Advertisement
E-Paper

খুনের মামলা তুলতে ‘চাপ’, মৃত্যু বাবার

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১০ সালে খোকনবাবুর মেয়ে নীতা পালের সঙ্গে হৃদয়পুরের বাসিন্দা প্রবীর পালের বিয়ে হয়। নীতা-প্রবীরের সাড়ে তিন বছরের ছেলের সামনেই ২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর ভোরে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জন মিলে নীতার গায়ে আগুন দিয়ে দেন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
নীতা পাল ও খোকন সাহা। নিজস্ব চিত্র

নীতা পাল ও খোকন সাহা। নিজস্ব চিত্র

দু’বছর আগে শ্বশুরবাড়িতে রহস্যমৃত্যু হয় এক বধূর। তাঁকে খুনের অভিযোগে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের বিরুদ্ধে আগেই মামলা দায়ের করেছিলেন মৃতার বাবা-মা। অভিযোগ, তা প্রত্যাহারের জন্য আসা নিত্য চাপ সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হলেন ওই বধূর বাবা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম খোকন সাহা (৫২)। বাড়ি মধ্যমগ্রামের উদয়রাজপুরে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১০ সালে খোকনবাবুর মেয়ে নীতা পালের সঙ্গে হৃদয়পুরের বাসিন্দা প্রবীর পালের বিয়ে হয়। নীতা-প্রবীরের সাড়ে তিন বছরের ছেলের সামনেই ২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর ভোরে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জন মিলে নীতার গায়ে আগুন দিয়ে দেন বলে অভিযোগ। পরের দিন আর জি করে মৃত্যু হয় নীতার। এর পরে নীতার বাড়ির লোকেরা শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জন সদস্যদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। নীতা খুনের মূল সাক্ষী হিসেবে তাঁর সাড়ে তিন বছরের ছেলে পুলিশ ও বারাসত আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে জানায়, বাবা প্রবীর পাল-সহ পাঁচ জন মিলে তার মায়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে দিয়েছে। মূল সাক্ষীর বয়ানের উপরে ভিত্তি করেই মৃতার স্বামী প্রবীর পাল-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পাঁচ জন ২০১৬ সালের শেষের দিকে জামিন পেয়ে যায়।

মৃত খোকনবাবুর স্ত্রী রুবি সাহার অভিযোগ, ‘‘পাঁচ জন জেল থেকে জামিন পাওয়ার পরেই খুনের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের হুমকি দিতে থাকে। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর বাড়ির থেকে বেরোনোর সময়ে আমাকে ও আমার স্বামীকে প্রবীর ও তার লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। মারধরও করে।’’ পুলিশ জেনেছে, এর পরেই বাড়ির কাছে নিজের কারখানায় গত মঙ্গলবার রাতে বিষ খান খোকন সাহা। তাঁকে প্রথমে বারাসত হাসপাতাল ও পরে আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে শনিবার মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের দাবি, এই ঘটনার আগের দিনও মৃতা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে হুমকি দিয়েছিল কয়েক জন। এই ঘটনায় একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা আছে, ‘‘মেয়ের মামলা তুলে নিতে জামাই প্রবীর পাল ও তার ভাই সুবীর পাল আমাকে ও আমার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি তাদের ভয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি।’’ সুইসাইড নোটে খোকনবাবু আরও দাবি করেছেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরাই দায়ী। স্বামীর মৃত্যুর পরে শনিবার মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী রুবিদেবী। পুলিশ শনিবার রাতেই প্রবীর পালকে গ্রেফতার করেছে। রুবিদেবীর অভিযোগ, ‘‘প্রবীররা জেল থেকে ছাড়া পেলেও আদালতের নির্দেশ ছিল, তারা উত্তর চব্বিশ পরগনায় থাকতে পারবে না। সেই রায়কে অগ্রাহ্য করে তারা নিজেদের বাড়িতেই থাকছে দিনের পর দিন। মেয়েকে খুনের মামলা প্রত্যাহার করে নিতে আমাদের উপরে চাপ দিচ্ছে। আমার স্বামী ওই চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।’’

যদিও নীতার শ্বশুরবাড়ির তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রবীর পালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

suicide threaten life threat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy