Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দিনে বিক্রি ৩০টি টিকিট, সুরক্ষায় ব্যয় ‘বিলাসিতা’

শ্যামবাজারের টকি শো হাউসের বর্তমানে এমনই অবস্থা। যেখানে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থাটা রীতিমতো ‘বিলাসিতা’! কারণ, দিনে যেখানে গড়ে মাত্র ৩০টি টিকিট বিক্রি হয়, সেখানে হলের সুরক্ষার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নে কী করে ব্যয় করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরাই।

অবহেলা: টকি শো হাউস থেকে বাইরে বেরোনোর দরজা।ছবি: সুমন বল্লভ

অবহেলা: টকি শো হাউস থেকে বাইরে বেরোনোর দরজা।ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

প্রবেশদ্বারের মুখেই অন্ধকার। টিকিট কাউন্টারেই টিমটিম করে আলো জ্বলছে। সিনেমা হলের দরজার বাইরে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে বটে। কিন্তু সেগুলির মেয়াদ অতিক্রম করে গিয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করতে কর্মীরা জানালেন, ওটা দ্রুত পাল্টে ফেলা হবে। সঙ্গে আক্ষেপ, ‘‘লোকই তো আসে না! যা টিকিট বিক্রি হয়, তাতে কর্মীদের মাইনের টাকাই ওঠে না, সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ কী করে হবে!’’

শ্যামবাজারের টকি শো হাউসের বর্তমানে এমনই অবস্থা। যেখানে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থাটা রীতিমতো ‘বিলাসিতা’! কারণ, দিনে যেখানে গড়ে মাত্র ৩০টি টিকিট বিক্রি হয়, সেখানে হলের সুরক্ষার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নে কী করে ব্যয় করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরাই। প্রসঙ্গত, রবিবার রাতেই প্রিয়া সিনেমা হলে শো চলাকালীন আগুন লাগে। তারই প্রেক্ষিতে শহরের অন্য বেসরকারি সিনেমা হলগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

কিন্তু উত্তর কলকাতার একাধিক বেসরকারি হলে অগ্নি নির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকু নেই। টকি শো হাউজের কর্মী সুশান্ত দাস বলেন, ‘‘গত বছর দিনে গড়ে ২০০টা টিকিট বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় গড়ে ৩০টা। টাকা কোথায় যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে! আমাদের মাইনে হওয়াটাই তো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’’ তবে বিপদ যাতে এড়ানো যায়, সে দিকে সবসময়ই তাঁদের নজর রয়েছে বলে জানালেন সুশান্তবাবু।

হল কর্তৃপক্ষ জানালেন, এক সময় সিনেমা হলের ৬৪২টি আসনের সবক’টিই ভর্তি থাকত। কিন্তু এখন ঠিক তার উল্টো অবস্থা। প্রায়ান্ধকার হল রীতিমতো সুনসান। অন্ধকারে কোনও ঘটনা ঘটলে বেরোনো মুশকিল হয়ে যাবে বলে স্বীকার করেও এক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘আলো জ্বাললেও তো বিদ্যুতের বিল ওঠে!’’

ওই এলাকারই একটি সিনেমা হল দর্পণার ভিতরে ঢুকতে দিতেই রাজি হলেন না কর্মীরা। তাঁদের সাফ বক্তব্য, হলটি নিয়ে আইনি ঝামেলা চলছে। সেটি বিক্রিও হয়ে যাবে। তাই ভিতরে ঢোকা যাবে না। অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা যথাযথ কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে এক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘দর্শক থাকলে তো দুর্ঘটনার প্রশ্ন থাকে।’’

মিনারের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র আবার ঠিকই আছে। কিন্তু চোরের উৎপাতে তা রাখতে হয়েছে মহিলা শৌচাগারের ভিতরে! বিপদ ঘটলে সেখান থেকে যন্ত্র বের করা যাবে কী ভাবে, সে প্রশ্নের উত্তরে মিনারের ম্যানেজার পৃথ্বীরাজ শেঠের বক্তব্য, ‘‘অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের ধাতব অংশটুকু চুরি করে নিয়ে গিয়েছে আগে। আগে আমরা বাইরেই রাখতাম। কিন্তু চুরির হাত থেকে বাঁচার জন্যই ভিতরে রাখতে হয়েছে। তবে আমরা ওখানে রাখব না। বাইরেই রাখব।’’

মিনারের মহিলা শৌচাগারে রাখা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। ছবি: সুমন বল্লভ

তবে হল যত দিন চালু থাকবে, তত দিন অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনওরকম সমঝোতা করা উচিত নয় বলে সাফ বক্তব্য মিত্রা সিনেমার কর্ণধার দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্রের। দীপেন্দ্রবাবু জানালেন, তিনি পুরো হলের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে দিয়েছেন। নতুন অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র থেকে শুরু করে দমকলের নির্দেশ মতো ভূগর্ভস্থ জলাধার— সবই করা হয়েছে। দীপেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘সিনেমা হলের ব্যবসা করতে হলে ঠিক ভাবেই করা উচিত বলে মনে করি। সে জন্য অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা মানতেই হবে।’’

তবে সরকারের অধীনস্থ গিরিশ মঞ্চ, মিনার্ভা থিয়েটারের অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা গত বছরেই ঢেলে সাজানো হয়েছে। নতুন অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র, সারা হল জুড়ে স্প্রিঙ্কলার, জলের সংস্থানের জন্য হাইড্র্যান্ট, সবই করা হয়েছে। গিরিশ মঞ্চ, মিনার্ভা থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তা কাজল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের নির্দেশ মতো দু’টি হলেই অত্যাধুনিক অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে। গিরিশ মঞ্চের জন্যই প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।’’

কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Fire Extinguisher Ticket Security Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE