিশে ছয়লাপ। নন্দিনীর রোড-শো ঘুরপথে কালীঘাটের পটুয়াপাড়ার দিকে থামল। পরে কালীঘাট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জবাব মিলল, ‘‘এটা নিরাপত্তার বিষয়। সব দিক ভেবেই এটা ঠিক হয়েছে।’’

শেষ মুহূর্তে রোড-শোয়ের অনুমতি নিয়ে অনেক প্রার্থীকেই এখন ভুগতে হচ্ছে। কলকাতা দক্ষিণ-এর বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুর রোড-শোয়ের রুট নিয়ে পরিকল্পনার কিছু হেরফের হল। বালিগঞ্জের বদলে বিজন সেতুর কাছ থেকে তিনি শুরু করলেন। থামলেন, আনন্দপুরে। উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড-শো কোথায় হবে, তা নিয়েও সংশয় ছিল। উল্টোডাঙার মুচিবাজারের কাছে পথে নামার পরিকল্পনা বদলে গেল, বাগমারির দিকে পরেশ পালের ওয়ার্ডে। কলকাতার তস্য গলির মধ্যে প্রার্থীকে দেখে মালা পরানোর হিড়িক দলীয় সমর্থকদের। সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হিন্দি-উর্দু ভাষার প্রচারেও সহাস্য সুদীপ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহের প্রচারের সময়ে পদ্ম হাতে এক সমর্থক। খন্না এলাকায়।

ভোটের শহরে রবিবারের রংটা বেমালুম পাল্টে যায়। উত্তর দিকে শহরের উপান্তে বিরাটি বাজারের ভিড়ে হঠাৎ ‘ভোটবাবু’র আবির্ভাব দেখল থলেধারী গেরস্ত বাঙালি। সপ্তাহান্তে পছন্দসই বাজার করতে হাজির জনতা জনার্দন কিংবা মাছ বিক্রেতা, আলু বিক্রেতাদের সঙ্গেও কুশল বিনিময়ে মাতলেন দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। জনে জনে আশ্বস্তও করলেন, নিজের ভোটটা দিতে এ বার সমস্যা হবে না! এন্টালি এলাকায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে সিপিএমের কনীনিকা বসু ঘোষের প্রচার ঘিরেও উৎসবের আমেজ। রণপা-শিল্পী, ঢাকীরাও সেই ভোটপুজোর অঙ্গ হয়ে উঠলেন।

বন্ডেল রোডে শীতলা মন্দিরের কাছটায় চা-বিক্রেতা বলছিলেন, ‘‘ব্যাপারটা ঠিক ভাসানের কার্নিভ্যালের মতো! ভাগ্যে থাকলে পরপর দু’জন প্রার্থীর রোডশো-ও দেখা যাবে।’’ কংগ্রেসের মিতা চক্রবর্তী হলুদ জিপে হাত চিহ্ন ঝুলিয়ে সকালটা বন্ডেল ব্রিজের কাছে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরেছেন। বিকেলে এক ঝাঁক সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে নিউ আলিপুরে ঘুরে গেলেন তিনি। প্রবীণ তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ও সকালে উত্তর দমদম তো বিকেলে রাজারহাট-গোপালপুর করে চলেছেন। গিরিশ পার্ক থেকে খন্না সিনেমা হলের দিকে বিজেপি-র রাহুল সিংহের প্রচারেও উৎসাহে অন্ত নেই। প্রার্থীর পাশেই রয়েছেন, উত্তর কলকাতার পোড়খাওয়া বিজেপি নেত্রী মীনা দেবী পুরোহিত। লোক খুব বেশি না হলেও আশপাশের বাড়ির বারান্দায় দৃষ্টি আকর্ষণের মরিয়া চেষ্টায় খামতি নেই কারও। ঘর্মাক্ত কলেবরে এক প্রবীণ হাতের পদ্মফুল উঁচু করে ধরে প্রতীক চেনানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভবানীপুর এলাকায় প্রচারে দক্ষিণ কলকাতার বাম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। রয়েছেন বিমান বসু।

রাজ্যে এ বার একেবারে শেষ পর্যায়ে ভোট কলকাতায়। ভোটের আগে আর ঠিক দু’টি রবিবার মিলবে। কিন্তু যা আবহাওয়া, তাতে বেলা ১১টার পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রচার করতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। শমীক ভট্টাচার্য তবু দুপুরে দমদমের বেদিয়াপাড়ায় হেঁটে প্রচার করছিলেন। এক কর্মীর বাড়িতে মাছভাত খেয়ে তাঁর স্নান সারতেই বিকেল চারটে বেজে গেল। বরাহনগরে তৃণমূলের জেলা নেতারা তখন নিজের এলাকায় পদযাত্রা সেরে ওই তল্লাটে মুখ্যমন্ত্রীর আসন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের খুঁটিনাটি ঠিক করছেন। স্থানীয় বিধায়ক তাপস রায়ের সঙ্গে কথা বলতে জেলা নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সন্ধ্যায় এসে হাজির হলেন।

উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে মায়ের কোলে পোস্টার হাতে খুদে। রবিবার, বাগমারি এলাকায়।

এত দিনে কলকাতা বা লাগোয়া জেলাগুলির কেন্দ্রে প্রার্থীদেরও মনোনয়ন পর্ব চুকে গিয়েছে। একটু একটু করে শুরু হচ্ছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বাড়ি বাড়ি লিফলেট বা ভোটারস্লিপ বিলি। প্রবীণ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সকালের দিকটা চম্পাহাটিতে ঘুরে এসে সন্ধ্যায় হালতুতে সভা করলেন। মিমি চক্রবর্তী হাল্কা জ্বরে প্যারাসিটামল খেয়ে প্রচার করছেন। সোনারপুরে সকালে শীতলা মন্দিরের নকুলদানা প্রসাদ বিলি করছেন তো সন্ধ্যায় চপবিক্রেতা ‘দিদি’র সঙ্গে গল্পে মশগুল। বেজায় গরমে ভোট-উৎসবের বিচিত্র রংটুকুই তবু কারও কারও কাছে জীবন খানিক সহনীয় করে তুলেছে।

নিজস্ব চিত্র ও বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ TMC BJP CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy