—প্রতীকী চিত্র।
তাদের ছাড়পত্র ছাড়া গৃহঋণ মঞ্জুর করা ঠিক হবে না— সরকারি ও বেসরকারি, সব ধরনের ব্যাঙ্ককে এমনই নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল বিধাননগর পুরসভা, যাতে বেআইনি কোনও আবাসনের নির্মাণ আটকে দেওয়া হলে ক্রেতারা বিপদে না পড়েন। প্রোমোটারের প্রতারণা থেকে তাঁরা যাতে রেহাই পান। এ বার ব্যাঙ্কগুলিও সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে। বিধাননগর পুর এলাকায় গৃহঋণের বহু আবেদন তারা বাতিল করে দিয়েছে। কারণ, ওই সমস্ত নির্মাণের পুর অনুমোদন ছিল না। বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, ওই সমস্ত গৃহঋণের আবেদন বাতিল হওয়ার খবর বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে চিঠি দিয়ে তাদের জানানো হয়েছে। একশোরও বেশি গৃহঋণের আবেদন ইতিমধ্যেই খারিজ করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
বিধাননগর পুর এলাকায়, বিশেষত সল্টলেক লাগোয়া সংযুক্ত এলাকা কিংবা রাজারহাটে বেআইনি নির্মাণের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কৈখালির কাছে একটি বন্ধ কারখানার ভিতরেও বেআইনি নির্মাণ শুরু হওয়ায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। সেই ঘটনায় পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। সেখানে নির্মাণের নকশা এবং জমির চরিত্র বদলের কাগজপত্র নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ছিল বলেই পুরসভার অভিযোগ।
পুর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ক্রেতা না পেলে ধীরে ধীরে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েই সমস্ত ব্যাঙ্ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিল পুরসভা। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, নির্মাণের নকশা ও অন্যান্য কাগজপত্র বৈধ কি না, তা খতিয়ে দেখবে পুরসভা। তার পরেই সেই নির্মাণকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। গৃহঋণের জন্য প্রোমোটারকে সেই ছাড়পত্রের নথি ক্রেতার হাতে দিতে হবে। সেই ছাড়পত্র থাকলে তবেই নির্মাণস্থলে বিদ্যুৎ ঢুকবে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি ১০০টি প্রস্তাব নাকচ করেছে। কিন্তু যেটা উদ্বেগের, তা হল, মানুষ এখনও সচেতন হচ্ছেন না। ক্রেতারা যাতে বেআইনি নির্মাণের ভিতরে ফ্ল্যাট কিনে বিপদে না পড়েন, সেই জন্যই ওই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’
জাল নকশা ও বিভিন্ন রকম অবৈধ নথির সাহায্যে রাজারহাট এবং সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক বেআইনি নির্মাণ। রাজারহাট-গোপালপুর ও রাজারহাট-নিউ টাউন, দু’জায়গাতেই এমন অনেক আবাসন রয়েছে, যেখানে ফ্ল্যাটের কোনও দিনই রেজিস্ট্রি বা মিউটেশন হবে না। সেই সব ফ্ল্যাট কিনে এখন মাথায় হাত বহু ক্রেতারই।
এমনই জ্বলন্ত সমস্যা বর্তমানে রয়েছে বিধাননগরের ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে প্রবল বাধার মুখে পড়ে প্রতি বারই ফিরে আসতে হয়েছে প্রশাসনকে। কী ভাবে পুরপ্রতিনিধিদের চোখের সামনে ওই সব নির্মাণ গড়ে উঠল, সেই প্রশ্নে বিদ্ধ হয়েছে পুরসভাও। পুরসভাকে হাই কোর্টের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে।
পুর কর্তৃপক্ষ জানান, ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে, ক্রেতারা ছাড়পত্র পেশ করলেও তা যেন পুরসভার থেকে যাচাই করে নেওয়া হয়। কারণ, তাতে ক্রেতারাই নিরাপদ থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy