E-Paper

পুর অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে শুনানি বন্ধ, বিপাকে বহু নাগরিক

পুরসভা সূত্রের খবর, অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চ রয়েছে। প্রতিটি বেঞ্চে এক জন করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও টেকনিক্যাল সদস্য থাকেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৩৯
পুরসভা সূত্রের খবর, অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চ রয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চ রয়েছে। —ফাইল চিত্র।

বাড়ি বা সম্পত্তিকরের বিল স্বাভাবিকের থেকে বেশি এলে মামলা করা যায় পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে। কিন্তু ওই ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চ যথাক্রমে তিন মাস ও দু’বছর ধরে বন্ধ থাকায় নাগরিকদের অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল দফতর সূত্রের খবর, ওই দু’টি বেঞ্চ বন্ধ থাকায় অন্তত ৩০ হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চ রয়েছে। প্রতিটি বেঞ্চে এক জন করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও টেকনিক্যাল সদস্য থাকেন। অভিযোগ, প্রথম বেঞ্চের টেকনিক্যাল সদস্য গত বছরের ডিসেম্বরে অবসর নেওয়ার পরে নতুন করে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। আবার গত দু’বছর ধরে দ্বিতীয় বেঞ্চের টেকনিক্যাল সদস্যের পদ ফাঁকা। কোনও বেঞ্চেই টেকনিক্যাল সদস্য না থাকায় শুনানি হচ্ছে না। অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল ডিভিশন বেঞ্চের অধীনে। নিয়ম অনুযায়ী, দু’টি বেঞ্চেই দু’জনকে শুনানিতে হাজির থাকতে হবে। কিন্তু টেকনিক্যাল সদস্যের পদ ফাঁকা থাকায় শুনানি হতে পারছে না। ফলে, নাগরিকদের বড় অংশ কর নিয়ে জট কাটাতে পারছেন না।

ধর্মতলায় নিউ মার্কেটের হাডকো ভবনের ছ’তলায় অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল। পুরসভার মূল্যায়ন ও সংগ্রহ বিভাগ নাগরিকদের থেকে সম্পত্তিকর আদায় করে। নিয়ম মতো, পুরসভার পাঠানো সম্পত্তিকরের বিলে অসঙ্গতি ধরা পড়লে নাগরিকদের অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা প্রথমে পুরসভার নির্দিষ্ট দফতরে আবেদন করতে পারেন। সেখানে শুনানির পরে সন্তুষ্ট না হলে তিনি অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারেন। যদিও অভিযোগ, ২০১৭ সালে কলকাতায় ‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট’ চালু হওয়ার পর থেকে নাগরিকদের গৃহীত মামলার সংখ্যা কমে গিয়েছে। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চেরই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা। সম্প্রতি হাডকো ভবনের অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে গিয়ে দেখা গেল, গুটিকয়েক আইনজীবী বসে রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘শুনানি বন্ধ থাকায় কার্যত মাছি তাড়াতে হচ্ছে। ট্রাইবুনালের দু’টি বেঞ্চই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় মানুষের হেনস্থা তো হচ্ছেই, আমরাও বিপাকে পড়েছি।’’

মানিকতলার এক বাসিন্দার সম্পত্তিকরের বিল অত্যধিক বেশি আসায় তিনি মাস সাতেক আগে অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে মামলা করেন। কিন্তু ট্রাইবুনাল বন্ধ থাকায় তাঁকে বার বার এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। বর্ধিত কর থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। একই অবস্থা ভবানীপুরের এক বাসিন্দার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট চালু হওয়ার পরে সম্পত্তিকরের বিল অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সেই বিলে অসঙ্গতি চোখে পড়লেও পুরসভা নির্দিষ্ট ফর্মে আগে থেকেই আমাদের দিয়ে সই করিয়ে নিচ্ছে। যাতে আমরা সম্পত্তিকরের টাকা দিতে বাধ্য হই। এ ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে যাওয়ার রাস্তা আমাদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধ।’’

কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ট্রাইবুনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘দু’টি বেঞ্চে টেকনিক্যাল সদস্যের পদ পূরণে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে বার বার চিঠি দিলেও কাজ হচ্ছে না।’’ পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘আশা করছি, দু’টি বেঞ্চেই টেকনিক্যাল সদস্যের পদ শীঘ্রই পূরণ হবে।’’ আবার নাগরিকদের অভিযোগ নস্যাৎ করে কর-রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘কারও কাছ থেকেই জোর করে সম্পত্তিকরের টাকা আদায় করা হয় না। এটা ভুল কথা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KMC Kolkata Municpal Corporation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy