Advertisement
০২ মে ২০২৪
Kolkata East West Metro

ঐতিহ্য আর ইতিহাসের মিশেলে সাজ ইস্ট-ওয়েস্টের মহাকরণ স্টেশনের

ব্যস্ত সময়ে ওই মেট্রো স্টেশন দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখে ওই স্টেশনের চারটি প্রবেশপথ থাকছে। সেগুলি কাচ এবং ইস্পাতের মিশেলে তৈরি।

এ ভাবেই সেজে উঠেছে মহাকরণ স্টেশন।

এ ভাবেই সেজে উঠেছে মহাকরণ স্টেশন। —নিজস্ব চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৮
Share: Save:

লালদিঘির চার পাশে ছড়িয়ে থাকা বি বা দী বাগ চত্বরে অফিসপাড়ার ব্যস্ততা আগের তুলনায় খানিকটা কমে এলেও ঐতিহ্যের গরিমা এতটুকু কমেনি। মহাকরণ, রাজভবন, জিপিও, গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, কারেন্সি বিল্ডিং, টেলিফোন ভবন, সেন্ট জন’স গির্জা থেকে ফেয়ারলি প্লেস সংলগ্ন পূর্ব রেলের সদর দফতর— সবই আছে এখানে। সম্ভবত কলকাতার সব চেয়ে বেশি সংখ্যক ঐতিহ্যশালী ভবনই রয়েছে এই সাবেক ডালহৌসি তথা আজকের বি বা দী বাগ চত্বরে।

জোব চার্নকের সময়ের পুরনো কলকাতার ভোল বদলে গিয়েছিল ইংরেজ রাজতন্ত্রের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা একের পর এক নির্মাণে। ইউরোপীয় স্থাপত্যের ওই সব নিদর্শনের পাশাপাশি, মহাকরণের অলিন্দে বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশের কীর্তি স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্য দিক উন্মোচিত করেছিল। সেই ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেই এ বার বিশেষ থিমে সাজছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মহাকরণ স্টেশন। ঐতিহ্য এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ওই মেট্রো স্টেশনকে সাজানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর তত্ত্বাবধানে ওই স্টেশন তৈরি করেছে নির্মাণ সংস্থা অ্যাফকনস। মাটি থেকে প্রায় ৭৪ ফুট বা ২২.৮ মিটার গভীরে, ২৬ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ওই স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এর গভীরতা প্রায় সাততলা বাড়ির সমান। ত্রিস্তরীয় স্টেশনটির একেবারে উপরের তলে থাকছে প্রবেশপথ, টিকিট কাউন্টার ইত্যাদি। তার পরের তলে রয়েছে মেট্রোর বিভিন্ন কাজের জন্য জায়গা। সব চেয়ে নীচের তলায় থাকছে প্ল্যাটফর্ম। ব্যস্ত সময়ে ওই মেট্রো স্টেশন দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখে ওই স্টেশনের চারটি প্রবেশপথ থাকছে। সেগুলি কাচ এবং ইস্পাতের মিশেলে তৈরি। যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য থাকছে আটটি চলমান সিঁড়ি এবং দু’টি লিফ্‌ট।

এ ছাড়া, স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের মতো পরিস্থিতি হলে যাত্রীদের বেরিয়ে আসার জন্য থাকছে ছ’টি সিঁড়ি। দমকলকর্মীদের ভিতরে ঢোকার জন্য একটি বিশেষ পথের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রবেশপথে সর্বাধিক ২৯টি বুকিং কাউন্টার চালু রাখার মতো ব্যবস্থা থাকছে। প্ল্যাটফর্মে ঢোকা-বেরোনোর পথে থাকছে ৩০টি স্বয়ংক্রিয় গেট। স্টেশনের অন্দরসজ্জায় যে সব ছবি আঁকা হয়েছে, তাতে পুরনো কলকাতার বাবু সংস্কৃতি ছাড়াও ইংরেজ আমল এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। পুরনো অফিসপাড়া থেকে হলুদ ট্যাক্সি, ট্রাম— সে সবও রয়েছে অন্দরমহলের সজ্জায়। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের কথা মাথায় রেখে রয়েছে লিফ্‌ট এবং অন্যান্য সুবিধা। এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘চার দিকে এত পুরনো এবং ঐতিহ্যশালী নির্মাণ বাঁচিয়ে সুড়ঙ্গ এবং স্টেশন তৈরির কাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল। তা সম্পূর্ণ করার পরে স্টেশনের অন্দরসজ্জা এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা সফরের সময়ে এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কেও সচেতন হতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata East West Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE