Advertisement
E-Paper

সচেতনতায় অনিচ্ছুক বহু কাউন্সিলর

সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতন করতে ওই ব্যানার টাঙানোর পাশাপাশি পুর কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, এই সচেতনতা অভিযানে কাউন্সিলরেরাই নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিন।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৮

কলকাতা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় একটি ব্যানার ঝুলিয়েছে পুরসভা— ‘জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর / সতর্ক থাকুন বছরভর’।

সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতন করতে ওই ব্যানার টাঙানোর পাশাপাশি পুর কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, এই সচেতনতা অভিযানে কাউন্সিলরেরাই নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিন। জানুয়ারি মাস থেকে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন নিজেদের ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে যান কাউন্সিলর। মানুষকে সচেতন করুন।

কিন্তু গত তিন মাসে পুর কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতা একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। হতাশ এক পুরকর্তার মন্তব্য, ‘‘উৎসব, খেলায় ওঁদের অতি উৎসাহ। কিন্তু ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে ততটাই অনীহা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের।’’

ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রসারে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণের যে ওয়ার্ড-ভিত্তিক রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাতে হতাশ পুর স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, বহু কাউন্সিলর এখনও সপ্তাহ-ভিত্তিক প্রচার শুরুই করেননি।

এলাকার কোথায় জঞ্জাল জমেছে, কোথায় জল জমে আছে, কে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখছেন— তা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরের পক্ষেই জানা সম্ভব। তাই পুরসভার তরফে কাউন্সিলরদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, মরসুমের শুরু থেকেই বাড়ি বাড়ি যেতে হবে তাঁদের। ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী করা উচিত, তা নিয়ে লিফলেট বিলি করতে হবে, হ্যান্ড মাইকে প্রচার করতে হবে। ক’টি বাড়িতে যাওয়া হল, কত লিফলেট বিলি করা হল, সেই রিপোর্ট নিয়মিত পুর স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠাতে হবে।

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-বিরোধী প্রচারে সকলকেই অংশ নিতে হবে। কারণ, এক জন জনপ্রতিনিধি যে ভাবে নিজের এলাকাকে চেনেন, তা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।’’

তবে পুরসভার তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত মেরেকেটে ৫০ শতাংশ কাউন্সিলর ওই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। অর্থাৎ, ১৪৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৭০-৭২ জন ডেঙ্গি-বিরোধী প্রচারে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বাকিদের কাছ থেকে এখনও তেমন জোরদার
সাড়া পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত এলাকায় এখনও ডেঙ্গি-বিরোধী প্রচার শুরু করা হয়নি, সেই এলাকাগুলি আবার অতিরিক্ত ডেঙ্গিপ্রবণ। তা জানা সত্ত্বেও ওই কাউন্সিলরদের হেলদোল না থাকায় উদ্বিগ্ন পুর কর্তৃপক্ষ।

পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ, ডেঙ্গি নিয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেখানেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বারবার বলা সত্ত্বেও কাউন্সিলরদের অনেকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছেন না। তাঁদের আর কী ভাবে এই কাজে সামিল করা যায়, তা বুঝে উঠতে পারছেন না পুরকর্তারা।

ওই পুরকর্তার কথায়, ‘‘দফতরের তরফে দু’বার চিঠি দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের। তার পরেও অনেকে বেরোচ্ছেন না। আমরা কী করব?
যা করার মেয়রকেই করতে হবে।’’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার আধ ঘণ্টার জন্য পুর ভবনে গিয়েছিলেন। তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের।

এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে কাউন্সিলরদের এত অনীহা কেন? বন্দর এলাকার এক কাউন্সিলরের ব্যাখ্যা, ‘‘মার্চ মাসের মধ্যে উন্নয়নের সব টাকা খরচ করে ফেলতে হয়। তার জন্য এত দিন নাওয়া-খাওয়ার সময় পাইনি।’’ আর এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, ‘‘এ বার তো বৃষ্টিই হচ্ছে না। ঠিক সময়েই রাস্তায় নামব।’’

তবে যে সব কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচারে সামিল হয়েছেন, তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের মানুষকে তো আমাকেই সচেতন করতে হবে। যাঁরা নিজের এলাকায় তা করছেন না, পুরপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের আমি ব্যর্থ বলেই মনে করি।’’

Dengue KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy