শুভঙ্কর দাস
হাওড়া স্টেশনে ভিড়ের চাপে মৃত্যু হল এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় মৃতের নাম শুভঙ্কর দাস (১৮)। কলকাতার একটি কলেজের কলা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। বাড়ি চন্দননগরে।
হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলিতে হকারদের ভিড় আর মালবোঝাই ট্রলির দৌরাত্ম্যে আজকাল হাঁটাচলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার উপরে যে প্ল্যাটফর্ম থেকে সাধারণত লোকাল ট্রেন ছাড়ে না, মঙ্গলবার রাতে সেই প্ল্যাটফর্মেই দেওয়া হয়েছিল ব্যান্ডেল লোকাল। ওই ট্রেন ছাড়ার পরেই সেই প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি মেল ট্রেনের ছাড়ার কথা ছিল। তাই লোকাল ট্রেনটি ছাড়ার আগেই মেল ট্রেন ধরতে সেখানে মালপত্র নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বহু যাত্রী। ফলে ভিড়ের চাপে প্রায় দম বন্ধ করা অবস্থা হয়েছিল প্ল্যাটফর্মে। বাড়ি ফেরার জন্য ৯টা ৫-এর ব্যান্ডেল লোকাল ধরতে গিয়ে সেই ভিড়ের চাপেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় শুভঙ্করের। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের উপরেও রেলের নজরদারির অভাব রয়েছে?
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগরের কাঁটাপুকুর বাইলেনের বাসিন্দা শুভঙ্করের বাবা পেশায় দিনমজুর। মা গৃহবধূ। ছোট ভাই পড়াশোনা করে। সংসারে সাহায্য ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে সম্প্রতি বাগড়ি মার্কেটের একটি ওষুধের দোকানে পার্টটাইম চাকরি নিয়েছিলেন শুভঙ্কর। মঙ্গলবার সেই কাজ সেরে বাগড়ি মার্কেট থেকে একই পাড়ার বন্ধু ও সহকর্মী আকাশ পালের সঙ্গে ট্রেন ধরতে স্টেশনে আসেন তিনি। তার পরেই ওই ঘটনা ঘটে।
আকাশ জানান, দোকানে শুভঙ্করের হারিয়ে যাওয়া একটি আংটি খুঁজতে গিয়ে তাঁদের বেরোতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। স্টেশনে ঢুকেই জানতে পারেন, ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ছাড়বে। তখন দু’জনে ওই প্ল্যাটফর্মের দিকে দৌড়তে থাকেন। আকাশের কথায়, ‘‘৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন ভয়াবহ অবস্থা। এক দিকে যাত্রীদের ভিড়। অন্য দিকে ট্রলি নিয়ে কুলিদের দাপাদাপি। পরের ট্রেন ধরার জন্য প্রচুর যাত্রী বসে রয়েছেন মালপত্র নিয়ে। তার মধ্যেই আমরা ভিড় ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করছিলাম। আমার সামনে ছিল শুভঙ্কর। দেখি, আচমকা বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল। তার পরে ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে শুয়ে পড়ল।’’
আকাশ জানান, বন্ধুর ওই অবস্থা দেখে তিনি ছুটে যান আরপিএফের কাছে। তারাই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে। এর মধ্যে জিআরপি এসে মেমো তৈরি করতে গিয়ে মিনিট পনেরো সময় নিয়ে নেয়। এর পরে হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শুভঙ্করকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বুধবার হাওড়ার পুলিশ মর্গে ছেলের দেহ নিতে এসেছিলেন শুভঙ্করের বাবা শরবিন্দু দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলের কোনও বড় ধরনের অসুখ ছিল না। হয়তো ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। স্টেশনে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো ও বেঁচে যেত।’’
হাওড়া স্টেশনের দায়িত্বে থাকা এক পদস্থ কর্তাও বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, স্টেশনে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। তবে এমন ঘটনা আগে হাওড়া স্টেশনে ঘটেনি। আমরা সিসি ক্যামেরার ছবি খতিয়ে দেখছি, ওই সময়ে এতটা ভিড় কী ভাবে হল যে, এক জন যাত্রী অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন?’’ ওই কর্তার দাবি, প্ল্যাটফর্মগুলি আগের থেকে এখন অনেক বেশি পরিষ্কার। তুলে দেওয়া হয়েছে ভেন্ডরদের দোকান। এর পরেও কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা অবশ্যই দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy