E-Paper

পানীয় দিতে অস্বীকার করায় হামলা, প্রকাশ্যে সিন্ডিকেট-দাদাগিরি

পুলিশ সূত্রের খবর, বাইপাসের টেগোর পার্ক বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘জয় মা তারা সভ্যবৃন্দ’ নামে একটি ক্লাব রয়েছে। সেটাই মা তারা সিন্ডিকেটের অফিসঘর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৫
Anandapur Restaurant

আনন্দপুরের রেস্তরাঁর সিসিটিভি ফুটেজ। —ফাইল চিত্র।

জমির হাতবদল নিয়ে জরুরি বৈঠক চলছে সিন্ডিকেটের। বৈঠকে বসেছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য পানীয় চাই। দিতে হবে বিনামূল্যে। অভিযোগ, পানশালায় গিয়ে এই দাবি জানানো হয়েছিল রাত ২টোর পরে। পানশালা কর্তৃপক্ষ জানান, সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, এর পরেই এক প্রস্ত হাঙ্গামা হয়। দেওয়া হয়েছিল দেখে নেওয়ার হুমকিও। সেই রাতে অন্য জায়গা থেকে পানীয় আনিয়ে ব্যবস্থা করা হলেও ‘শোধ তুলতেই’ সোমবার রাতে হামলা করা হয়েছিল ইএম বাইপাস লাগোয়া ‘গুরু’জ় বার অ্যান্ড রেস্তরাঁ’য়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় দাসকে গ্রেফতারের পরে তাঁকে জেরা করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সেই সঙ্গেই সামনে আসছে সঞ্জয়ের ‘মা তারা সিন্ডিকেট’-এর দাদাগিরির নানা কাহিনি। যা নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাইপাসের টেগোর পার্ক বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘জয় মা তারা সভ্যবৃন্দ’ নামে একটি ক্লাব রয়েছে। সেটাই মা তারা সিন্ডিকেটের অফিসঘর। পুলিশের দাবি, পানশালায় হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া বিশ্বজিৎ মণ্ডল ওরফে টাইগার, অভিজিৎ দাস ওরফে লম্বু, দীপঙ্কর দাস, মহেন্দ্রপ্রসাদ গুপ্ত ও ঘটনার মূল চক্রী সঞ্জয় এই ক্লাবেরই সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বিশ্বজিতের পরিবারের দাবি, সিন্ডিকেটের মিটিং আছে বলে সেই রাতে তাদের ছেলেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

অভিযোগ, এলাকায় নির্মাণকাজ করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয় সিন্ডিকেটের। বদলে প্রতি বর্গফুটে দিতে হয় মোটা টাকা। সিন্ডিকেটের মাথারাই ঠিক করে দেন, নির্মাণ সামগ্রী নিতে হবে কার থেকে। সিন্ডিকেটের ছেলেরাই নির্মাণ সামগ্রী দেওয়ায় যুক্ত। এলাকায় পুকুর বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ, বাইপাসের সার্ভিস রোডে কে দোকান পাতবেন, আর কাকে পাততে দেওয়া হবে না, তা-ও ঠিক হয় সিন্ডিকেটের সভায়। সেখানেও টাকার খাম গুঁজে দিতে পারলে কাজ হয়।

টেগোর পার্ক এলাকারই বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘বর্ষার আগে ঘরে টিনের ছাউনি দেব ঠিক করেছিলাম। কাজ শুরু হতেই সিন্ডিকেটের ছেলেরা বাড়ি এসে ঘরপিছু কাজের জন্য দু’লক্ষ টাকা করে চেয়েছে। এত টাকা থাকলে তো ছাদ পাকা করে নিতাম। বৃষ্টিতে ঘর ভেসে যাচ্ছে, অথচ কাজ করতে পারছি না।’’ একই দাবি আর এক বাসিন্দা রমেন সরকারের। তিনি বললেন, ‘‘গাড়িতে করে আইসক্রিম বিক্রি করি। গাড়িটা আমার ঘরের সামনেই রাখি। এ জন্য সিন্ডিকেটের ছেলেরা মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া চেয়েছে। দিতে পারিনি বলে গাড়ি ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।’’ হামলা হওয়া পানশালার ডিরেক্টর মুকেশ সিংহের দাবি, ‘‘সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অতীতে পুলিশে অভিযোগ করেছি। কাজ হয়নি।’’

মা তারা সভ্যবৃন্দ নামে ওই ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, সরু জায়গায় দোতলা ক্লাবঘর। বাইরের দেওয়ালে সুভাষচন্দ্র বসু এবং স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। দুপুরে সেখানে বসে ছিলেন এক যুবক। কথা বলার ইচ্ছে প্রকাশ করায় তিনি বলেন, ‘‘এই সিন্ডিকেটের প্রধান সঞ্জয় দাস। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ ধরেছে। বড় বড় নেতারা এখানে মিটিং করতে আসেন। বেশি দিন দাদা ভিতরে থাকবেন না। আপনি পরে এসে দেখা করবেন।’’

স্থানীয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশ যাঁদের ধরেছে, তাঁরা ওই ক্লাবের সদস্য হতে পারেন। কিন্তু ৩০ বছর ধরে ওই ক্লাব এখানে রয়েছে। আগে কখনও এমন অভিযোগ পাইনি। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, বসতি এলাকায় এমন পানশালা তাঁরা চান না। প্রশাসনের কাছে এই সমস্ত পানশালা বন্ধ করার আবেদন করেছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anandapur attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy