Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ম্যামোগ্রাম যন্ত্র খারাপ, ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, পনেরো হাজার টাকার গেরোয় ফেঁসে আছে যন্ত্র মেরামতির কাজ। কিন্তু কেন এই সামান্য টাকার জন্য এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে এমন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র? কর্তৃপক্ষের সাফাই, মেশিনটির সঙ্গে যে প্রসেসর যুক্ত আছে, সমস্যা সেখানেই। যন্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে।

বন্ধ পড়ে রয়েছে ম্যামোগ্রামের ঘর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বন্ধ পড়ে রয়েছে ম্যামোগ্রামের ঘর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:১০
Share: Save:

৩৫ লক্ষ টাকা দামের ম্যামোগ্রাম যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে, এক বছর হয়ে গেল। তা-ও মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচের জন্য। ফলে নিখরচায় স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, পনেরো হাজার টাকার গেরোয় ফেঁসে আছে যন্ত্র মেরামতির কাজ। কিন্তু কেন এই সামান্য টাকার জন্য এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে এমন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র? কর্তৃপক্ষের সাফাই, মেশিনটির সঙ্গে যে প্রসেসর যুক্ত আছে, সমস্যা সেখানেই। যন্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওদের টাকা মিটিয়ে দিলেই মেরামতি করবে বলেছে। তাঁর আশ্বাস, যন্ত্রটি দ্রুত সারানো হবে। যদিও এই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীরা।

সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে সৌগত রায়ের সাংসদ তহবিল থেকে পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকায় যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেনার কিছু দিন পর থেকেই যন্ত্রটি নিয়ে সমস্যা শুরু। কখনও যন্ত্র, কখনও বা তার প্রসেসরটি অকেজো হওয়ায় মাঝেমধ্যেই ম্যামোগ্রাম বন্ধ থেকেছে। তাঁদের কথায়, ‘‘এটি ডিজিট্যাল ম্যামোগ্রাম যন্ত্রের মতো উন্নত নয়। ফলে কিছু দিনের মধ্যে এর ফিল্মও বাজারে পাওয়া যাবে না। তাই যন্ত্রটিকে কম্পিউটারে যুক্ত করে সেখান থেকে প্রিন্ট বার করা হয়।’’

সম্প্রতি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা কামারহাটির বাসিন্দা সরযূবালা প্রসাদকে পরীক্ষা করে ম্যামোগ্রাম করার কথা লিখে দেন। পরীক্ষা করাতে ওই হাসপাতালে গেলে, ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বাইরে থেকে খরচ করে আর ম্যামোগ্রাম করাননি সরযূদেবী। স্তনে যন্ত্রণা হওয়ায় বছর তিরিশের আঁখি পাল যান সাগর দত্ত হাসপাতালে। তিনিও খালি হাতে ফেরেন। বাইরে পরীক্ষা করে যখন ম্যামোগ্রামের ফল পেলেন আঁখি, তখন বিপদ কড়া নাড়ছে। এক বছর ধরে অসংখ্য রোগীকে এ ভাবেই ফিরতে হচ্ছে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবী জুড়ে স্তন ক্যানসার মহামারীর আকার নেবে। আর সেই সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয় জরুরি। কারণ একমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার ধরা পড়লেই তার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়।

অথচ সাগর দত্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে বলে সেই কাজই বাধা পাচ্ছে। এটা মানছেন চিকিৎসকেরাও। হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান শঙ্কর কবিরাজ বলেন, ‘‘সমস্যা তো হচ্ছেই। অনেক রোগী পরিষেবা পাচ্ছেন না। আর্থিক কারণে অনেকেই হয়ত চিকিৎসা অসমাপ্ত রাখছেন। এতে তো বড় ক্ষতি হবে।’’

হাসপাতালেরই অন্য এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘সব থেকে খারাপ লাগে যখন দেখি, আমারই হাসপাতালের কোনও গরিব রোগী সাগর দত্তের প্রেসক্রিপশন নিয়ে গাদা টাকা খরচ করে প্রাইভেটে পরীক্ষা করাতে ছুটছেন। এ সব ক্ষেত্রে আগে কিন্তু ডাক্তারদের দিকেই আঙুল ওঠে। অথচ কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই।’’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সামান্য টাকার জন্য তো এত দিন যন্ত্র খারাপ হয়ে থাকতে পারে না! খোঁজ নিয়ে দেখছি বিষয়টা কী? কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE