E-Paper

রাস্তা আটকে মণ্ডপ, বিহিত চেয়ে পুলিশে চিঠি বৃদ্ধের

দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরির চেনা ছবি। লেক রোড লাগোয়া মহারাজা নন্দকুমার রোডের পুরোটাই দখল করে হয়েছে গণেশ পুজোর মণ্ডপ।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১০:১৪
অবরুদ্ধ: গোটা রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে হাতিবাগান এলাকার একটি ছোট গলিতে।

অবরুদ্ধ: গোটা রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে হাতিবাগান এলাকার একটি ছোট গলিতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

বাড়ির সামনের রাস্তার দখল নিয়েছে পুজো মণ্ডপ। সেই বাড়িতেই অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস নব্বই ছুঁইছুঁই বৃদ্ধের। একাধিক রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন। এখন বাড়ির সামনে মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় রাস্তা বন্ধ। যার ফলে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে না পারায় স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনতে পারেননি বৃদ্ধ। সল্টলেকে মেয়ের কাছে রেখে এসেছেন। এর পরেই রাস্তা দখল করে মণ্ডপ তৈরির সমস্যার বিহিত চেয়ে কলকাতার নগরপালকে চিঠি দিয়েছেন হাতিবাগানের নলিন সরকার স্ট্রিটের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অমিত সেনগুপ্ত। তাঁর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পুলিশ এসে ওই পুজো কমিটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছে।

সম্প্রতি নলিন সরকার স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল, মণ্ডপ নির্মাণে আদালতের কোনও নিয়মই মানা হয়নি। রাস্তা আটকে কেন মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে? জবাবে পুজো কমিটির সম্পাদক সজল সাহা বললেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী ছাড় দিলে পুজো করতে পারব না।’’ আশপাশের একাধিক মণ্ডপও তৈরি হচ্ছে রাস্তা দখল করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘রাস্তা দখল করে পুজো হওয়ায় হাঁটতে পারি না। কিন্তু প্রতিবাদ করলে উল্টে দাদাদের অত্যাচার শুরু হয়ে যাবে।’’ নলিন সরকার স্ট্রিটের বাসিন্দা মীনা গড়াই ও তাঁর মেয়ে জুঁই বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাঁরাও জানালেন, রাস্তা দখল করে মণ্ডপ তৈরির প্রতিবাদ করায় তাঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে পুজো কমিটির সদস্যদের। সজলের দাবি, ‘‘কেউ অসুস্থ হলে স্ট্রেচারে করে বাড়ি থেকে গাড়িতে তোলার ব্যবস্থা করি। দিন দুয়েক আগেই এ রকম সাহায্য করেছি।’’ যদিও অমিতের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কাজের সময়ে ওদের কাউকে পাওয়া যায় না।’’

অরবিন্দ সরণিতে গিয়েও দেখা গেল, রাস্তা দখল করে চলছে মণ্ডপ তৈরি। যদিও পুজো কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘মণ্ডপের পাশে সরু রাস্তা ছেড়ে রেখেছি। অসুস্থ কাউকে স্ট্রেচারে করে আমরাই অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিই।’’ একই ছবি হাতিবাগানের শিকদারবাগান লেনে। হাতিবাগানের প্রতিটি পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বিধায়ক, কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলছেন, ‘‘উত্তর কলকাতার গলি এমনিতেই সঙ্কীর্ণ। চিরকালই তো ওখানে এ ভাবে পুজো হয়ে আসছে।’’

দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরির চেনা ছবি। লেক রোড লাগোয়া মহারাজা নন্দকুমার রোডের পুরোটাই দখল করে হয়েছে গণেশ পুজোর মণ্ডপ। ওই পুজো কমিটির সভাপতি অভিষেক রায় বলেন, ‘‘আমাদের পুজো ২৫ থেকে ২৯ অগস্ট চলে। সব কিছু পুলিশ, পুরসভার অনুমতি নিয়েই করেছি। মণ্ডপের পিছনে বিকল্প দু’টি রাস্তা রয়েছে।’’ লেক মার্কেটের উল্টো দিকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের পুরো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে মণ্ডপ। সেই পুজো কমিটির এক সদস্য জানান, কয়েক বছর ধরেই এ ভাবে পুজো হচ্ছে। কারও সমস্যাও নেই বলেই তাঁর দাবি। যদিও স্থানীয়দের পাল্টা দাবি, ‘‘রাস্তা দখল হওয়ায় অসুবিধা তো হয়ই। নেতাদের ভয়ে কিছু বলতে পারি না।’’

কিন্তু রাস্তায় মণ্ডপ নির্মাণে নিয়ম মানা না হলেও কেন ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (সদর) মিরাজ খালিদকে একাধিক বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Pandal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy