মাত্র দু’হাজার টাকার জন্য মালিকের পাঁচ বছরের ছেলেকে গলায় ছুরি চালিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার বাঁকড়া বাজারে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শিশুটির নাম মহম্মদ ইবরান। সে স্থানীয় একটি স্কুলের কেজি টু-তে পড়ত। অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম মহম্মদ সেলিম। ঘটনার পরেই সে পালিয়ে যায়। এ দিকে, এই ভয়াবহ খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকায় তোলপাড় পড়ে যায়। উত্তেজিত বাসিন্দারা অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত শিশুটির বাবার নাম মহম্মদ ইস্তিকার। তাঁর একটি চুড়ির কারখানা রয়েছে হাওড়ার বালিটিকুরিতে। সেখানেই কাজ করত উত্তর হাওড়ার পিলখানার বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম। কারখানার মালিকের দাবি, এখন ওই কারখানায় কোনও কাজ হচ্ছে না। ফলে তাঁর টাকাপয়সার অভাব চলছিল। কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছিলেন না। কিন্তু কয়েক মাস আগের পাওনা দু’হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সেলিম প্রায়ই চাপ দিচ্ছিল মালিককে।
চুড়ি কারখানার মালিকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন জানান, এ দিন সকালে বাঁকড়ায় ইস্তিকারের বাড়িতে গিয়ে বকেয়া চায় সেলিম। তাকে বিকেলে আসতে বলা হয়। কিন্তু সে দুপুরেই ফের বাড়িতে চলে আসে। সাবিনা বলেন, ‘‘তখন দোতলায় আমরা স্বামী-স্ত্রী খেতে বসেছিলাম। সেলিম এসে বলল, এখনই টাকা দিতে হবে। আমার স্বামী ওকে বুঝিয়ে বলেন, বিকেলে আসতে। কিন্তু ও চেঁচামেচি করে চলে যায়। হুমকি দিয়ে বলে, এখনই টাকা না পেলে সব উসুল করে নেবে।’’
সাবিনা জানান, কিছু ক্ষণ চিৎকার করার পরে সেলিম নীচে নেমে যায়। সেখানেই তখন ইবরান খেলছিল। আচমকাই ছেলের চিৎকার শুনতে পান তাঁরা। কিছু ঘটেছে বুঝতে পেরে স্বামী-স্ত্রী হুড়মুড় করে নীচে নেমে দেখেন, সিঁড়ির আড়াল থেকে সেলিম উঁকি মারছে। এর পরে ঘরের ভিতরে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ইবরানের গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। গলার অনেকটাই কাটা। সাবিনা বলেন, ‘‘ছেলেকে কোলে নিয়ে বাইরে আসতেই দেখি, সেলিম দৌড়ে পালাচ্ছে। আমরা চিৎকার করে লোকজন ডেকে ছেলেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ওকে আর বাঁচানো যায়নি।’’
এ বিষয়ে হাওড়া পুলিশের ডিসি (সাউথ) রাজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যায়নি। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ শুধুমাত্র বকেয়া টাকার জন্য এই ঘটনা, না কি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।