Advertisement
E-Paper

শল্যবিদ নেই, তাই শিশুদের রেফার বাড়ছে

অস্ত্রোপচার না করে বারবার ‘রেফার’ করার জেরে গত বুধবার গুরুতর আহত ছ’বছরের একতা শর্মার মৃত্যু হলেও তার জন্য কোনও হাসপাতালকে শাস্তি দিতে পারছে না তারা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজেদের জালে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।

অস্ত্রোপচার না করে বারবার ‘রেফার’ করার জেরে গত বুধবার গুরুতর আহত ছ’বছরের একতা শর্মার মৃত্যু হলেও তার জন্য কোনও হাসপাতালকে শাস্তি দিতে পারছে না তারা। কারণ, ওই সব হাসপাতালে শিশুদের আপৎকালীন অস্ত্রোপচার করার মতো পরিকাঠামো যে নেই, তা স্বাস্থ্য দফতর আগে থেকেই জানত। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি আর জি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, বিসি রায় হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন শিশুসদন— কোথাও শিশুদের আপৎকালীন অস্ত্রোপচার হয় না। রোগীদের প্রধানত এনআরএস এবং এসএসকেএমে ‘রেফার’ করা হয়। স্বাস্থ্য দফতর সব জানে। কিন্তু জেনেও তার সমাধান করেননি স্বাস্থ্যকর্তারা।

এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর তো নিজেরাই বেশির ভাগ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পেডিয়াট্রিক সার্জারি করার লোকবল দিতে পারছে না। তা হলে তারা সার্জারি না করে রেফারের জন্য শাস্তি দেবে কোন মুখে?’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘রাতারাতি তো পরিকাঠামো বদলানো যাবে না। সময় লাগবে। আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলির মূল্যায়ন করছি। সব খতিয়ে দেখছি।’’ যা শুনে অন্য এক স্বাস্থ্যকর্তা আবার বলেন, ‘‘এমন লোক দেখানো মূল্যায়ন অতীতেও হয়েছে। কয়েক দিনেই মানুষ সব ভুলে যাবে। মূল্যায়ন, শাস্তি সব থেমে যাবে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেরই খবর, হাওড়ার দু’টি হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ একতাকে অন্যত্র রেফারের আগে স্বাস্থ্য ভবনে নতুন তৈরি হওয়া ‘রেফারাল উইং’-এ ফোন করেছিল, যাতে উপযুক্ত জায়গায় পাঠিয়ে দ্রুত শিশুটির অস্ত্রোপচার করা যায়। কিন্তু অভিযোগ, কেউ ফোন ধরেননি। কারণ, ঘোষণা হলেও সেলের অস্তিত্ব নেই।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের দ্রুত অস্ত্রোপচার করার উদ্দেশ্যেই সপ্তাহ দেড়েক আগে ঢাকঢোল বাজিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২০ শয্যার ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করেন। কিন্তু সেখানে শিশুদের ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি! আরও অভিযোগ, এক দিকে স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় পেডিয়াট্রিক সার্জন নিয়োগ করতে পারছে না। অথচ, একাধিক পোস্ট-ডক্টরেট পেডিয়াট্রিক সার্জনকে পোস্টিং না-দিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে বসিয়ে রেখেছে!

বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই জানান, বেলা চারটের পরে ইমার্জেন্সি কেস এলে এনআরএসে ‘রেফার’ করাটাই অলিখিত দস্তুর। নীলরতনের এক পেডিয়াট্রিক সার্জন বলেন, ‘‘অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়া শিশুকেও মেডিক্যাল রেফার করে লিখে দেয়, ‘আমাদের ইমার্জেন্সি নেই’ বা ‘বেড নেই’! অথচ, সরকারি ভাবে কোথাও বলা নেই যে ওদের ইমার্জেন্সি চলছে না। বেড নেই বলে রেফার করাটা বেআইনি। তা-ও শাস্তি হয় না।’’

মেডিক্যালের পেডিয়াট্রিক সার্জারির চিকিৎসকেরা পাল্টা জানান, তাঁদের শিক্ষক-চিকিৎসক মাত্র দু’জন। পোস্ট-ডক্টরাল শিক্ষানবিশ মাত্র এক জন। আরএমও নেই। পিজিটি ধার করতে হয় জেনারেল সার্জারি থেকে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ীর কথায়, ‘‘এই লোকবলে ২৪ ঘণ্টার ইমার্জেন্সি চালানো যাচ্ছে না।’’

শিশুটির পাঁজরের হাড় ভেঙে ফুসফুসে ঢুকেছিল। পেডিয়াট্রিক সার্জনের অভাব থাকলে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের সার্জনদের দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হল না কেন? ওই বিভাগের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের এই কেসের ব্যাপারে কিছু জানানোই হয়নি। জানালে আমাদের ছেলেরা গিয়ে করে আসত।’’

রাজ্যের একমাত্র ‘রেফারাল’ শিশু হাসপাতাল বিসি রায়ের অধ্যক্ষ মালা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমাদেরও খুব লোকাভাব। সন্ধ্যায় কোনও ইমার্জেন্সি রোগী এলে পরের দিন সকাল দশটার আগে অস্ত্রোপচার হয় না। বাধ্য হয়ে তাই রেফার করতে হয়।’’ চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের এক কর্তাও বলেন, ‘‘নামেই শিশুসদন। কোনও শিশু শল্যচিকিৎসক নেই। গুরুতর কেস এলে এসএসকেএম বা এনআরএসের সার্জনদের অনুরোধ করি, এখানে এসে অস্ত্রোপচারের জন্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা আসতে পারেন না। অতএব ‘রেফার’ করতে হয়।’’

Medical Negligence Private Hospitals Kolkata Medical College মেডিক্যাল কলেজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy