Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রতারিতেরাই জোট বেঁধে অপহরণ করেছিল বৃদ্ধকে

ন’দিন পরে বোলপুর থেকে তপনবাবুকে উদ্ধারের পাশাপাশি করিম শেখ, মনিরুল ইসলাম ও সুজান শেখকে গ্রেফতারের পরে এমনই জেনেছেন বালি থানার তদন্তকারীরা।

তপন দাস এবং প্রদীপ ঘোষ (ডান দিকে)।

তপন দাস এবং প্রদীপ ঘোষ (ডান দিকে)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

তার নিজের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করা কয়েক লক্ষ টাকা ফেরত দিতে পাকড়াও করতে হবে শ্বশুরকে। প্রতারিত যুবকদের এমনই টোপ দিয়েছিল দুর্গাপুরের বাসিন্দা তপন দাসের জামাই প্রদীপ ঘোষ।

ন’দিন পরে বোলপুর থেকে তপনবাবুকে উদ্ধারের পাশাপাশি করিম শেখ, মনিরুল ইসলাম ও সুজান শেখকে গ্রেফতারের পরে এমনই জেনেছেন বালি থানার তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, জামাইয়ের কথাতেই করিম শেখ-সহ প্রতারিত ২৫-৩০ জন যুবক জোট বেঁধে ১৬ ডিসেম্বর তপনবাবুকে অপহরণ করে। বোলপুরে তপনবাবুকে যেখানেই আটকে রাখা হত সেখানেই পালা করে পাহারা দিত ওই যুবকেরা।

এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘পুরো কাণ্ডটা যেন সিনেমার চিত্রনাট্য!’’ বালি থানায় তপনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসে স্থানীয় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বলেন, ‘‘কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তপনবাবু উদ্ধার হয়েছেন এটা পুলিশের বড় কৃতিত্ব।’’

অপহরণের পাণ্ডা করিম শেখকে জেরায় পুলিশ জেনেছে, দু’বছর আগে প্রতারণা শুরু করে সে এবং প্রদীপ। করিমের দায়িত্ব ছিল টাকা হাতিয়ে প্রদীপকে দেওয়া। প্রতারণার কথা জানাজানি হতেই করিমের কাছে টাকা ফেরতের চাপ আসতে থাকে। নিজের কয়েক বিঘা ও প্রদীপের কিছু জমি বিক্রি করে তখন ২০ লক্ষ টাকা কয়েক জনকে ফেরত দেয় করিম। প্রদীপকে না পেয়ে প্রতারিতেরা টাকা ফেরতের জন্য করিমকে মধ্যস্থতাকারী করে।

ফলে প্রদীপের বাড়িতেও যাতায়াত শুরু করে করিম।

পুলিশকে করিম জানায়, সে জানত প্রদীপের স্ত্রীর নামে ৬০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। প্রদীপ জানিয়েছিল, টাকা পেতে হলে শ্বশুরকে কব্জা করে ওই সম্পত্তি নিতে হবে। প্রথমে করিমরা রাজি না হলেও প্রদীপ টাকা ফেরতের ব্যবস্থা না করায় শেষমেশ প্রতারিতেরা দল গড়ে। তারাই প্রদীপকে বোলপুরে আটকে টাকার জন্য ছন্দবাণীকে চাপ দিতে থাকে।

প্রদীপ সেখান থেকে পালিয়ে বেলুড়ে এসে ফোনে করিমদের জানায়, শ্বশুরকে অপহরণ করলেই টাকা মিলবে। প্রয়োজনে সে তপনবাবুকে বালিতে আসার ব্যবস্থাও করে দেবে। সেই মতো তপনবাবুর উপরে নজর রাখে করিমরা। বালিতে প্রদীপের দিদির বাড়ির কাছে ঘর ভাড়ারও বন্দোবস্ত করে মনিরুলেরা। ১৫ ডিসেম্বর জামাইয়ের কথা মতো বালিতে আসেন তপনবাবু। তাঁর পিছু নিয়ে আসে কয়েক জন যুবক। পরের দিন বৃদ্ধকে অনুসরণ করে ওই যুবকেরাও পৌঁছয় ধর্মতলায়। খাবারের দোকান, টিকিট কাউন্টার ঘুরে বৃদ্ধের সঙ্গে তারাও দুর্গাপুরগামী বাসে ওঠে।

অন্য দিকে, আরও যুবক এবং গাড়ি নিয়ে বর্ধমানের শক্তিগড়ে অপেক্ষা করতে থাকে করিম। দুপুরে সেখানে বাস থামতেই তপনবাবু খাবার খেতে নামলে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয় করিমরা। তপনবাবু জানান, বাসে থাকা যুবকেরাও ওই গাড়িতে ওঠে। বৃদ্ধের দাবি, প্রত্যেকেই তাঁকে বলে, ‘কাকা, ভয় নেই। আমাদের টাকাটা ফেরত পেলেই ছেড়ে দেব।’

পুলিশ জানায়, এক দিনে অন্তত তিনটি বাড়ি পরিবর্তন করে তপনবাবুকে রাখা হত। সব সময়ে পাহারায় থাকত পাঁচ জন। সকাল থেকে সন্ধ্যা বৃদ্ধকে নিয়ে গাড়িতে করে বীরভূমের গ্রামে ঘুরত অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ চেয়ে ছন্দবাণীকে ফোন করতে বেছে নেওয়া হত ফাঁকা মাঠ বা ধান জমি। যে কারণে নির্দিষ্ট জায়গার টাওয়ার লোকেশন মিলত না বলেই জানান তদন্তকারীরা।

বিভিন্ন বাড়িতে দুপুরের খাবারের আয়োজন হত। প্রতিদিনের খরচ মোবাইলে লিখে রাখত করিমরা। যাতে পরে সেই টাকাও ফেরত পাওয়া যায়। প্রদীপ গ্রেফতারের খবর মিলতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে করিমরা। তপনবাবুকে মারধর শুরু করে। মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। যদিও তার মধ্যেই বৃদ্ধের খোঁজ পেয়ে বোলপুরে হাজির হয় বালি থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidnap Bait Father-in-law Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE