ছবি পিটিআই।
কাজ থেকে ফিরে রাতের খাওয়া সেরেই শুরু হত খেলা! সেই খেলা শেষ হতে হতে প্রায় ভোরও হয়ে যেত। এমন ‘নেশাদ্রব্য’ আচমকা উধাও হয়ে যেতেই রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন সেই যুবক। কেন্দ্র অনলাইন গেম ‘পাবজি’ নিষিদ্ধ করার পরে মোদীর বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভও উগড়ে দিচ্ছেন তিনি।
গত কয়েক বছরে ‘পাবজি’ যেন নেট দুনিয়ায় মাদকের জায়গা নিয়েছিল! অনলাইনে গেম জিততে ‘খ্যাপামি’ করতেন অনেকে। আঙুল যাতে না-ঘেমে যায় তার জন্য রবারের গ্লাভস কেটে বিশেষ ‘অঙ্গুলি-কবচ’ তৈরি করেছিলেন দীপন মণ্ডল নামে এক যুবক! বুধবারের কেন্দ্রের আচমকা ঘোষণায় সে সব বোধ হয় অতীত হয়ে গেল।
এ সব নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন সায়ন সরকার নামে এক পাবজি খেলোয়াড়। বলছিলেন, ‘‘এই কাজ মোটেও সমর্থন করি না। চিনের অ্যাপ, গেম বন্ধ করছে সরকার। তা হলে চিনের মোবাইল, ইলেকট্রনিক জিনিসও বন্ধ করুক!’’ তাঁর আক্ষেপ, পাবজির বদলে এখন মন ভরাতে হবে অন্য কোনও গেমে। তবে পাবজি নিষিদ্ধকরণকে অবশ্য
স্বাগত জানিয়েছেন মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল। তাঁর অভিজ্ঞতা, পাবজি নেশায় আক্রান্তের হিসেবে এ রাজ্য প্রথম দিকেই থাকবে। এই খেলার নেশাড়ুদের চিকিৎসাও করেছেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘এই ধরনের খেলা ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে মনকে আনন্দ দেয়। কিন্তু তলে তলে নেশা বাড়িয়ে দেয়। বহু সময়ে অল্পবয়সিদের পড়াশোনা, কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবার খেলায় বাধা দিলে এ নিয়ে অশান্তির ঘটনাও যেমন ঘটেছে, তেমনই বাড়ি ছেড়ে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে।’’
পাবজি খেলার নেশা কী রকম, তা দুর্গানগর বা দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের দোকানিদের কাছ থেকেও শোনা যায়। বছরখানেক আগের ঘটনা। তখন উত্তর ২৪ পরগনার একাংশে প্রশাসন সাময়িক ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছিল। বারাসত, দত্তপুকুরের খেলুড়েরা নেট সংযোগ পেতে ট্রেনে চেপে ক্যান্টনমেন্ট, দুর্গানগরে এসে খেলায় মজতেন। তাই মনোবিদেরা বলছেন, পাবজি বন্ধ হয়ে গেল মানেই সমস্যার শেষ নয়। বরং নেশার বস্তু না-পেলে যেমন নেশাড়ুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, তেমন ঘটতেই পারে। তাই পাবজি খেলুড়েদের প্রতি পরিবারের নজর দেওয়া প্রয়োজন। দরকারে তাঁদের কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে। পাবজির পরিবর্তে তাঁদের কোনও খেলাধুলো, গানবাজনার মতো সদর্থক ও সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করানো প্রয়োজন।
কেন্দ্রের পদক্ষেপ নিয়ে উজ্জীবিত সাইবার-বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়। বলছেন, ‘‘তথ্য ও দেশের সুরক্ষার খাতিরে এই অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া ভাল সিদ্ধান্ত। তবে এর বিকল্প অ্যাপ দেওয়াও জরুরি। সেই বিকল্পের সন্ধান এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে।’’
তবে সত্যি কি বন্ধ হল? না কি বিকল্প পথও খোলা থাকছে? এথিক্যাল হ্যাকিং এবং সাইবার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘কাজটির উদ্দেশ্য ভাল হলেও তা অর্ধসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। এ দেশের নেটওয়ার্কে না থাকলেও প্রক্সি সার্ভার বা ভিপিএন ব্যবহার করেও এই সব খেলা চালানো যেতে পারে। অনেকেই সেই কায়দা জানেন। মনে হচ্ছে, চিনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে যেন নিজের দেশের লোকের সঙ্গেই ছায়াযুদ্ধ চলছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy