Advertisement
E-Paper

অবহেলার অন্ধকার, দৃষ্টি-সঙ্কটে মনোরোগী

মানসিক হাসপাতালে ভর্তি এক বৃদ্ধার ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছিল শহরের এক নামী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পরে মানসিক হাসপাতালে ফিরেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, চার দিনের মাথায় তাঁকে গলা চোখ নিয়ে আবার মানসিক হাসপাতাল থেকে সেই মেডিক্যাল কলেজেই ফিরতে হল।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫৯
প্রভা চট্টোপাধ্যায়

প্রভা চট্টোপাধ্যায়

মানসিক হাসপাতালে ভর্তি এক বৃদ্ধার ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছিল শহরের এক নামী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পরে মানসিক হাসপাতালে ফিরেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, চার দিনের মাথায় তাঁকে গলা চোখ নিয়ে আবার মানসিক হাসপাতাল থেকে সেই মেডিক্যাল কলেজেই ফিরতে হল।

কেন? কীসের জেরে এমন হল? তা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং পাভলভ মানসিক হাসপাতালের মধ্যে। দু’পক্ষই একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আর তারই হাত ধরে ফের বেআব্রু হয়ে পড়েছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল ছবিটা।

পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি প্রভা চট্টোপাধ্যায়ের দু’চোখেই ছানি পড়েছিল বহু দিন। নানা টালবাহানায় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন দু’চোখেই দৃষ্টি হারান, তখন তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন পাভলভের ডাক্তাররা। সেখানে দিন কয়েকের ব্যবধানে প্রভাদেবীর দু’টি চোখেই অস্ত্রোপচার হয়। ন্যাশনালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের পরেও প্রভাদেবীর চোখের অবস্থা এমন ছিল যে চিকিৎসকেরা তাঁকে দিন কয়েক আলাদা ঘরে রাখার জন্য পাভলভ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। চোখে সামান্য চাপ পড়লেও তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁরা পাভলভের চিকিৎসকদের সতর্ক করেছিলেন বলেও তাঁদের দাবি।

কিন্তু এত কিছুর পরেও অস্ত্রোপচারের চার দিনের মাথায় ফের ন্যাশনালে ফিরতে হয়েছে প্রভাদেবীকে। সোমবার দুপুরে তিনি যখন ন্যাশনালে পৌঁছন, তখন তাঁর দু’টি চোখেই মারাত্মক ক্ষত। একটি চোখ প্রায় গলে বেরিয়ে এসেছে। তা দেখে আঁতকে ওঠেন ন্যাশনালের চক্ষু বিভাগের ডাক্তাররা। কী হয়েছে? প্রশ্ন করে তাঁরা জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারের পরে ২৪ ঘণ্টা প্রভাদেবীকে পাভলভে আলাদা ঘরে রাখা হলেও তার পরে সাধারণ ওয়ার্ডেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে অন্য এক রোগিণী তাঁর চোখে লাথি মারেন। তাতেই ওই অবস্থা।

মঙ্গলবার ফের অস্ত্রোপচার হয় প্রভাদেবীর একটি চোখে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আঘাতের যা মাত্রা, তাতে তিনি কতটা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রভাদেবীকে ন্যাশনালে পাঠানোর সময়ে সোমবার পাভলভ কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, এটা অস্ত্রোপচার পরবর্তী সমস্যা। তাই তাঁরাই যেন এর বিহিত করেন। এখানেই রুখে দাঁড়িয়েছেন ন্যাশনালের ডাক্তাররা। তাঁরা লিখিত ভাবে এর প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রোগী দেখভালে নিজেদের ব্যর্থতার দায় পাভলভ কোনওভাবেই অন্য হাসপাতালের উপরে চাপাতে পারে না। কেন বার বার বলে দেওয়া সত্ত্বেও এক বৃদ্ধা রোগিণীর সামান্য দেখভাল পাভলভের কর্মীরা করতে পারলেন না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।

দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরের কথা পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনেও। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, দু’পক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁরা বিষয়টির নিষ্পত্তি করবেন। পাশাপাশি, কেন পাভলভে এই ধরনের সমস্যা হল, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

পাভলভ সূত্রে খবর, সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয় না বলে যাঁরা হাসপাতালেই থেকে যেতে বাধ্য হন, প্রভাদেবী তাঁদেরই এক জন। কেন তাঁকে হাসপাতালে আলাদা কোনও ঘরে কয়েক দিন রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল না? পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘আমাদের আলাদা ভাবে রাখার সেই ব্যবস্থাই নেই। এ ক্ষেত্রে ন্যাশনালেরই উচিত ছিল ওঁকে ভর্তি রেখে দেওয়া। কেন যে ওরা মানসিক রোগীদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করেন বুঝতে পারি না।’’

অন্য দিকে, ন্যাশনালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা সর্বৈব মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ সব বলা হয়েছে। এই মুহূর্তে বহু মানসিক রোগী আমাদের এখানে ভর্তি আছেন। এটা কোনও কৃতিত্বের বিষয় নয়। চিকিৎসার স্বার্থেই তাঁদের এখানে ভর্তি করা হয়। কোনও রকম বাছবিছারের প্রশ্নই ওঠে না।’’

ন্যাশনালের চক্ষু বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত জানান, তাঁরা যত্ন করে অস্ত্রোপচার করার পরেও রোগিণীর এই হাল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, ‘‘আপাতত দিন কয়েক আমরা ওঁকে ছাড়ব না। ন্যাশনালে আমাদের তত্ত্বাবধানেই উনি থাকবেন। সাধারণত চোখের এই ধরনের অস্ত্রোপচারে এত দিন শয্যা আটকে রাখা হয় না। অস্ত্রোপচারের দিনই (ডে কেয়ার) রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রভাদেবীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তবেই পাভলভে ফেরত পাঠাব। না হলে ওখানকার যা হাল, তাতে আরও বড় কোনও বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।’’

state news medical negligence glucoma surgery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy